হুন্ডি কী বা হুন্ডি কাকে বলে?
|কৌশলগতভাবে, হুন্ডি(Hundi) হলো এমন একটি লিখিত শর্তহীন আদেশ যা এক ব্যক্তির নির্দেশ অনুযায়ী অন্য এক ব্যক্তি লিপিবদ্ধ করেন এবং নির্দেশনামায় উল্লেখিত ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করা হয়। হুন্ডি একস্থান থেকে অন্যস্থানে অর্থ প্রেরণের একটি ব্যক্তিগত পর্যায়ের কৌশল, যা মুগল আমলে চালু হয়েছে এবং আজও প্রচলিত আছে।
একটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি খোলাসা করা যায়। ধরা যাক রহিম আর করিম দুই ভাই। রহিম থাকে সৌদি আরবে, করিম থাকে বাংলাদেশে। রহিম -করিমের পাশের বাড়ির সালাম সেও সৌদিতে থাকে। তো সালাম কিছু টাকা বাংলাদেশে তার পরিবারের কাছে পাঠাতে চায়। সে ব্যাংকে গেল ব্যাংকে গিয়ে শুনলো যে সে যদি এক লক্ষ টাকা পাঠাতে চায় তবে সৌদির ব্যাংক, বাংলাদেশের ব্যাংক ও শুল্ক সবসহ তার খরচ হবে বিশ হাজার টাকা। অর্থাৎ সালামকে দিতে হবে এক লক্ষ বিশ হাজার টাকা আর বাড়িতে পাবে এক লক্ষ টাকা।
তাই সালাম টাকা না পাঠিয়ে বাসায় ফেরত আসে। ঘটনা শুনে সৌদিতে থাকা রহিম তাকে প্রস্তাব দেয় যে সালাম যদি তাকে এক লক্ষ পাঁচ হাজার দেয়, তো রহিম সালামের বাড়িতে এক লক্ষ টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করবে। সালাম চিন্তা করে দেখলো এতে সে ১৫ হাজার টাকা বেঁচে যায়। সালাম তাই রহিমকেই এক লক্ষ পাঁচ হাজার টাকা দেয়। রহিম বাংলাদেশে তার ভাই করিমকে ফোন দিয়ে সালামের বাড়িতে এক লক্ষ টাকা পৌঁছে দিতে বলল।
এতে রহিম করিমের লাভ হল পাঁচ হাজার টাকা সালামেরও পনেরো হাজার টাকা বেঁচে গেল। এই হল হুন্ডি ব্যবস্থা। ব্যবসায়ীরা হুন্ডির মাধ্যমে টাকা লেন্দেন করে যাতে আমদানি খরচ কম হয়। ফলে লাভ ও বেশি করে করতে পারে।
হুন্ডি ব্যবস্থায় সরকার অনেক টাকার শুল্ক থেকে বঞ্চিত হয়। শুল্ক ফাঁকির কারনে উন্নয়ন ব্যহত হয়। তাছাড়া- সালাম না হয় রহিম করিমের প্রতিবেশী ছিল। সবাই তো আর প্রতিবেশী নয়। কেউ টাকা মেরে দিলে? কিছুই করার থাকবে না। কেননা হুন্ডি ব্যবস্থাই বেআইনি। তাই সে কোন আইনি ব্যবহস্থা নিতে পারবে না। তাই বৈধ উপায়ে নিরাপদে টাকা পাঠানো উচিৎ।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেশের অর্থনীতিবিদদের নিয়ে আলাপ-আলোচনা করে তাদের পরামর্শক্রমে ১৯৭৪ সালে ‘ওয়েজ আর্নার্স স্কিম’ চালু করা হয় এবং তখন থেকে দেশে বৈদেশিক মুদ্রা আসার প্রবণতা বাড়তে থাকে।
সহজে বাড়িতে টাকা পৌঁছে দেওয়ার নিশ্চয়তা দিতে থাকে প্রবাসীদের। বিদেশের যেসব শহরে বাংলাদেশিদের অবস্থান বেশি, সেসব স্থানে তারা ব্যাংকের মতোই বুথ খুলে বৈদেশিক মুদ্রা বাংলাদেশিদের কাছ থেকে নিয়ে তার বিপরীতে সাংকেতিক চিহ্নসংবলিত ‘টুকা’ ইস্যু করার কাজ করে। এ টুকাই বাংলাদেশে তাদের টাকা পাওয়ার নিশ্চয়তা প্রদানের নিদর্শন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এভাবে নন-ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পাচারের প্রধান একটি উপায় হিসেবে ব্যবহৃত হয় হুন্ডি। সাম্প্রতিক বিভিন্ন তথ্যমতে, হুন্ডি ক্রমেই ব্যাপক হচ্ছে। হুন্ডি এখন অর্থ পাচারের একটি ভয়ংকর মাধ্যম। হুন্ডিতে মূলত এজেন্টের মাধ্যমে টাকা লেনদেন হয়। এটি পুরোপুরি চলে বিশ্বাসের ওপর। এখানে কোনো কাগজপত্রের লেনদেন হয় না। এ প্রক্রিয়ায় টাকা পাচার হওয়ায় পাচারকারীদের শনাক্ত করা খুবই কঠিন কাজ। এছাড়া হুন্ডির মাধ্যমে টাকা স্থানান্তরে খরচও আবার তুলনামূলক কম। এ কারণেই পাচারকারীরা হুন্ডিকেই পছন্দ করে বেশি। তবে এখানে ঝুঁকি অনেক বেশি। কোনো কারণে টাকা আত্মসাৎ করা হলে তা আর ফেরত পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা থাকে না। আমাদের দেশের অনেক সাধারণ মানুষ, যারা হুন্ডি ব্যবসায়ীদের কবলে পড়ে অনেক সময় সর্বস্বান্ত হচ্ছেন, তাদের বেশিরভাগ অংশই হুন্ডি সম্পর্কে তেমন কিছুই বোঝেন না। ফলে দেখা যায়, একটি অংশ না বুঝে নিজেদের অগোচরেই জড়িয়ে পড়ছেন এ অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে। তাই হুন্ডি ব্যবসা বন্ধ করতে জনসাধারণের সচেতনতা বাড়ানো একান্ত প্রয়োজন।