ইউনিয়ন পরিষদ

গঠন
গড়ে ১০-১৫টি গ্রাম নিয়ে একটি ইউনিয়ন পরিষদ গঠিত। এর একজন নির্বাচিত চেয়ারম্যান, নয়জন নির্বাচিত সাধারণ সদস্য ও তিনজন নির্বাচিত মহিলা সদস্য (সংরক্ষিত আসনে) রয়েছে। একটি ইউনিয়ন ৯টি ওয়ার্ডে বিভক্ত। প্রত্যেক ওয়ার্ড থেকে একজন করে ৯টি ওয়ার্ড থেকে ৯ জন সাধারণ সদস্য জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হন। মহিলা সদস্যগণ প্রতি ৩ ওয়ার্ডে ১ জন-এই ভিত্তিতে পুরুষ ও মহিলা সকলের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হন। ইউনিয়ন পরিষদে একজন বেতনভুক্ত সচিব থাকে। ইউনিয়ন পরিষদের কার্যকাল ৫ বছর। তবে মেয়াদ পূর্তির পূর্বেও দুইতৃতীয়াংশ সদস্যের অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে চেয়ারম্যান ও অন্য যেকোনো সদস্যকে অপসারণ করা যায়। বাংলাদেশে সর্বমোট ৪,৪৯৮টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে।

কার্যাবলি
ইউনিয়ন পরিষদ গ্রামীণ জীবনে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গ্রামীণ সমস্যা দূরীকরণ, গণসচেতনতা বৃদ্ধি ও দায়িত্বশীল নেতৃত্ব তৈরি করার লক্ষ্যে ইউনিয়ন পরিষদ অনেক কাজ করে। নিম্নে সেগুলো আলোচনা করা হলো।

১. ইউনিয়ন পরিষদ রাস্তাঘাট, সেতু, কালভার্ট নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ এবং রাস্তার ধারে বৃক্ষরোপণ করে।

২. কৃষি উন্নয়নের জন্য ইউনিয়ন পরিষদ উন্নতমানের বীজ, সার ও কীটনাশক সরবরাহ ও অধিক খাদ্য উৎপাদনে উৎসাহ প্রদান করে।

৩. মৎস্য চাষ, পশুপালন ও পশুসম্পদ উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

৪. জনস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য ইউনিয়ন পরিষদ পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যবস্থা করে। ময়লা আবর্জনা ফেলা, প্রাণী জবাই, গবাদি পশুর গোসল, ময়লা কাপড়-চোপড় ধোয়া ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে।

৫. প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য দাতব্য হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করে।

৬. ইউনিয়ন পরিষদ জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে গণসচেতনতা তৈরি করে এবং জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ অল্প খরচে সহজে পাওয়ার ব্যবস্থা করে।

৭. শিক্ষা বিস্তারের ও নিরক্ষরতা দূরীকরণের জন্য ইউনিয়ন পরিষদ দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান, বয়স্ক শিক্ষাদান কেন্দ্র ও লাইব্রেরি স্থাপন ইত্যাদি করে।

৮. জনগণের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য কুটির শিল্প স্থাপন ও সমবায় আন্দোলন পরিচালনা করে এবং এ ব্যাপারে জনগণকে উৎসাহিত করে।

৯. ইউনিয়ন পরিষদ নিজ অফিসের ব্যয় নির্বাহের জন্য বিভিন্ন ধরনের কর ধার্য় ও আদায় করে এবং বিভিন্ন ধরনের রাজস্ব সংগ্রহে সরকারকে সহায়তা করে।

১০. ইউনিয়ন পরিষদ জন্ম-মৃত্যু ও বিবাহ রেজিস্টার রক্ষণাবেক্ষণ করে।

১১. বন্যা ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় ইউনিয়ন পরিষদ দুঃস্থদের সাহায়্য ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে।

১২. ইউনিয়ন পরিষদ গ্রামীণ জীবনের বিভিন্ন বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করে। সর্বোচ্চ পাঁচ (০৫) হাজার টাকা দাবির দেওয়ানি ও ছোটখাটো ফৌজদারি মামলার বিচার ইউনিয়ন পরিষদ করতে পারে।

আয়ের উৎস
ইউনিয়ন পরিষদের আয়ের উৎস :
ক. বাড়িঘর, দালান-কোঠার উপর কর
খ. গ্রাম পুলিশ রেট
গ. জন্ম, বিবাহ ও ভোজের উপর ফি
ঘ. সিনেমা, থিয়েটার, যাত্রা, সার্কাস, মেলা ইত্যাদির উপর কর
ঙ. যানবাহনের উপর কর
চ. লাইসেন্স, পারমিট ফি
ছ. জনস্বার্থে বিশেষ কল্যাণকর কাজের জন্য ফি
জ. হাট বাজার, জলমহাল, ফেরিঘাট ইজারা ও টোল সংগ্রহ
ঝ. সরকার কর্তৃক প্রদত্ত বরাদ্দ/অনুদান ইত্যাদি।


👉 Read More...👇