বার ভূঁইয়া

বিগত সালের BCS Preliminary- তে এখান থেকে প্রশ্ন এসেছে টি।

ভূঁইয়া অর্থ কি
ভূঁইয়াদের উৎপত্তি মুসলিম শাসনামলে, সম্রাট আকবরের সময়ে হয়। ‘ভূঁইয়া’ একটি আঞ্চলিক শব্দ। এর অর্থ ভৌমিক বা ভূমির মালিক, ভূস্বামী বা জমিদার। তবে অনেকে শব্দটিকে পদবি হিসাবেও ব্যবহার করেন।

বার ভূঁইয়া বলতে কি বুঝায়
সম্রাট আকবর সমগ্র বাংলার উপর তাঁর অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। বাংলার বড় বড় জমিদাররা মুঘলদের অধীনতা মেনে নেননি। জমিদারগণ তাঁদের নিজ নিজ জমিদারীতে স্বাধীন ছিলেন। এদের শক্তিশালী সৈন্য ও নৌ-বহর ছিল। স্বাধীনতা রক্ষার জন্য এঁরা একজোট হয়ে মুঘল সেনাপতির বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তেন। বাংলার ইতিহাসে এ জমিদারগণ ‘বার ভূঁইয়া’ নামে পরিচিত। এ ‘বার’ বলতে বারজনের সংখ্যা বুঝায় না। ধারণা করা হয় অনির্দিষ্ট সংখ্যক জমিদারদের বোঝাতেই ‘বার’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে।

বার ভূঁইয়া কাদের বলা হয়
পাঠান ও হিন্দু জমিদারগণ ‘ভূঁইয়া’ শব্দটি পদবি হিসাবে ব্যবহার করতেন। এদের মধ্যে বারজন প্রসিদ্ধলাভ করেলেও তাঁদের সংখ্যা বারজনের বেশি। বার ভূঁইয়া ছাড়া ও বাংলার অন্যান্য ভূঁইয়া ও ছোটখাট জমিদারেরা সম্রাট আকবরের শাসন মেনে নেননি। তারা নিজেদেরকে স্বাধীন মনে করতেন। প্রথম দিকে বার ভূঁইয়াদের নেতা ছিলেন ঈসা খান। ভুঁইয়াদের মধ্যে তিনি সবথেকে শক্তিশালী ছিলেন।

বার ভূঁইয়াদের পরিচয় নির্দিষ্ট করে বার জন ভূঁইয়াকে কেউ করতে আলাদা পারেননি তাই একেকজন একেকভাবে ১২জন মিলিয়েছেন। এখানেও তেমনি ১২ জনের নাম দেওয়া হল।

ক্রমভুঁইয়াঅঞ্চল
1ঈসা খান, মূসা খান ঢাকা জেলার অর্ধাংশ, প্রায় সমগ্র ময়মনসিংহ জেলা এবং পাবনা, বগুড়া ও রংপুর জেলার কিছু অংশ
2মহারাজা প্রতাপাদিত্য (৩৯তম বিসিএস প্রিলিমিনারি) খুলনা-যশোর
3বাহাদুর গাজীভাওয়াল (গাজীপুর)
4সোনা গাজীসরাইল (ত্রিপুরার উত্তর সীমায়)
5ওসমান খান বোকাইনগর (সিলেট)
6হামিদুর রহমান বিষ্ণুপুর (বাকুড়া)
7লক্ষণ মাণিক্যভুলুয়া (নোয়াখালী)
8পরমানন্দ রায় চন্দ্রদ্বীপ (বরিশাল)
9বিনোদ রায়, মধু রায় চান্দপ্রতাপ (মানিকগঞ্জ)
10মুকুন্দরাম, সত্রজিৎভূষণা (ফরিদপুর)
11রাজা কন্দর্পনারায়ণ, রামচন্দ্রবরিশাল জেলার অংশ বিশেষ
12চাঁদ রায় ও কেদার রায়শ্রীপুর (বিক্রমপুর, মুন্সীগঞ্জ)

বারভূঁইয়াদের পতন ও মুঘল শাসন
বলা হয় সম্রাট বাবরের সময় থেকেই বাংলায় মুঘল আক্রমণ শুরু হলেও মুঘল শাসনের সমগ্র বাংলা থেকে পরিপূর্ণ খাজনা আদায় একমাত্র শাহজাহানের সময় সম্ভব হয়েছিল| কেননা ভূঁইয়ারা জোটবদ্ধভাবে মুঘল আক্রমণ প্রতিহত করত।

ঈসা খাঁ বারভূঁইয়াদের নেতা ছিলেন। সম্রাট আকবরের সেনাপতি মানসিংহ জীবনে কখোনো পরাজিত করতে পারেননি ঈসা খাঁ’কে। মুঘল আমলেই তিনি সোনারগাঁয়ে রাজধানী স্থাপন করেন ও নিজেকে সোনারগাঁয়ের অধিপতি ঘোষণা করেন। ১৫৯৯ খ্রিষ্টাব্দে ঈসা খাঁর মৃত্যু হলে তার পুত্র মুসা খাঁ সোনারগাঁয়ের কর্তা হন। ১৬০২ খ্রিষ্টাব্দে রাজা মানসিংহ এক নৌযুদ্ধে মুসাখাঁকে পরাজিত করে সোনারগাঁ এর পতন ঘটান ও মুসাখাঁকে বিতারিত করেন। ১৬০৮ খ্রিষ্টাব্দে সম্রাট জাহাঙ্গীর শেখ আলাউদ্দিন ইসলাম খান চিশতিকে বাংলার সুবেদার নিযুক্ত করেন। ইসলাম খান ১৬১০ সালে বাংলার রাজধানী বিহারের রাজমহল হতে প্রথম বারের মত ঢাকায় স্থাপন করেন, ও রাজধানীর নতুন নাম দেন ‘জাহাঙ্গীর নগর’। ১৬১২ সালে ইসলাম খান ময়মন সিংহের খাজা ওসমান কে পরাজিত করে সমগ্র বাংলা মুঘল শাসনের অধীনে আনেন।

Add a Comment