বাবর

মির্জা জহিরউদ্দিন মুহাম্মদ বাবর সাধারণত বাবর বা বাবুর নামেই বেশি পরিচিত (ফেব্রুয়ারি ১৪, ১৪৮৩ – ডিসেম্বর ২৬, ১৫৩০)। বাবর ছিলেন ‘মঙ্গলীয়’ যা ফার্সীতে ‘মুঘল’। তিনি মধ্য এশিয়ার তথা আধুনিক উজবেকিস্তানের ফরগনা প্রদেশের মুসলমান সম্রাট ছিলেন। তিনি ভারত উপমহাদেশে মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট। তিনি পিতার দিক থেকে তৈমুর লঙ্গ এবং মাতার দিক থেকে চেঙ্গিস খানের বংশধর ছিলেন। তিনি পানিপথের প্রথম যুদ্ধে দিল্লীর লোদি রাজবংশের সুলতান ইবরাহিম লোদিকে পরাজিত করে মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। তার মৃত্যুর পর তার পুত্র মির্জা হুমায়ুন সিংহাসনে আরোহণ করেন। পানি পথের যুদ্ধে তিনিই প্রথম কামানের ব্যবহার করেন। তার প্রখর রণকৌশলের কাছে হার মানে ইবরাহিম লোদি।

বাবরের মাতৃভাষা ছিল চাঘাতাই যা তার কাছে তুর্কি ভাষা নামে পরিচিত ছিল। এছাড়া তিমুরীয় বিত্তবানদের প্রধান ভাষা পার্সিও তার দখল ছিল। তিনি চাঘাতাই ভাষাতে তার আত্মজীবনী “বাবরনামা” লিখেছেন, যার ভাষা, বাক্য গঠন, শব্দ মূলত পারস্য ভাষার অনুসারী।

১৪৯৪ সালে মাত্র এগার/বার বছর বয়সে বাবর প্রথম ক্ষমতা লাভ করেন, তিনি ফরগানার সিংহাসনে আরোহণ করেন । তার চাচা অনবরত তাকে সিংহাসন চ্যুত করার চেষ্টা করেছিলেন। এছাড়া নিকট আত্মীয়ের মধ্যেও তার অনেক শত্রু ছিল। ১৪৯৭ সালে বাবর সমরকন্দের উজবেক শহরে আক্রমণ চালান এবং ৭ মাস পরে শহর দখল করতে সমর্থ হন। বাবর যখন উজবেকে, তখন ফরগানায় কিছু বিদ্রোহ ঘটে। ফরগানা পূনরুদ্ধারের জন্য উজবেক থেকে অগ্রসর হলে তার বাহিনীর লোকজন তাকে ফেলে চলে যায়, ফলে তাকে উজবেক ও ফরগানা উভয় রাজ্যই হারাতে হয়।

পরের তিন বছর বাবর শক্তি সঞ্চয় করেন। ১৫০১ সালে বাবর আবার সমরকন্দের দখল নিতে প্রস্তুতি নেন, দখন নিয়েও নেন কিন্তু- বাবরের পরাক্রমশালী প্রতিপক্ষ, উজবেকিস্তানের বিভিন্ন জাতি-উপজাতিদের নেতা মোহাম্মদ শেবানী খান তা আবার কেড়ে নেয়। শেবানি খানের সাথে তার বনের বিয়ে দিয়ে বাবর কোনরকমে তার অবশিষ্ট সৈন্য নিয়ে ফিরে আসতে সমর্থ হন। ফিরে এসে আবার সে ফরগনা উদ্ধারের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এরপর সকল আশা ত্যাগ করে তিনি তাসখন্দে কিছুদিন মানবেতর জীবন যাপন করেন।

কাবুল অভিযান
এ সময়ে কাবুল শাসন করত বাবরের চাচা দ্বিতীয় উলুঘ বেগ। উলুঘ বেগ মারা যাবার সময় তার একটি শিশু বাচ্চাকে উত্তরাধীকার করে যান। ফলে কাবুলের সিংহাসন নিয়ে অন্তর্ঘাত দেখা দেয়। এই সুযোগে বাবর ১৫০৪ সালে কাবুল দখল করে নেন। ১৫১৩ সালের দিকে বাবর আবার সমরকন্দ ও বোখারা দখলের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরের বছর কাবুলে ফিরে আসেন এবং ১৫২৬ সাল পর্যন্ত শাসন করেন।

ভারত অভিযান
সমরকন্দ পরাজয়ের পর বাবর ভারত জয়ের প্রত্যাশা করেন। এ সময় উত্তর ভারত শাসন করত লোদি সাম্রাজ্যের ইব্রাহিম লোদি। খুড়িয়ে চলা লোদি সাম্রাজ্য অনেক দল-উপদলে বিভক্ত ছিল। পাঞ্জাবের গভর্নর দৌলত খান লোদি ও ইব্রাহিম লোদির চাচা আলা উদদিন, বাবর কে ভারত আক্রমণের আহ্বান করেন। ফলে বাবর প্রায় বিনা বাধায় পাঞ্জাব দখল করে নেন। এর পর ১৫২৬ পানিপথের প্রথম যুদ্ধে ইব্রাহিম লোদি কে পরাজিত করে ভারতে মুঘল সাম্রাজ্যের সূচনা করেন। ১৫২৭ সালে রাজপুত রানাকে খানয়ার যুদ্ধে পরাজিত করে বাবর ভারতে মুঘল সাম্রাজ্যের ভিত প্রতিষ্ঠা করেন।

১৫৩০ সালে বাবর মারা গেলে তার পুত্র মির্জা হুমায়ুন ক্ষমতায় বসেন।

বাবরি মসজিদ
মির বাকি ছিলেন বাবরের একজন সেনাপতি। তার আদেশে অযোধ্যা একটি মসজিদ নির্মান করা হয়। এই মসজিদটি ইতিহাসে বাবরি মসজিদ নামে পরিচিত। ২০০৩ সালে ভারতের আদালতের এক আদেশে এখানে খনন কাজ শুরু করা হয়। খনন কাজের রিপোর্ট জমা দেওয়া হয় এলাহবাদ হাইকোর্টে। রিপোর্টে বলা হয় যে এখানে খ্রিষ্টপূর্ব প্রথম ও দ্বিতীয় শতকের নিদর্শন আছে। এছাড়া সেখানে আছে একাদশ ও দ্বাদশ শতকের একটি স্থাপনা যা মন্দির সদৃশ্য। ২০১৯ সালে সুপ্রিম কোর্ট তার রায়/পর্যবেক্ষণে বলে যে এমন কোন তথ্য-উপাত্ত নেই যা প্রমাণ করে যে মন্দির ভেঙ্গে মন্দির নির্মাণ করা হয়।
বাবরি মসজিদ সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ুন-

Add a Comment