পানিপথের যুদ্ধ
|পানিপথ একটি গ্রামের নাম যা বর্তমান ভারতের হরিয়ানা প্রদেশের অন্তর্গত। পানিপথ গ্রামটি দিল্লি থেকে ৯৭ কিলোমিটার অবস্থিত।
পানিপথের প্রথম যুদ্ধ
পানিপথের প্রথম যুদ্ধ ১৫২৬ খ্রিষ্টাব্দের ২১ এপ্রিল লোদি সাম্রাজ্যের ইব্রাহিম লোদি এবং মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা বাবরের মধ্যে সংঘটিত হয়। পানিপথের এই যুদ্ধ ভাগ্যনির্ধারণী ছিল। এর ফলে বাবর মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। উপমহাদেশের যুদ্ধের ইতিহাসে বাবর পানিপথের প্রথম যুদ্ধে, প্রথম কামানের ব্যবহার করেন। বাবরের কামান ব্যবহার যুদ্ধক্ষেত্রে ভাগ্যনির্ধারণের ভূমিকা রেখেছে। অপরদিকে ইবরাহিম লোদির বাহিনীতে কোনো গোলন্দাজ বাহিনী ছিল না। পাশাপাশি কামানের বিকট শব্দ লোদি বাহিনীর হাতিগুলোকে ভয় পাইয়ে দেয়, ফলে হাতিগুলো লোদি বাহিনীর সেনাদের পদদলিত করা শুরু করে। যুদ্ধে ইবরাহিম লোদি পরাজিত ও নিহত হন। ফলে দিল্লির সালতানাত বিলুপ্ত হয় ও মুঘল সাম্রাজ্যের শুরু হয়।
পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধ
পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধ হয়েছিল ১৫৫৬ সালের ৫ নভেম্বর হিন্দু জেনারেল ও আদিল শাহ সুরির প্রধানমন্ত্রী হেমুর বাহিনী এবং মুঘল বাদশাহ আকবরের বাহিনীর মধ্যে। দিল্লীর যুদ্ধে তারদি বেগ পরিচালীত মুঘলদের পরাজিত করে হেমু এক মাস আগেই দিল্লী জয় করেছিলেন এবং নিজেকে রাজা বিক্রমাদিত্য ঘোষণা করেছিলেন। আকবর এবং তার অভিভাবক বৈরাম বেগ শহর পুনরুদ্ধার করার জন্য দ্রুত দিল্লী পৌছেছিলেন। যদিও যুদ্ধের আগেই হেমু তার গোলন্দাজ বাহিনী হারিয়েছিল, তার বাহিনী সংখ্যায় বেশি ছিল। যুদ্ধের মাঝে হেমু তীর লেগে আহত হয়েছিলেন এবং জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলেন। তাকে পড়ে যেতে দেখে তার সেনাদল আতঙ্কিত হয়ে হয়ে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। হেমু ধরা পড়ে এবং পরে তার শিরোচ্ছেদ করা হয়েছিল। আকবরের সুস্পষ্ট বিজয়ের মধ্য দিয়ে যুদ্ধ শেষ হয়েছিল।
পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ
আঠার শতকের একটি ঘটনাবহুল ও আলোচিত যুদ্ধ পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ। পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ ১৪ই জানুয়ারি ১৭৬১ সালে পানিপথ নামক স্থানে সংঘটিত হয়। এর এক পক্ষে ছিল মারাঠা সাম্রাজ্য অন্যপক্ষে ছিল আফগানিস্থানের দুররানি সাম্রাজ্যের সম্রাট আহমেদ-শা-আবদালি(দুররানি)। উত্তরপ্রদেশের রোহিলাখণ্ডের নাজিব উদদৌলা, উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যার নবাব সুজা-উদ-দৌল্লা ও দোয়াব অঞ্চলের আফগানরা সম্রাট আহমেদ-শা-আবদালিকে সমর্থন করে তার পক্ষেযুদ্ধ করে। দুই পক্ষের যুদ্ধে এক দিনে হতাহতের সংখ্যা এ যুদ্ধেই সম্ভবত সব থেকে বেশি। যুদ্ধে আহমেদ-শা-আবদালির জয়ের মধ্য দিয়ে দুররানি সাম্রাজ্যের বিজয় ঘটে।