নিউক্লিয় বিক্রিয়া
|নিউক্লিয় ফিশনঃ এটি তাপ উৎপাদী রাসায়নিক বিক্রিয়া, যে বিক্রিয়ায় অধিক ভরের নিউক্লিয়াস বিশিষ্ট একটি পরমাণুর বিভাজনে, ক্ষুদ্র ভর বিশিষ্ট নিউক্লিয়াসের দুটি(বা ততোধিক) পরমাণুর সৃষ্টি করে।
এ বিক্রিয়ায় মুক্ত নিউট্রন, গামা রশ্নি ও বিপুল পরিমাণ শক্তি নির্গত হয়। এ প্রক্রিয়ায় একটি পরমাণু ভেঙ্গে যায় তথা ক্ষয়ে যায় বলে এ বিক্রিয়ার অপর নাম তেজস্ক্রিয় ক্ষয় বিক্রিয়া।
যেমন ২৩৫-ভরের একটি ইউরেনিয়াম92U235 পরমানুকে একটি মুক্ত নিউট্রন দিয়ে আঘাত করলে তা থেকে তিন টি মুক্ত নিউট্রন, গামা রশ্নি, শক্তি(২০০MeV) ও সমভর বিশিষ্ট যেকোন কম্বিনেশনের দুটি ভিন্ন পরমাণুর সৃষ্টি হয়। এখানে [92U236]* একটি যৌগিক নিউক্লিয়াস, যার স্থায়িত্বকাল অত্যন্ত অল্প, প্রায় 10-12Sec. উদাহরণ হিসাবে এখানে ৯২-ভরের ক্রিপটন(Kr)ও ১৪১-ভর বিশিষ্ট বারিয়াম(Ba) পরমাণুর সৃষ্টি দেখানো হয়েছে। নিউক্লিয় চুল্লিতে ইউরেনিয়ামের শৃঙ্খলা বিক্রিয়া(Chain Reaction) ব্যবহার বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।
নিউক্লিয় ফিউশনঃ নিউক্লিয় ফিউশন নিউক্লিয় ফিশনের বিপরীত প্রক্রিয়া। অর্থাৎ যে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় ক্ষুদ্র ভর বিশিষ্ট দুটি নিউক্লিয়াস একত্রে অধিক ভরের একটি নিউক্লিয়াসে পরিণত হয় ও বিপুল পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন করে তাকে নিউক্লিয় ফিউশন বলে। সূর্যে এই বিক্রিয়া(হাইড্রোজেন পরমাণু মিলে হিলিয়াম পরমাণুর সৃষ্টি করে) ঘটছে বলে আমরা সুর্য থেকে নিরবিচ্ছিন্ন শক্তি পাই।
নিউক্লিয় ফিউশন বিক্রিয়াকে নিম্নলিখিত সমীকরণ দ্বারা নির্দেশ করা যায়-
1H1 + 0n1→ 1H2
এখানে একটি প্রোটন একটি নিউট্রনকে গ্রাস করে তৈরি করেছে একটি ডিউটেরন(1H2 ) গ্রাসের সময় 0.00239amu হারিয়ে যাচ্ছে এবং ২.২৩ MeV শক্তি আবির্ভূত হচ্ছে। ডিউটেরনের গতিশক্তি এবং গামা রশ্নি নিঃসরণের ফলে এ শক্তি পাওয়া যায়। সূর্যের ভেতর প্রোটনের গড় গতিশক্তি মাত্র 194×10-4MeV এবং এটুকু শক্তি সরবরাহের জন্য সূর্য ফিউশনের মাধ্যমে প্রতি সেকেন্ডে 4×106 টন ভর হারায়।
তুলনাঃ
১. পারমাণবিক বোমায় ফিশন বিক্রিয়া ঘটানো হয়। হাইড্রোজেন বোমায় ফিশন ও ফিউশন উভয়ই ব্যবহার করা হয়।
২. ফিশন বোমায় গড়পড়তা ১ কিলোটনের মতো বিস্ফোরক শক্তি পাওয়া যায়। অপর দিকে ফিউশন বোমার শক্তি শত শত কিলোটন হতে পারে।