প্রাচীন বাংলা
|প্রাচীন ভারতবর্ষের অংশ হিসেবে বাংলাদেশের ভৌগোলিক পরিমণ্ডল ও পরিবেশ অনেকক্ষেত্রেই ভারতের অনুরূপ। বর্তমানে রাজনৈতিক মানচিত্রে দেশটির অনেকটাই ভারতের সীমানা দ্বারা পরিবেষ্টিত। সুরমা, মেঘনা, গঙ্গা ও ব্রক্ষ্মপুত্র বেসিনের কয়েকটি অঞ্চলের ভূমিরূপ ও স্তরবিন্যাসগত অবস্থান বিশ্লেষণ করে এ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ ক্ষেত্রে বিশেষত ভূতাত্ত্বিকভাবে নিওজিন সময়কালের শেলের ভূ-রাসায়নিক গঠনসহ নানাবিধ দিক বিশ্লেষণ করা হয়।
অনেক ইতিহাসবিদ, ভূগোলবিদ ও প্রত্নতাত্ত্বিকের মাঝে তথ্যগত ভুল ধারণা প্রচলিত ছিল যে, বাংলাদেশের ইতিহাস মূলত সমতল ভূমিতে বিকশিত হওয়া রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যের প্রতিচ্ছবি। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে
বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে যে, বাংলাদেশের ভূমিরূপের গঠন ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য অনেক প্রাচীন। বাংলাদেশের বেশিরভাগ স্থান
নদীতীরবর্তী পলল দিয়ে গঠিত হলেও লাল ল্যাটেরাইটিক মাটিও এদেশের বেশ কিছু স্থানে পাওয়া গেছে। উদাহরণ হিসেবে মধুপুর গড় কিংবা বরেন্দ্রভূিমর কথা বলা যায়। এ সকল ভূমিতে বিশেষত বরেন্দ্রভূমি বা মধুপুর অঞ্চলের মাটিতে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ও প্রাচীন সভ্যতার বৈশিষ্ট্যাবলি পাওয়া গেছে।
বিষয়টি আরো বিস্তৃত পরিসরে বোঝার জন্য পূর্ব বাংলার সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের বিস্তৃত সমতল ভূমির সাথে তুলনা করা যেতে
পারে। ভৌগোলিকভাবে বাংলা অঞ্চলের পশ্চিম দিকে ছোট নাগপুর অঞ্চল, তথাকথিত কষ্টিপাথর বা কালো ব্যাসল্ট পাথরের প্রাপ্তিস্থান রাজমহলের পাহাড়ি অঞ্চল এবং গাঙ্গেয় সমতল ভূমির একাংশ অবস্থিত। পূর্ব দিকে ত্রিপুরা, গারো ও লুসাই পর্বতমালা এবং সীমান্তবর্তী আরাকান ইওমা অঞ্চলের নতুন ভূিম। উত্তরে নবগঠিত হিমালয় অঞ্চল, শিলং মালভূমি
এবং নেপালের তরাই এলাকা; উত্তর-পূর্বে মেঘালয়ের প্রাচীন মালভূমি এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের বিশাল জলরাশি দিয়ে
বঙ্গীয় অবখাত অঞ্চলটির গোড়াপত্তন ঘটে।
প্রতিবছর পশ্চিম দিকে আনুমানিক ১৫ মিটার এবং ব-দ্বীপের মধ্যভাগে ২৫ মিটার সম্প্রসারণ ঘটতে দেখা যায়। অথচ
অতীতে এ সম্প্রসারণ অনেক বেশি ছিল যা প্রতিবছর প্রায় ৭৫ মিটার পর্যন্ত দেখা যেত। বঙ্গীয় অবখাতে ভূিমরূপের
প্রাচীনত্যের কথা বলতে গেলে ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনায় সবার আগে মধুপুর গড় ও বরেন্দ্র ভূমির কথা বলতে হয়।
এগুলো প্লাইস্টোসিন কালপর্বের পললায়নে লাল মাটির উঁচু ভূমি হিসেবে বিকশিত হয়। ভূতাত্ত্বিকদের বিশ্লেষণে এই
পললায়নের সময়কাল আনুমানিক ৪০ হাজার বছর বা ততোধিক। সাংস্কৃতিক উন্নয়নের কালপর্ব বিচার করতে গেলে বিগত
৪০ হাজার বছরে অর্থাৎ প্রস্তরযুগ থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ভৌত পরিবেশ বহুবার পরিবর্তিত হয়েছে। বরফ যুগের
পাশাপাশি আন্তঃবরফ যুগের বরফগলা পানির মাধ্যমে সৃষ্ট ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যসমূহ এদেশের জলবায়ুকে নানাভাবে
প্রভাবিত করেছে।