বাংলাদেশের এনার্জি হাব

দেশে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহের লক্ষ্যে বেশ কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রধান বাণিজ্যিক জ্বালানি প্রাকৃতিক গ্যাসের জানা মজুত দ্রুত সংকুচিত হওয়ার কারণে আমদানি করা তেল, তরল গ্যাস (এলএনজি) ও কয়লা দিয়ে জ্বালানির চাহিদা মেটানোর চেষ্টা চলছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উল্লেখযোগ্য অংশ নির্মিত হচ্ছে উপকূল এলাকায়, প্রধানত জ্বালানি পরিবহনে সমুদ্র ও নদীপথ ব্যবহারের সুবিধা কাজে লাগানোর বিবেচনা থেকে। তাই কক্সবাজারের নিকটবর্তী মহেশখালী, পটুয়াখালীর পায়রা বন্দর এবং বাগেরহাটের মোংলা বন্দরসংলগ্ন অনেকগুলো বিদ্যুৎকেন্দ্র, এলএনজি, কয়লা ও এলপিজি আমদানি অবকাঠামো নির্মাণের হচ্ছে। মহেশখালী দ্বীপ ও পটুয়াখালীর কলাপাড়াকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রধান কেন্দ্র বা ‘এনার্জি হাব’ হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।

কিন্তু বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলের নদ-নদীগুলোর মধ্য দিয়ে অসংখ্য কয়লা, তেল ও এলএনজিবাহী নৌযানের নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করে সন্নিহিত এলাকার জীব ও জীববৈচিত্র্য এবং পরিবেশের ক্ষতি ন্যূনতম পর্যায়ে সীমিত রাখা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, পটুয়াখালীর কলাপাড়া-কুয়াকাটা বাংলাদেশের ইলিশ মাছের প্রধান বিচরণকেন্দ্র। সমুদ্রের মাছ ইলিশ এই অঞ্চলের নদ-নদীতে খাবারের জোগান ও অনুকূল পরিবেশ পায় বলে জাটকা থেকে ইলিশ হওয়ার সময়কালে ব্যাপকভাবে বিচরণ করে। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় কলাপাড়ায় ‘এনার্জি হাব’ গড়ে উঠলে তার বৈরী প্রভাব দূষণ সংবেদনশীল ইলিশসহ জলজ প্রাণীর ওপর ব্যাপকভাবে পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

একই কথা প্রযোজ্য সুন্দরবন এলাকার ডলফিনের অভয়ারণ্য বহাল রেখে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রসহ অন্যান্য শিল্পকারখানা পরিচালনার ক্ষেত্রেও। সুন্দরবনের চারপাশের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে ১৯০টি শিল্পকারখানা স্থাপন উদ্যোগের খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। পরিবেশগত সংবেদনশীলতার বিবেচনায় বিভিন্ন শ্রেণিভুক্ত এসব শিল্পকারখানার প্রভাব সুন্দরবনের পরিবেশে ও জীববৈচিত্র্যের জীবনাচরণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

Add a Comment