সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা(৪/৪)

উন্নয়ন ফলাফল কাঠামো (ডিআরএফ)

সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় একটি কার্যকর ফলাফলভিত্তিক পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন (এমঅ্যান্ডই) কৌশল অনুসরণের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়া হয়েছে, যা পরিকল্পনাসহ এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকল কর্মসূচির বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণে প্রভূত সহায়ক হবে। এ ব্যাপারে ষষ্ঠ পরিকল্পনা মেয়াদে প্রবর্তিত গবেষণা ও মূল্যায়নলব্ধ ফলাফল কাঠামোর ভিত্তিতে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় পরিমাপযোগ্য নির্দেশকসহ একটি সুসামঞ্জস্যপূর্ণ ও সুগ্রথিত উন্নয়ন ফলাফল কাঠামো (ডিআরএফ) বিনির্মাণ করা হবে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন কাজের পরিমাণগত ফলাফল পরিমাপের জন্য মূল সামষ্টিক ও খাতভিত্তিক পর্যায়ের কর্মসূচি পরিবীক্ষণ করা হবে। পরিকল্পনার বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণের জন্য, সংশ্লিষ্ট সকল মহলের সঙ্গে নিবিড় পরামর্শক্রমে মোট ৮৮টি নির্দেশক সমবায়ে উন্নয়ন ফলাফল কাঠামো বা ডিআরএফ গড়ে তোলা হয়েছে।

বিভিন্ন খাত উন্নয়নের জন্য কৌশল

শ্রেণীগত বৈশিষ্ট্যাবলির দিক থেকে সম্প্রতি সমরূপ জাতীয় বিভাগগুলোকে ১৪টি শ্রেণীতে বিন্যস্ত করার যে পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়, সেগুলোর সাথে পংক্তিভুক্ত করে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার বিভিন্ন খাত উন্নয়ন কৌশল বিষয়ক অধ্যায়গুলো বিন্যস্ত করা হয়েছে। আগে মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে খাতীয় শ্রেণী বিন্যাসের কিছু বিচ্যুতি ছিল- উন্নয়ন পরিকল্পনায় অনুসরণ করা হতো ১৭টি খাত; অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্পদ বরাদ্দের জন্য ১৩টি খাত ব্যবহার করা হতো, অপরদিকে ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ১০টি বিষয়গত (থিমাটিক) দিকের ওপর প্রাধান্য দেয়া হয়। মন্ত্রণালয়গুলোর জন্য সম্প্রতি একই ধরনের খাতীয় শ্রেণী বিন্যাস পদ্ধতিতে যে পরিবর্তন আনা হয় তা পরিকল্পনা, সম্পদ বণ্টন, বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কাজের মধ্যে ঐক্যতানীয় সাদৃশ্য আনবে, এই প্রত্যয়কে সামনে রেখে খাত সম্পর্কিত অধ্যায়গুলোর বিন্যাস করা হয়েছে। এখন বাজেট ও পরিকল্পনায় খাত বিন্যাসের সাদৃশ্য একই।
খাত ১ ও ২ সাধারণ জনসেবা এবং জনশৃংখলা ও নিরাপত্তা
“বাংলাদেশের প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০১০-২০২১”-এ বিঘোষিত রূপকল্প ২০২১-এর কাক্সিক্ষত মাইলফলক স্পর্শের জন্য সরকারের প্রচেষ্টা গভর্ন্যান্স বা পরিচালন ব্যবস্থার সমস্যা মোকাবেলার ওপর একান্তভাবে নির্ভর করে। সপ্তম পরিকল্পনার অধীনে সরকারের উদ্যোগে এমন কিছু সংখ্যক কৌশল ও নীতি গৃহীত হবে, যা সামগ্রিক উন্নয়ন পরিকৃতির অধিকতর উন্নয়নকল্পে সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর বিশেষ গুরুত্বদান সহ সাম্প্রতিক সমস্যাবলির মোকাবেলায় যথেষ্ট সহায়ক হবে। এ ধরনের উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে: (১) বিচার বিভাগ; (২) জন প্রশাসন সামর্থ্য; (৩) আর্থিক খাত; এবং (৪) জনশৃংখলা ও নিরাপত্তা।

আগামী আরো বেশ কিছুকাল বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধির প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে ম্যানুফ্যাকচারিং বা সেবা খাতের প্রাধান্য অব্যাহত থাকবে। পণ্যের বহুমুখীকরণসহ টেকসই রপ্তানি প্রবৃদ্ধির ধারাকে এগিয়ে নিতে বাণিজ্য ও শিল্প নীতিকে এমনভাবে চালনা করতে হবে যা আমাদের ভবিষ্যৎ ম্যানুফ্যাকচারিং খাতকে আরো গতিশীল ও বিশ্ব বাজারে প্রতিযোগিতা-সক্ষম করতে সহায়ক হবে। এজন্য বাংলাদেশকে তার শুল্ক ব্যবস্থা আমূল সংস্কার ও পুনর্গঠন করতে হতে পারে যাতে করে এর সুরক্ষা মাত্রার কাঠিন্য এবং রপ্তানি-বিরোধী প্রবণতা ধীরে ধীরে কমিয়ে আনা যায়। বাংলাদেশকে যদি তার উৎপাদন কাঠামোয় রূপান্তরমূলক পরিবর্তন এনে এগিয়ে যেতে হয়, তবে ‘ইনপুট-আউটপুট’ শুল্ক কাঠামোর এই নতুন ধারা একমাত্র বিকল্প পথ হতে পারে, কেননা রপ্তানির সাফল্য নির্ভর করে উৎপাদন, কর্মসুযোগ ও আয়ের মিলিত বন্ধনে, যা ২০২০ অর্থবছরে উন্নীত হতে পারে ৫৪.১ বিলিয়ন ডলারে এবং এটি হবে জিডিপির ৩০% এর সমান। উল্লেখ্য, ২০১৫ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল জিডিপির ১৭%।

বাংলাদেশের সর্বপ্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (১৯৭৩-৭৮) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান করেন।

জুলাই ২০১৫-তে বিশ্বব্যাংকের শ্রেণীবিন্যাস অনুযায়ী বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের (এলএমআইসি) মর্যাদায় উন্নীত হয়েছে।

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় আমরা লিঙ্গসমতা অর্জন করি এবং প্রাথমিক শিক্ষায় নিট ভর্তি হার উন্নীত হয় ৯৭.৭ শতাংশে। প্রসবকালীন মৃত্যুর অনুপাত এবং নবজাতক শিশু মৃত্যু হার যথাক্রমে প্রতি এক লক্ষ জনে ১৭০ জীবিতজন্মে এবং প্রতি হাজারে ৩৮ জীবিতজন্মে নেমে আসে। জন্ম থেকে মানুষের আয়ুসীমা ৭০.৬ বৎসরে উন্নীত হয়, পক্ষান্তরে জনসংখ্যা বৃদ্ধি হার ১.৩৭ শতাংশ সহ মোট প্রজনন হার ২.৩ শতাংশে হ্রাস পায়।

Add a Comment