জাহানারা ইমাম
|জাহানারা ইমাম ১৯২৯ (নবম-দশম শ্রেণীর বাংলা বইয়ে ১৯২৩) সালের ৩রা মে মুর্শিদাবাদের সুন্দরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম সৈয়দা আব্দুল আলী। তিনি ডিপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। বিবাহিত জীবনে লেখাপড়ায় তিনি পুরকৌশলী স্বামী শরীফ ইমামের দিক থেকেও উৎসাহ ও আনুকূল্য পেয়েছিলেন। জাহানারা ইমাম ১৯৪৭ সালে কলকাতার লেডি ব্রেবোর্ণ কলেজ থেকে বি.এ. পাশ করেন। পরবর্তীতে তিনি ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী গালর্স স্কুলে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এড ও বাংলায় এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন এবং ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজে অধ্যাপনা করনে।
তাঁর দুই ছেলে- রূমি ও জামী। একাত্তরে তাঁর প্রথম পুত্র রুমী ছাত্রত্ব ত্যাগ করে দেশের মুক্তিসংগ্রামে অংশগ্রহণ করেন এবং কয়েকটি সফল গেরিলা অপারেশনের পর পাকিস্তানি মিলিটারির হাতে নিহত হন।রুমী ও তাঁর সহযোদ্ধাদের বিভিন্ন অপারেশনে জাহানারা ইমাম সহযোগিতা করেন। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়, খাদ্যের যোগান, গাড়িতে অস্ত্র আনা-নেওয়া এবং তা যুদ্ধক্ষেত্রে পৌঁছে দেওয়া, খবর আদান-প্রদান- ইত্যকার কর্মকাণ্ডে তিনি সর্বান্তকরণে অংশগ্রহণ করেন। যুদ্ধের শেষদিকে রূমী শহিদ হন। বিজয় লাভের পর রুমীর বন্ধুরা রুমীর মা জাহানারা ইমামকে সকল মুক্তিযোদ্ধার মা হিসেবে বরণ করে নেন। তখন থেকেই তিনি ‘শহীদ জননী’র মর্যাদায় ভূষিত।
জাহানারা ইমাম হন আমাদের শহিদ জননী। মুক্তিযুদ্ধের উপর স্মৃতিচারণমূলক তাঁর অসাধারণ এই ‘একাত্তরের দিনগুলি’ সর্বত্র সমাদৃত। তাঁর অন্যান্য গ্রন্থগুলো হলো :
শিশু সাহিত্য
গজকচ্ছপ (১৯৬৭)
সাতটি তারার ঝিকিমিকি (১৯৭৩)
বিদায় দে মা ঘুরে আসি (১৯৮৯)
মুক্তিযুদ্ধ
বীরশ্রেষ্ঠ (১৯৮৫)
একাত্তরের দিনগুলি (১৯৮৬)
অন্যান্য
অন্য জীবন (১৯৮৫)
জীবন মৃত্যু (১৯৮৮)
বুকের ভিতরে আগুন (১৯৯০)
নাটকের অবসান (১৯৯০)
দুই মেরু (১৯৯০)
প্রবাসের দিনলিপি (১৯৯২)
ক্যান্সারের সঙ্গে বসবাস (১৯৯১)
সাহিত্যকর্মে অবদানের জন্য তিনি বাংলা একাডেমী পুরস্কার লাভ করেন। একাত্তরের ঘাতক, দালাল, রাজাকার, আলবদর, আলসাম্শদের শাস্তির দাবিতে তিনি আমৃত্যু সংগ্রাম করেছেন। ১৯৯৪ সালের ২৬ শে জুন এই মহীয়সী নারী পরলোকগমন করেন।