সুজাউদ্দীন মুহম্মদ খান

মুর্শিদকুলি খান যখন বাংলার ও উড়িষ্যার সুবাদার নিযুক্ত হন তখন তিনি সুজাউদ্দিন কে নায়েবে নাজিম তথা নায়েব সুবেদার নিয়োগ করেন। মুর্শিদকুলি খানের কন্যা জিন্নাতুন্নেসার সঙ্গে সুজাউদ্দিন খানের বিবাহ হয়। সুজাউদ্দিন ও জিন্নাতুন্নেসার গর্ভে জন্ম হয় সরফরাজ খানের। মুর্শিদকুলির কোন পুত্র সন্তান ছিলনা। তাই তিনি দৌহিত্র সরফরাজ খান কে পুত্রবৎ পালন করেন। মৃত্যুর পূর্বে মুর্শিদকুলি সরফরাজ খান কে তার উত্তরাধিকার মনোনীত করেন এবং সে জন্য তিনি সম্রাটের অনুমতি লাভের চেষ্টা করেন। অপরদিকে সরফরাজ খানের পিতা সুজাউদ্দিনেরও বাংলার মসনদের প্রতি দৃষ্টি ছিল। তিনিও সুবাদার হবার জন্য দিল্লির সম্রাটের নিকট আবেদন করেন এবং এক বিরাট সৈন্যদল নিয়ে মুর্শিদাবাদের দিকে অগ্রসর হন। তিনি যখন মেদিনীপুর পৌঁছান তখন তিনি সম্রাটের ফরমান হাতে পান। এই ফরমান দ্বারা সম্রাট তাকে বাংলা ও উড়িষ্যার সুবাদার নিয়োগ করেন। ফলে একপ্রকার বাধ্য হয়েই সরফরাজ খান পিতার আনুগত্য স্বীকার করেন। ১৭৩০ খ্রিস্টাব্দ সম্রাট সুজাউদ্দিন বাংলা ছাড়াও বিহারের সুবেদার নিযুক্ত হন। সুজাউদ্দিন তখন আলীবর্দী খানকে বিহারের নায়েবে নাজিম নিয়োগ করেন।

সুজাউদ্দীন ছিলেন নিরপেক্ষ ও ন্যায়পরায়ণ শাসক। সামরিক ও বেসামরিক সকল কর্মচারীর প্রতি তিনি ছিলেন দয়ালু ও উদার। শায়েস্তা খানের শাসনামলের দীর্ঘকাল পর তাঁর শাসনামলেই আবার টাকায় আট মণ চাল পাওয়া যেত। শাসনকার্যে অধীনস্থ কর্মকর্তাদের ওপর তিনি অতিমাত্রায় নির্ভর করতেন। এসব তথাকথিত বিশ্বস্ত রাজকর্মচারীগণ নওয়াবের চারিত্রিক দুর্বলতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করতে তৎপর হয়ে ওঠে। হাজী আহমদ, আলম চাঁদ ও জগৎ শেঠ ফতেহ চাঁদের উপর প্রশাসনিক দায়ভার ন্যস্ত হয়। এসব রাজকর্মচারী তাদের দুষ্কর্মের দ্বারা নওয়াবের দুই পুত্র সরফরাজ খান ও তকী খানের(জিন্নাতুন্নেসা নয় অন্য মায়ের সন্তান) পারস্পারিক সম্পর্কে ভাঙন ধরায়। রাজ্যের এই বিশৃঙ্খল অবস্থা রেখেই ১৭৩৯ খ্রিস্টাব্দে সুজাউদ্দীনের মৃত্যু বরণ করেন। বাংলার মসনদে তখন বসেন সরফরাজ খান।

Add a Comment