ফরায়েজি আন্দোলন
|ফরায়েজি আন্দোলন ধর্মীয় সংস্কারের উদ্দেশ্যে সূচিত হলেও পরবোর্তীতে এটি কৃষকদের আন্দোলনে রূপ লাভ করে। হাজী শরীয়তুল্লাহ ফরিদপুর ও তার আশে পাশের অঞ্চলে সংগঠিত এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। ধর্মীয় সংস্কারের পাশপাশি কৃষকদের জমিদার, নীলকরদের অত্যাচার ও শোষন হতে মুক্ত করা ছিল এই আন্দোলনের লক্ষ্য। হাজী শরিয়তুল্লাহ -র মৃত্যুর পর তার পুত্র দুদু মিয়া এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন।
ফরায়েজি আন্দোলন ছিল ব্রিটিশ বাংলার ধর্মীয় আন্দোলন গুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, যা পরে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক রূপ পরিগ্রহ করে। বাংলায় ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই মুসলমানদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিপর্যয় ঘটে। শিক্ষা, সংস্কৃতি, চাকরি, জমিদারি প্রভৃতি ক্ষেত্রে ব্যাপক বৈষম্যের শিকার মুসলমানদের আত্মসচেতনতা সৃষ্টি ও ধর্মীয় বিষয়গুলো ঠিকমতো পালন করানোর লক্ষ্যে হাজী শরীয়ত উল্লাহ ফরায়েজি আন্দোলন শুরু করেন।
হাজী শরীয়ত উল্লাহ মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষা, সংস্কৃতি, ধর্মচর্চা প্রভৃতি বিষয়ে ব্যাপক অধঃপতন লক্ষ করেন। তিনি উপলব্ধি করেন, মুসলমানরা ইসলামের ফরজ বিধানগুলো ঠিকমতো পালন না করলে তাদের সার্বিক অবস্থার উন্নতি হবে না। মুসলমানদের ইমানি শক্তি বৃদ্ধি করে ব্রিটিশদের অন্যায়-অপশাসনের প্রতিবাদ করার জন্য তাদের তৈরি করা ছিল তাঁর লক্ষ্য। তিনি কৃষকদের ঐক্যবদ্ধ করে শক্তিশালী লাঠিয়াল বাহিনী গঠন করেন।
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দুঃশাসনে মুসলমানদের ধর্মীয়, সামাজিক, অর্থনৈতিক প্রভৃতি ক্ষেত্রে চরম দুর্দশাকর অবস্থার সৃষ্টি হলে হাজী শরীয়ত উল্লাহ বিভিন্নভাবে তাঁর আন্দোলন সংগঠন ও পরিচালনা করেন। তিনি যা যা করেছিলেন, তার সারাংশ উল্লেখ করা হলো : ধর্মীয় বিধিবিধানের গুরুত্ব বর্ণনা : মুসলমানদের ধর্মীয় বিধিনিষেধের গুরুত্ব বোঝানোর চেষ্টা করে ফরজ পালনের তাগিদ দেন। কুসংস্কার দূর করা হাজী শরীয়ত উল্লাহ সমসাময়িক জেমস টেইলর কুসস্কার সমূহের তালিকা করেন যার মধ্যে ছিলো ছুটিপট্রি এবং চিল্লা যেগুলো শিশুর জন্ম এবং দাফনে ব্যবহার করেতেন তিনি এইসব বিলুপ্ত করেন
হাজী শরীয়ত উল্লাহর পর ফরায়েজি আন্দোলনের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন তাঁর পুত্র দুদু মিয়া। হাজী শরীয়ত উল্লাহর মৃত্যুর পর দুদু মিয়া ফরায়েজি আন্দোলনের গতি সঞ্চার করেন।
ফরায়েজি আন্দোলনে দুদু মিয়ার অবদান:
সংগঠন দৃঢ় করা : দুদু মিয়া অসাধারণ সাংগঠনিক গুণের অধিকারী ছিলেন। তিনি ফরায়েজিদের সংঘবদ্ধ ও সুসংহত করেন।
লাঠিয়াল বাহিনী গঠন : দুদু মিয়া ফরায়েজি আন্দোলনকে শক্তিশালী ও গতিশীল করার জন্য বিশাল লাঠিয়াল বাহিনী গঠন করেন।
খলিফা নিয়োগ : তিনি বাংলাকে কয়েকটি অঞ্চলে বিভক্ত করে প্রতিটি অঞ্চলের দায়িত্ব অর্পণ করেন একজন খলিফার ওপর।
আঞ্চলিক সমন্বয় : বিভক্ত অঞ্চলগুলোর মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি, তথ্য আদান-প্রদান, অর্থ সংগ্রহ ও কূটনৈতিক কলাকৌশল প্রয়োগ প্রভৃতির মাধ্যমে বিশাল অঞ্চলজুড়ে সমন্বিত সংগ্রাম পরিচালনা করেন।
অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রাম : ফরায়েজি আন্দোলনে অর্থনৈতিক মাত্রা যোগ করে কৃষক দুঃখী মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য সংগ্রাম শুরু করেন।
রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ : দুদু মিয়ার নেতৃত্বে ফরায়েজি আন্দোলন সংস্কার আন্দোলনের গণ্ডি পেরিয়ে রাজনৈতিক রূপ লাভ করে। দুদু মিয়ার সাংগঠনিক বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতার বলে ফরায়েজি আন্দোলন বেশ শক্তিশালী হয়।