নবাব মুর্শিদকুলি খান

বিগত সালের BCS Preliminary- তে এখান থেকে প্রশ্ন এসেছে টি।

নবাব মুর্শিদকুলি খান দক্ষিণাত্যের এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলায় তাকে বিক্রি করা হয়। তাকে ক্রয় করেন হাজী শফী ইস্পাহানী। তিনি তাকে পুত্র হিসাবে গ্রহণ করে মুহাম্মদ হাদী নাম দেন ও তাকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষা দেন। হাজী শফী ছিলেন মুঘল সাম্রাজ্যের দীউয়ান। মুহাম্মদ হাদী তার পিতার নিকট রাজস্ব বিষয়ে শিক্ষা লাভ করেন। মুহাম্মদ হাদীর রাজস্ব বিষয়ে দক্ষতার কথা শুনে আওরঙ্গজেব তাকে হায়দরাবাদের দীউয়ান নিযুক্ত করেন।

তার কর্ম দক্ষতায় সম্রাট আওরঙ্গজেব খুশি হয়ে ১৭০০ সালে বাংলা ও পরে বর্ধমান, মেদেনীপুর ও উড়িষ্যার দীউয়ান নিযুক্ত করেন। ১৭০২ সালে সম্রাট তাকে ‘মুর্শিদকুলি খান’ উপাধি দেন। ১৭০৭ খ্রিষ্টাব্দে আওরঙ্গজেব মৃত্যু বরণ করেন। আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর দিল্লির সিংহাসনে বসেন তার দ্বিতীয় পুত্র ‘প্রথম বাহাদুর শাহ(শাহজাদা মুয়াজ্জম)’। বাহাদুর শাহের মৃত্যু হলে সিংহসন নিয়ে যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে বাহাদুর শাহের জ্যেষ্ঠপুত্র আজিমুদ্দীন আজিমুশশান নিহত হয়। সিংহাসন লাভ করে বাহাদুর শাহের অপর পুত্র জাহানদার শাহ। আজিমুদ্দীন মৃত্যুর পূর্বে তার শিশু পুত্র ফর‌রুখসিয়ারকে বাংলার সুবেদার নিযুক্ত করেন। মুর্শিদকুলি খান ফর‌রুখসিয়ারের নায়েব নিযুক্ত হয়। এরপর বাংলার সুবেদার হন মীরজুমলা। মীরজুমলারও নায়েব ছিলেন মুর্শিদকুলি খান। দিল্লির সিংহাসন নিয়ে দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও দুর্বল শাসনের মধ্যেই ১৭১৭ সালে মুর্শিদকুলি খান বাংলার সুবাদার নিযুক্ত হন।

মুর্শিদকুলি খান রাজস্ব খাতের আমূল সংস্কার করেন। তার সংস্কারের ফলে রাজস্বের উন্নতি ঘটে। রাজস্ব আদায়কারী ও প্রদানকারী উভয়ই শান্তিতে ছিল। অপরদিকে দিল্লির দুর্বল শাসনের প্রতি তিনি তেমন অধীনতা দেখান নি। তিনি বাৎসরিক ১ কোটি ৩ লক্ষ টাকা সম্রাটকে পাঠাতেন, আর প্রায় স্বাধীনভাবেই বাংলা শাসন করতেন। তার সময় থেকেই বাংলায় নবাবী শাসন শুরু হয়। (৩৭তম বিসিএস প্রিলিমিনারি)

মুর্শিদকুলি খান ১৭২৭ খ্রিষ্টাব্দের ৩০শে জুন মৃত্যু বরণ করেন। মৃত্যুর সময় তার কোন পুত্র সন্তান না থাকায় ক্ষমতায় বসেন তার জামাতা সুজাউদ্দীন। আর এভাবেই বাংলায় সুবাদারি বংশগত হয়ে যায়, প্রতিষ্ঠিত হয় নবাবী শাসন আমল। আর এভাবেই বাংলার প্রথম স্বাধীন নাবাবের তকমা পান মুর্শিদকুলি খান।

ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদ
১৭০০ মুর্শিদকুলি খান বাংলার দীউয়ান নিযুক্ত হন। সে সময় বাহাদুর শাহের জ্যেষ্ঠ পুত্র আজিমুদ্দীন আজিমুশশান বাংলার সুবাদার ছিলেন। আর দিল্লিতে ক্ষমতায় ছিলেন সম্রাট আওরঙ্গজেব নিজে। সুবাদার আজিমুদ্দীন ব্যক্তিগত ব্যবসার মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করতেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত বিলাস প্রিয় ব্যক্তি। অপরদিকে তার দীউয়ান মুর্শিদকুলি ছিলেন সৎ-নির্ভিক ও কর্মঠ মানুষ। তাই স্বভাবতই তাদের মাঝে দ্বন্দ্ব দেখা দেয় এবং সুবাদার মুর্শিদকুলি খানের উপর রুষ্ট হন। এবং তাকে অপদস্ত করার চেষ্টায় থাকেন। এক সময় পেয়েও যান যে মওকা।
১৭০২ সালের ঘটনা। ঢাকায় তখন একদল অশ্বারোহী সৈনিক ছিলেন। সে সৈনিকদের বেতন বাকি ছিল। সুবাদার আজিমুদ্দিনের অনুচররা তাদেরকে মুর্শিদকুলি খানের বিরুদ্ধে প্ররোচিত করে। একদিন দীউয়ান সুবাদারের দরবারের দিকে আসতেছিলেন। সে সময় উক্ত সৈনিকরা তার পথ রোধ করে তাদের বকেয়া বেতনের দাবি করে। দীউয়ান তখন তার রক্ষী বাহিনীর সহায়তায় পার পেয়ে যান। তখন তিনি সুবাদারের দরবারে পৌঁছে তাকে এ ঘটনার জন্য দোষারোপ করেন। তারপর তিনি ঘটনাটি সম্রাট আওরঙ্গজেবকে জানিয়ে পত্র লেখেন। সম্রাট আওরঙ্গজেব এ কাজের জন্য আজিমুদ্দিন কে ভর্ৎসনা করে লেখেন যে, যদি মুর্শিদকুলির সামান্য ক্ষতিও করা হয়, তাহলে আজিমুদ্দিনকে এর জন্য শাস্তি পেতে হবে। সম্রাট মুর্শিদকুলিকে জানান যে সুবাদার ও অন্যান্য কর্মচারীরা তখন থেকে আরও ভালো ব্যবহার করবেন। কিন্তু তারপরও মুর্শিদকুলি খান স্বীয় নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে তার বাসস্থান ও দীউয়ান দপ্তর মকসুদাবাদে স্থানান্তর করেন। এবং সম্রাটের অনুমতিক্রমে তিনি মকসুদাবাদের নাম পরিবর্তন করে মুর্শিদাবাদ রাখেন। এরপর ১৭১৭ সালে মুর্শিদকুলি খান বাংলার সুবাদার হলে ঢাকা থেকে তিনি স্থায়ীভাবে রাজধানী স্থানান্তর করে মুর্শিদাবাদে নিয়ে যান।

Add a Comment