নিউক্লীয় বিক্রিয়ক/চুল্লি
|শৃঙ্খলা বিক্রিয়া(Chain Reaction): যে স্ব-বহ(Self Sustain) বিক্রিয়া একবার শুরু হলে তা চলমান রাখার জন্য বাহির থেকে অতিরিক্ত শক্তির যোগান দিতে হয় না তাকে শৃঙ্খলা বিক্রিয়া বলে। ইউরেনিয়ামের নিউক্লীয় ফিশন একটি শৃঙ্খলা বিক্রিয়া। এখানে একটি মুক্ত নিউট্রন দিয়ে একটি ইউরেনিয়াম পরমানুকে আঘাত করলে তা শক্তি উৎপাদনের সাথে সাথে আরও এক বা একাধিক মুক্ত নিউট্রনের সৃষ্টি করে। যা আবার এক বা একাধিক ইউরেনিয়াম পরমানুকে আঘাত করে শক্তি ও নিউট্রন সৃষ্টি করে।
নিউক্লীয় বিক্রিয়ক/চুল্লি(Nuclear Reactor): পারমানবিক চুল্লিতে উপর্যুক্ত পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।
এই শৃঙ্খলা বিক্রিয়া নিয়ন্ত্রনের জন্য পারমাণবিক চুল্লি বা নিউক্রিয়ার রিয়েক্টর ব্যবহার করা হয়। পারমানুবিক চুল্লিতে থাকে একটি খুব দৃঢ় ও টেকসই ইস্পাতের পাত্র। যা প্রবল চাপে ও ফাটবে না। এই পাত্রের ভিতর থেকে গ্রাফাইটের ইট দিয়ে তৈরী মূল বস্তু বা মজ্জা(Core)। এই গ্রাফাইটের মজ্জার ভেতর খাড়াভাবে কতগুলো চ্যানেল বা ফাঁকা জায়গা থাকে। এই ফাঁকাজায়গায় ইউরেনিয়ামের দণ্ড বসানো হয়। তার ফাঁকে ফাঁকে বোরন বা ক্যাডমিয়ামের দণ্ড ব্যবহার করা হয়। বোরন বা ক্যাডমিয়ামের দণ্ডগুলো উপর নিচে ওঠানামা করতে পারে ও নিউট্রন শোষণ করে নিতে পারে। তাই এগুলো উপর নিচে ওঠানামা করানোর মাধ্যমে, নিউট্রন শোষণ করে বিক্রিয়ার গতি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এজন্য এগুলোকে মন্থরক বলে।
চুল্লিতে দু’ধরনের পরমাণুর সংমিশ্রণ ব্যবহার করা হয়। এদের মধ্যে ইউরেনিয়াম-২৩৫ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইউরেনিয়াম-২৩৫ পরমাণু স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভেঙ্গে শক্তি(প্রতিটিতে ২০০ মেগা ইলেকট্রন ভোল্ট) ও দ্রুত গতি সম্পন্ন কণা নিউট্রন সৃষ্টি করে। এভাবে মুক্ত নিউট্রন তার পার্শবর্তী কোন ইউরেনিয়াম-২৩৫ পরমাণুকে আঘাত করে ও বিক্রিয়া চলতে থাকে।
কার্যপদ্ধতিঃ উপর্যুক্ত বিক্রিয়ায় উৎপন্ন তাপশক্তি স্টিম জেনারেরটরের পানি কে বাষ্পে পরিণত করতে ব্যবহার করা হয়। তা থেকে যে বাষ্প উৎপন্ন হয় সে বাষ্প দ্রুত বেগে ধাবমান হয়ে টারবাইন ঘোরাতে ব্যবহার করা হয়। টারবাইন যুক্ত থাকে একটি জেনারেরটরের সাথে যা বিদ্যুৎ উতপন্ন করে সংযোগ লাইনে প্রদান করে। টারবাইন ঘুরিয়ে যে বাষ্প আসে তাকে শীতলীকারকের মধ্যদিয়ে চালিত করে আবার পানিতে পরিণত করা হয়। উক্ত পানিকে আবার স্টিম জেনারেরটরের মধ্য দিয়ে চালনা করা হয়। এই প্রক্রিয়া চলতে থাকে ও বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়।