খেলাপি ঋণ কী

খেলাপি ঋণ কাকে বলে?

আমরা সবাই(ঋণ খেলাপিরা ছাড়া!!) জানি ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে তা একসময় সুদ-আসলে পরিশোধ করতে হয়। এই ‘একসময়’ বলতে হতে পারে ঋণ গ্রহণের- এক বছর, দুই বছর বা পাঁচ-দশ বছর। এই সময়ের মাঝে কোন ঋণ গ্রহীতা যদি সুদ-আসল, বা আলাদা করে শুধু সুদ বা আসলের অল্প পরিমাণও ব্যাংককে না দিতে পারে, তখন তার ঋণ খেলাপি(Default) হয়ে যায়। তখন ঐ ঋণ গ্রহীতাকে খেলাপি বা Defaulter বলা হয়।

নন-পারফর্মিং ঋণ কাকে বলে? (Nonperforming Loan – NPL)

যে সমস্ত খেলাপি ঋণ আরেকটি নির্দিষ্ট সময় পার করে সেসকল ঋণকে নন-পারফর্মিং ঋণ বলে। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময় বলতে সাধারণত তিন, ছয় বা নয় মাস বুঝায়।

সাধারণত ‘নন-পারফর্মিং’ ঋণের শ্রেণীকরণ তিন ধরনের করা হয়,

  1. ‘সাব-স্ট্যান্ডার্ড’ (তিন মাসের বেশি অনাদায়ি),
  2. ‘ডাউটফুল’ (ছয় মাসের বেশি অনাদায়ি) এবং
  3. ‘ব্যাড ডেট বা লস’ (‌ক্ষেত্র বিশেষে নয় মাস অথবা এক বছরের বেশি সময়ের জন্য অনাদায়ি)। ব্যাড ডেটকে বাংলায় ‘মন্দ ঋণ’ বা কুঋণও বলা হয়।

রাইট অফ সিস্টেম কী? (What is Write Off?)

Write Off, Phrasal Verb টির বাংলা অর্থ অবলোপন বা কোন ঋণকে বাতিল করা। বাংলাদেশে ২০০২ সালে চালু হওয়া ‘রাইট অফ সিস্টেমের’ নিয়মানুযায়ী যেসব মন্দ ঋণ পাঁচ বছরেও আদায় করা যায়নি, সেগুলোকে শর্ত সাপেক্ষে ‘রাইট অফ’ বা অবলোপন করা যায়। রাইট অফ করার মানে হলো এই মন্দ ঋণগুলোকে ব্যাংকের মূল ব্যালান্সশিট থেকে সরিয়ে আলাদা আরেকটি লেজারে হিসাব সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা। অতএব মনে রাখবেন(খেলাপিরা) ঋণ খেলাপি হলেও মাপ নাই। আপনার হিসাব মূল ব্যালান্সশিট থেকে বাদ দিলে ব্যাংকের কাছে আপনার হিসাব ঠিকই আছে। ভালো মানুষ হোন, খেলাপি ঋণ পরিশোধ করুন, দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখুন।।

শ্রেণিকৃত ঋণ কী? What is classified Loan?

শ্রেণীকৃত ঋণ বলতে বুঝায় ঐসকল ঋণ যেগুলো খেলাপি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কেননা এক্ষেত্রে ঋণ গ্রহীতার ভাব দেখে ব্যাংকের মনে হচ্ছে ঋণের সুদ দূরে থাক মূলধন পরিশোধ করার চিন্তাও তার মাথায় নেই। আমাদের দেশে শ্রেণীকৃত ঋণ ৩ শতাংশের মধ্যে থাকা বাঞ্ছনীয়। ২০১৭ সালের হিসাব পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয় যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের শ্রেণীকৃত ঋণের হার গড়ে ৩২ শতাংশ। তিন শতাংশ ঠিকই আছে শুধু ডান পাশে একটা শূন্য বসেছে!!

বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ
২০০৯ সালে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। ২০১৮ এর সেপ্টেম্বর শেষে তা বেড়ে হয়েছে ৯৯ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ১০ বছরে দেশে খেলাপি ঋণ বেড়েছে সাড়ে ৪ গুণ। এর বাইরে দীর্ঘদিন আদায় করতে না পারা যেসব ঋণ ব্যাংকগুলো অবলোপন করেছে, তার পরিমাণ প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা। খেলাপি ঋণের সঙ্গে অবলোপন করা এ মন্দ ঋণ যুক্ত করলে প্রকৃত খেলাপি ঋণ দাঁড়ায় ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা।

Add a Comment