সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা(৩/৪)
|পরিকল্পনার অভীষ্ট ও লক্ষ্যমাত্রা
ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বিধৃত প্রধান লক্ষ্যসমূহের অনুবর্তন প্রতিফলিত হয়েছে সপ্তম পরিকল্পনায়। প্রেক্ষিত পরিকল্পনার রূপকল্প ও লক্ষ্যমাত্রার আলোকে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার অধীনে যে মূল লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়, তা নিম্নরূপঃ
ক. আয় ও দারিদ্র্য
• পরিকল্পনা মেয়াদে প্রতি বছর গড়ে ৭.৪% হারে প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অজর্ ন
• মাথাগুনতি দারিদ্র্য অনুপাতে ৬.২ শতাংশ পয়েন্ট কমিয়ে আনা
• চরম দারিদ্র্য অনুপাতে প্রায় ৪.০ শতাংশ পয়েন্ট হ্রাস
• ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে কর্মসংস্থানের অংশ ১৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে উন্নীত করে বিপুল সংখ্যক অর্ধবেকারসহ শ্রমশক্তিতে নতুন প্রবেশকারীদের জন্য ভালো মানের কর্মসুযোগ সৃষ্টি
খ. খাত উন্নয়ন
• কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে অর্থবহ প্রবৃদ্ধি
• ২০২০ অর্থবছরের মধ্যে সেবা উৎপাদন খাতের অবদান জিডিপির ২১% এ উন্নীতকরণ
• ২০২০ অর্থবছরের মধ্যে রপ্তানিতে উল্লেখযোগ্য গতি সঞ্চার করে তা ৫৪.১ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা
• অথর্ বছর ২০২০ এর মধ্যে ৫০% এর বাণিজ্য- জিডিপি অনুপাত অর্জন
গ. সামষ্টিক অথর্ নৈতিক উন্নয়ন
• অর্থবছর ২০২০ এর মধ্যে মোট রাজস্ব জিডিপির ১০.৭% থেকে ১৬.১% তে বৃদ্ধি
• জিডিপির ৫% এর মধ্যে বর্তমান আথির্ ক ঘাটতি বজায় রাখা
• ২০২০ অর্থবছরের মধ্যে সরকারি ব্যয় জিডিপির ২১.১% এ বর্ধিতকরণ
• ২০২০ অথর্ বছরের মধ্যে বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে ৯.৬ বিলিয়ন ডলারে উন্নীতকরণ
ঘ. নগর উন্নয়ন
• শহরের উপকন্ঠগুলোতে বিশেষ করে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের আশেপাশের এলাকায় অবস্থিত প্রবৃদ্ধি কেন্দ্রসমূহে অবকাঠামোগত বিনিয়োগ ও পৌর সুবিধাদি বাড়ানো
• অনানুষ্ঠানিক বসতি ও বস্তিগুলোতে বসবাসকারীসহ শহর বা নগরবাসীদের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক গৃহায়ণ ও অন্যান্য পৌর সুবিধা
• টেকসই ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা ও অঞ্চল চিহ্নিতকরণের ভিত্তিতে অন্তর্ভুক্তিমূলক নগর পরিকল্পনা
• নগরের অতি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোক্তার জন্য বর্ধিত উৎপাদনশীলতা, সহজ অর্থায়ন সুবিধা ও নীতি সমর্থন
ঙ. মানব সম্পদ উন্নয়ন (শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা)
• প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় শতভাগ ভর্তির লক্ষ্য অর্জন
• পঞ্চম গ্রেড পর্যন্ত শিক্ষার্থী ধরে রাখার হার বর্তমান ৮০ শতাংশ থেকে শতভাগ বৃদ্ধি
• ৫-এর নিমে œ মৃত্যুহার প্রতি ১০০০ জীবিত জন্মে ৩৭ জনে নামিয়ে আনা
• প্রসূতি মৃত্যুর অনুপাত প্রতি ১০০০০০ জীবিত জন্মে ১০৫ জনে নামিয়ে আনতে হবে
• প্রতিষেধক প্রদান, হাম নিয়ন্ত্রণ (১২ মাসের কম বয়সী শিশুদের শতাংশে) শতভাগ বাড়ানো
• ৫-এর কম শিশুদের মধ্যে স্বল্পওজন শিশুর অনুপাত ২০ শতাংশ কমানো
• দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মীদের উপস্থিতিতে শিশু প্রসবের ঘটনা ৬০ শতাংশ বাড়ানো
• মোট জন্ম হার ২.০ এ নামিয়ে আনা
• জন্ম নিরোধী বিস্তার হার ৭৫ শতাংশে উন্নীত করা
চ. পানি ও স্যানিটেশন
• সবার জন্য নিরাপদ সুপেয় পানি
• স্যানিটারি ল্যাট্রিন সুবিধাভোগী নগরবাসীর অনুপাত শতভাগে উন্নীত করা
• স্যানিটারি ল্যাট্রিন সুবিধাভোগী গ্রামবাসীর অনুপাত ৯০ শতাংশে উন্নীত করা
ছ. জ্বালানি ও অবকাঠামো
• ২০২০ অর্থবছরের মধ্যে ইনস্টলকৃত বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্যাপাসিটি ২৩০০০ মেগাওয়াটে উন্নীত করা
• জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য মিশ্র জ্বালানি নিশ্চিত করা
• শিল্প কারখানায় অবিরাম সরবরাহ রেখে বিদ্যুৎ সুবিধার বিস্তার ৯৬ শতাংশে বাড়ানো
• সিস্টেম লস ১৩% থেকে ৯% এ কমিয়ে আনা, জ্বালানি দক্ষতা ও সংরক্ষণ ব্যবস্থার উন্নয়ন
• মাওয়া-জাজিরায় ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ
• প্রায় ২৬ কিমি দীর্ঘ ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ
• ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ৪-৬ লেনে উন্নীত করে পুনর্নির্মাণ
• রেল ও নৌপথে পরিবহণের অংশ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করে বহুমুখী পরিবহণ নেটওয়ার্কের উন্নয়ন
• ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীর ওপর বিশেষ গুরুত্বসহ বিভিন্ন নগরের ট্র্যাফিক ভিড় কমিয়ে আনা
• সড়ক- দুর্ঘটনা সংঘটন হ্রাস করা
• উচ্চ অগ্রাধিকারযুক্ত নিম্নের মহা প্রকল্পগুলো সম্পূর্ণ করাঃ
পদ্মা সেতু, গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্প, এমআরটি-৬ প্রকল্প, এলএনজি টার্মিনাল প্রকল্প, পায়রা বন্দর প্রকল্প, রূপপুর নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট প্রকল্প, রামপাল কয়লা-বিদ্যুৎ প্রকল্প, মাতারবাড়ি কয়লা-বিদ্যুৎ প্রকল্প
জ. জেন্ডার সমতা, আয় বৈষম্য ও সামাজিক সুরক্ষা
• উচ্চতর (টার্শিয়ারি) পর্যায়ের শিক্ষায় পুরুষের তুলনায় নারী শিক্ষার্থীর অনুপাত বর্তমান ৭০ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশে বাড়াতে হবে
• ২০-২৪ বছর বয়সী পুরুষের তুলনায় শিক্ষিত নারীর অনুপাত বর্তমান ৮৬ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশে উন্নীত করতে হবে
• কারিগরি ও পেশাগত (ভোকেশনাল) শিক্ষায় নারী শিক্ষার্থী ভর্তিকে উৎসাহিত করা হবে
• জিডিপির অংশ হিসেবে সামাজিক সুরক্ষা ব্যয় জিডিপির ২.৩% এ উন্নীত করতে হবে
ঝ. পরিবেশগত টেকসহিতা
• উৎপাদনশীল বনের আয়তন ২০ শতাংশ বাড়ানো
• ঢাকা ও অন্যান্য বড় বড় নগরীতে বায়ুর মান উন্নয়ন এবং পরিচ্ছন্ন বায়ু আইন পাস করা
• শিল্প বর্জ্যের শূন্য নিগর্মণ নিশ্চিত করা
• জলাভূমি সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী বিভিন নগরের জলাভূমি,খাল পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ
• সর্বোচ্চ শুষ্ক মৌসুমে জলজ অভয়াশ্রম (অ্যাকোয়াটিক স্যাংচুয়ারি) হিসেবে অন্তত ১৫% জলাভূমি সংরক্ষণ করা
• উপকূল রেখা ধরে ৫০০ মিটার চওড়া স্থায়ী সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা এবং তার সুরক্ষা নিশ্চিত করা
• টেকসই ভূমি/পানি ব্যবহারের জন্য ভূমি জোনিং কাজ সম্পন্ন করা
• পরিবেশগত, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসের বিবেচনাগুলো প্রকল্প ডিজাইন, বাজেটীয় বরাদ্দ ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার মধ্যে সমন্বয় সাধন
• ঢাকাসহ অন্যান্য প্রধান নগরীসমূহের বিভিন খাল ও প্রাকৃতিক পানি প্রবাহ পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ
ঞ. আইসিটি উন্নয়ন
• টেলিঘনত্ব ১০০%, ইন্টারনেট বিস্তৃতি ১০০% এবং ব্রডব্যান্ড সুবিধা বিস্তার ৫০% উন্নত করা
• সকল প্রাথমিক স্কুলে অন্তত ১টি করে এবং সকল মাধ্যমিক স্কুলে অন্তত ৩টি করে মাল্টিমিডিয়া সুবিধা সংবলিত ক্লাসরুম স্থাপন; ৩০% প্রাথমিক স্কুলে এবং ১০০% মাধ্যমিক স্কুলের প্রতিটিতে একটি করে আইসিটি ল্যাবরেটরি সুবিধা তৈরি
• ২৫% কমিউনিটি স্বাস্থ্য ক্লিনিকে নগর অঞ্চলের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সাথে টেলিপরামশর্ গ্রহণ সুবিধা
• সকল জি-টু-পি (সরকার থেকে ব্যক্তি) নগদ হস্তান্তর এবং অধিকাংশ পি-টু-জি এবং বি-টু-জি পরিশোধ কাজে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার সম্পন্ন করা
• জাতীয় পোর্টাল এবং মোবাইল ডিভাইসের মাধ্যমে ডিজিটাল সেন্টারগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ সকল সরকারি সেবা প্রাপ্তির ব্যবস্থা গ্রহণ; ১০০% নাগরিক ও বাসিন্দার প্রত্যেকের ডিজিটাল পরিচয়পত্র থাকবে, যা সেবা বিতরণে ব্যবহৃত হবে
• বিভিন চাহিদা ও সরবরাহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সাথে যোগাযোগ রক্ষায় নিয়মিতভাবে সামাজিক মিডিয়া ব্যবহার করা হবে
জন সিদ্ধান্তের সমর্থনে উপয্ক্তু সরকারি তথ্য ও বড় তথ্যভান্ডার বিশ্লেষণ নিয়মিতভাবে করা হবে; অভ্যন্তরীণ আইসিটি আয় ২ বিলিয়ন ডলারে এবং রপ্তানি আয় ২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীতকরণ; আইসিটি শিল্পের জন্য ১০ লক্ষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনসম্পদ গড়ে তোলা
• গবেষণা ও উন্নয়ন ব্যয়ের জন্য জিডিপি-র ১% বরাদ্দ রাখা
• শক্তিশালী সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ