আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে শরণার্থী

সংঘর্ষ এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার প্রেক্ষাপটে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে অগণিত লোক শরণার্থী হয়েছিলেন। যুদ্ধশেষে একমাত্র ইউরোপেই ৪০ মিলিয়নেরও(চার কোটি) অধিক লোক শরণার্থী ছিল। আজও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রায় সাত কোটি মানুষ নিজের দেশছাড়া হয়ে আশ্রয় খুঁজছে অন্য দেশে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শরণার্থী: প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানরা বেলজিয়াম আক্রমণ করলে প্রায় আড়াই লাখ বেলজিয়াম অধিবাসী গৃহহারা হয়। আবার সোভিয়েত জার্মান আক্রমণ করলে প্রচুর জার্মান, বিশেষত ইহুদিরা দেশত্যাগ করে। শুধু সোভিয়েতে আশ্রিত ছিল বিভিন্ন দেশের প্রায় ৬০ লাখ লোক । প্রথম বিশ্বযুদ্ধের বিভিন্ন দেশে আশ্রিত সর্বহারা শরণার্থীর সংখ্যা ছিল প্রায় এক কোটি।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শরণার্থী: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিভিন্ন দেশে আশ্রিত সোভিয়েত ইউনিয়ন, পোল্যান্ড, যুগোস্লাভাকিয়া, জার্মান শরণার্থীর সংখ্যা ছিল প্রায় ছয় কোটি। এসব শরণার্থীর পুনর্বাসিত করতে লেগেছিল পরবর্তী প্রায় ১০ বছর। জীবন বাঁচাতে জার্মানি ও অস্ট্রিয়া থেকে অসংখ্য ইহুদিরা বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশে আশ্রয় নেয়।

ফিলিস্তিন: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা ইহুদিরা আসতে থাকে ফিলিস্তিনে। দাবি করে তাদের জন্য স্বতন্ত্র দেশ ইসরায়েলের। ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে স্থানীয় ফিলিস্তিনিদের ওপর বিভিন্ন সময় আক্রমণ করে ইহুদিরা। ১৯৪৮-এ ইহুদিদের সৃষ্ট দাঙ্গায় কয়েক লাখ ফিলিস্তিনি দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়। এর পর বিভিন্ন সময়ে ফিলিস্তিন, মিসর ও সৌদি আরবের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়লাভের সঙ্গে ফিলিস্তিনি মুসলিমদের ওপর অত্যাচার যেমন বাড়তে থাকে, তেমনি চলতে থাকে তাদের ভূমি দখল। যার ফলে বাড়তে থাকে বাস্তুহারা ফিলিস্তিনির সংখ্যা। বর্তমানে সিরিয়া, মিসর, লেবাননসহ বিভিন্ন আরব দেশে আশ্রয় পাওয়া ফিলিস্তিনি শরণার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ।

১৯৭১-এ বাঙালি শরণার্থী: ’৪৭-এ দেশভাগের ফলে ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ হয় ভারতবর্ষ। প্রায় দেড় হাজার মাইলের দূরত্ব থাকলেও বর্তমান বাংলাদেশ চলে যায় পাকিস্তানের সঙ্গে। ২৪ বছর ধরে পাকিস্তান শাসনের ইতিহাস বাংলাদেশের জন্য শোষণের ইতিহাস। ’৭০-এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও ক্ষমতা ছাড়েনি শাসকরা। ’৭১-এর মার্চে বর্বর পাকিস্তানি সেনারা এ দেশে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। পাকিস্তানিদের অত্যাচার থেকে রেহাই পেতে প্রাণভয়ে ভারতে পাড়ি জমায় প্রায় এক কোটি বাঙালি। নয় মাস বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে থেকে যুদ্ধ শেষে অনেকে দেশে ফিরে আসে, অনেকে ভারতে নতুন জীবন শুরু করে উদ্বাস্তু হিসেবে।

ইরাকি শরণার্থী: সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রম ও ক্ষতিকর পারমাণবিক অস্ত্রের প্রয়োগ ঠেকানোর অজুহাতে ২০০৩-এ ইরাক আক্রমণ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। অত্যাধুনিক অস্ত্র আর বোমার আঘাতে ধ্বংস হয় শহরকে শহর, প্রচুর সাধারণ মানুষ প্রাণ হারায় মার্কিনিদের আক্রমণে। প্রায় আট বছর ধরে ধ্বংসযজ্ঞ চলার পর ২০১১ সালে ইরাক থেকে সেনা প্রত্যাহার করে যুক্তরাষ্ট্র। যুদ্ধের শুরু থেকেই দেশ ছাড়ে প্রচুর ইরাকি। ২০০৩ থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় ৪৭ লাখ মানুষ ইরাক ছেড়ে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশে শরণার্থী হিসেবে পাড়ি জমিয়েছে। ২০ লাখের বেশি মানুষ তাদের ঘর, কর্মক্ষেত্র সব হারিয়ে নিজ দেশেই বর্তমানে শরণার্থীর মতো।

সিরিয়ান শরণার্থী: ২০১১ সালে আরব বিশ্বের দেশে দেশে বিপ্লব ছড়িয়ে পড়লে তার রেশ আসে সিরিয়াতেও। সিরিয়ার ক্ষমতায় থাকা বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে জনতা। আন্দোলন ঠেকাতে সেনাবাহিনী নামায় আসাদ সরকার। যার ফলে বহু মানুষ হতাহত হয়। এর পর বিদ্রোহী কুর্দিশ বাহিনী ও জিহাদি সালাফি বাহিনী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলে গৃহযুদ্ধে পতিত হয় সিরিয়া। প্রতিদিন প্রাণ হারাতে থাকে হাজারো মানুষ, যার ফলে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয় সিরিয়ানরা। গত ছয় বছরে ইউরোপের বিভিন্ন দেশসহ তুরস্ক ও লেবাননে শরণার্থী হিসেবে রয়েছে ৫০ লক্ষাধিক সিরিয়ান নাগরিক।

পেপার ক্লিপিং

ইউরোপের লজ্জা ও আত্মশুদ্ধি!***


👉 Read More...👇

Add a Comment