সম্রাট অশোক
|সংস্কৃত শব্দ “অশোক” অর্থ শোকবিহীন বা দুঃখহীন।সমাসগত দিক থেকে শব্দটি বহুব্রীহি। অশোকাবদান গ্রন্থানুসারে, তিনি জন্ম নিয়ে মাতার দুঃখ দূর করেছিলেন বিধায় তার মাতা তাঁকে এ নাম দিয়েছিলেন। অশোকাবদান গ্রন্থানুসারে, অশোক দ্বিতীয় মৌর্য সম্রাট বিন্দুসার ও তার এক দাসীর গর্ভে (যে চম্পা নগর থেকে আগত) জন্ম নেন।
অশোক গৌতম বুদ্ধের মৃত্যুর ২১৮ বছর পর সিংহাসনে আরোহণ করেন এবং ৩৭ বছর শাসন করেন। অধিকাংশ বিশেষজ্ঞগণ বুদ্ধের মৃত্যু ৪৮৩ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে হয়েছিল বলে ধারণা করেন। এই দুই গ্রন্থের তথ্য যদি সঠিক হয় তবে অশোক ২৬৫ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে সিংহাসনলাভ করেছিলেন।
পিতা বিন্দুসার ও পিতামহ চন্দ্রগুপ্তের রেখে যাওয়া সাম্রাজ্যের আয়তন, সামরিক শক্তি ও সমৃদ্ধি অশোক বহুগুণে বৃদ্ধি করেছিলেন। সিংহাসনে আরোহণ করে অশোক পরবর্তী আট বছর তার সাম্রাজ্য বিস্তারে মনোনিবেশ করেন। উত্তরে হিন্দুকুশ পর্বতমালা থেকে শুরু করে দাক্ষিণাত্যের কিছু অংশ বাদ দিয়ে সমগ্র ভারতবর্ষ তার করায়ত্ত হয়। অর্থাৎ তার রাজত্ব বর্তমান ভারত, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের অধিকাংশ জায়গা, বাংলাদেশ এবং আনুমানিক নেপালের কিয়দংশেও সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। তার রাজত্বকালের অষ্টম বর্ষে তিনি কলিঙ্গ আক্রমণ করেন। ভয়াবহ এই কলিঙ্গের যুদ্ধে প্রায় এক লক্ষ মানুষ নিহত এবং দেড় লক্ষ মানুষ নির্বাসিত হয়েছিল।
অশোকের ত্রয়োদশ শিলালিপিতে বর্ণিত হয়েছে যে, কলিঙ্গের যুদ্ধে প্রচুর মানুষের মৃত্যু ও তাদের আত্মীয় স্বজনদের অপরিসীম কষ্ট লক্ষ্য করে অশোক দুঃখে ও অনুশোচনায় দগ্ধ হন। এই ভয়ানক যুদ্ধের কুফল লক্ষ্য করে যুদ্ধপ্রিয় অশোক একজন শান্তিকামী ও প্রজাহিতৈষী সম্রাট এবং বৌদ্ধ ধর্মের একজন পৃষ্ঠপোষকে পরিণত হন। অশোকের পৃষ্ঠপোষকতায় শুধুমাত্র মৌর্য সাম্রাজ্য নয়, এশিয়ার বিভিন্ন রাজ্যেও বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারিত হয়। তার পুত্র মহিন্দ ও কন্যা সংঘমিত্রা সিংহলে (বর্তমানে শ্রীলঙ্কা) বৌদ্ধ ধর্ম প্রচার করেন। অশোকের ধার্মিকতার দৃষ্টান্ত তার প্রস্তরে উৎকীর্ণ লিপিতে পাওয়া যায়।
ভারতের জাতীয় পতাকার কেন্দ্রে স্থান পেয়েছে অশোকস্তম্ভের নিম্নস্থিত ধর্মচক্র। ভারতের পতাকা স্মরণ করিয়ে দেয় মৌর্য সাম্রাজ্যের গৌরবময় ইতিহাস।