শের শাহ সুরি

ছিলেন মধ্যযুগীয় দিল্লির একজন শক্তিশালী আফগান (পাশতুন) বিজয়ী। একজন সাধারণ সেনাকর্মচারী হয়ে নিজের কর্মজীবন শুরু করে পরবর্তীকালে তিনি মুঘল সম্রাট বাবরের সেনাবাহিনীর সেনানায়কের পদে উত্তীর্ণ হন। শেষপর্যন্ত তাকে বিহারের শাসনকর্তা নিযুক্ত করা হয়। তিনি মুঘল সাম্রাজ্যের কেউ নন। তার প্রতিষ্ঠিত সাম্রাজ্যের নাম সুরি সাম্রাজ্য। ১৫৩৭ সালে নতুন মুঘল সম্রাট হুমায়ুন যখন অন্যত্র অভিযানে ব্যস্ত ছিলেন, সেই সময় শের শাহ সুরি বাংলা জয় করে সুরি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন এবং নিজেকে নতুন সম্রাট ঘোষণা করেন।

শের শাহ সুরি কেবলমাত্র একজন মেধাবী রণকৌশলবিদই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন দক্ষ প্রশাসক ও যোগ্য সেনানায়ক। তার সাম্রাজ্য পুনর্গঠনের মধ্যেই পরবর্তীকালের (বিশেষত হুমায়ুন-পুত্র আকবরের) মুঘল সাম্রাজ্যের মূলভিত্তিটি নিহিত ছিল। ১৫৪০ থেকে ১৫৪৫ সালের মধ্যবর্তী সময়ে তার পাঁচ বছরের স্বল্পকালীন রাজত্বে তিনি নাগরিক ও সামরিক প্রশাসনের এক নতুন ধারার সূচনা ঘটিয়েছিলেন। তিনি প্রথম রুপিয়া নামক মুদ্রার প্রচলন করেন, যা বিংশ শতাব্দী অবধি চালু ছিল। তিনি মোহর নামে ১৬৯ গ্রেইন ওজনের স্বর্ণমুদ্রা ও দাম নামে তাম্রমুদ্রাও চালু করেন। তাছাড়া তিনি ডাক ব্যবস্থারও আমূল সংস্কার করেন।

গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড (সড়ক-এ-আজম) শের শাহ সুরির অমর কীর্তি। বিগত চার শতাব্দী ধরে এই সড়ক “বিশ্বে অদ্বিতীয় এক জীবননদীর মতো” দাঁড়িয়ে রয়েছে। আজও ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্রে এই সড়ক অন্যতম প্রধান রাস্তা। এর ভারতীয় অংশটি বর্তমানে স্বর্ণ চতুর্ভূজ প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

১৫৪৫ সালে চান্দেল রাজপুতদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় কালিঞ্জর দুর্গে বারুদের বিস্ফোরণে শের শাহ সুরির মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর পর তার পুত্র জালাল খান ইসলাম শাহ সুরি নাম গ্রহণ করে সুরি সাম্রাজ্যের সিংহাসনে বসেন। তার মৃত্যুর পর হুমায়ুনের নেতৃত্বে ভারতে মুঘল সাম্রাজ্য পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়।

Add a Comment