শুদ্ধাচার

‘শুদ্ধাচার’ শব্দের সৃষ্টি ‘শুদ্ধ’ ও ‘আচার’ শব্দের সমন্বয়ে। শুদ্ধ বলতে আমরা সহজ ভাষায় বুঝি সাধু, পবিত্র, খাঁটি, পরিষ্কার, শোধিত, নির্ভুল, নির্দোষ, নিষ্কলুষ ইত্যাদি। একজন মানুষের চরিত্রের বৈশিষ্ট্য প্রকাশের জন্য যখন সমাজ এই শব্দগুলোর ব্যবহার ও প্রয়োগ করে তখনই মানুষ শুদ্ধ মানুষ হিসেবে গণ্য হন। এ জন্য সত্য, সুন্দর ও কল্যাণকর, নৈতিক আদর্শকে চরিত্রে ধারণ ও বাস্তবে রূপায়ণ প্রয়োজন। ব্যক্তি ও পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ জীবনধারণের জন্য ভালো আচরণ, ভালো রীতিনীতি, ভালো অভ্যাস রপ্ত ও পরিপালন আবশ্যক।

শুদ্ধাচার বলতে সাধারণভাবে নৈতিকতা ও সততা দ্বারা প্রভাবিত আচরণগত উৎকর্ষ বোঝায়। এর মধ্যে একটি সমাজের কালোত্তীর্ণ মানদণ্ড নীতি ও প্রথার প্রতি আনুগত্যও বোঝানো হয়। ব্যক্তি পর্যায়ে এর অর্থ হলো কর্তব্যনিষ্ঠা ও সততা তথা চরিত্রনিষ্ঠা। ব্যক্তির সমষ্টিতেই প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি হয় এবং তাদের সম্মিলিত লক্ষ্যই প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্যে প্রতিফলিত হয়। একজন মানুষের নৈতিকতা শিক্ষা শুরু হয় পরিবারে এবং শুদ্ধাচার অনুসরণের ক্ষেত্রে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। তার পরের ধাপে আছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। নৈতিক জীবন গড়ার ক্ষেত্রে যার ভূমিকা অপরিসীম। তৃতীয় ধাপে আছে তার কর্মস্থল। শুদ্ধাচার নির্ভর করে প্রাতিষ্ঠানিক দৃষ্টিভঙ্গি ও নৈতিক চর্চার ওপর।

জাতিসংঘের বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি নির্মূলের জন্য ফৌজদারি আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ, আন্তর্জাতিক আইনের মাধ্যমে দুর্নীতির প্রতিকার ছাড়াও দুর্নীতির ঘটনা যাতে না ঘটে তার জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া ‘রূপকল্প-২০২১’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রণীত ‘বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০১০-২০২১’-এ দুর্নীতি দমনের উদ্দেশ্যকে একটি আন্দোলন হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। এ আন্দোলনে দেশের সবাইকে অংশীদার হতে হবে। এ প্রেক্ষাপটে ১৮ অক্টোবর ২০১২ তারিখে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলপত্রটি চূড়ান্তভাবে অনুমোদিত হয়েছে। এ লক্ষ্যে রাষ্ট্র ও সমাজে কার্যকরভাবে ন্যায় ও সততা প্রতিষ্ঠা এবং সফলতার সঙ্গে দুর্নীতি প্রতিরোধ এবং শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠা, সরকারের একটি মূলনীতি।

এই কঠিন কাজটিকে তৃণমূল পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন

Nation must be united against corruption. Public opinion mobilize না করলে শুধু আইন দিয়ে করাপশন বন্ধ করা যাবে না।

১৯৭৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন,

সুখী ও সমৃদ্ধিশালী দেশ গড়তে হলে দেশবাসীকে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে উৎপাদন বাড়াতে হবে। কিন্তু একটি কথা ভুলে গেলে চলবে না, চরিত্রের পরিবর্তন না হলে এই অভাগা দেশের ভাগ্য ফেরানো যাবে কিনা সন্দেহ। স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি ও আত্মপ্রবঞ্চনার ঊর্ধ্বে থেকে আমাদের সবাইকে আত্মসমালোচনা, আত্মসংযম ও আত্মশুদ্ধি করতে হবে।

Add a Comment