সেক শুভোদয়া
|১২০১ থেকে ১৩৫০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ১৫০ বছর বাংলা সাহিত্যে অন্ধকার যুগ বলে পরিচিত। এই সময়ে রচিত সংস্কৃত ভাষার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ সেক শুভোদয়া। সংস্কৃত গদ্যপদ্যের সংমিশ্রণে রচিত ‘সেক শুভোদয়া’ও একটি চম্পুকাব্য। বাংলায় সেন বংশের শেষ শাসক রাজা লক্ষ্মণ সেনের সভাকবি হলায়ূধ মিশ্র রচিত এ কাব্য সম্পর্কে ড. মুহম্মদ এনামুল হক বলেছেন ‘সেক শুভোদয়া খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ শতাব্দীর একেবারেই গোড়ার দিককার রচনা।’ রাজা লক্ষ্মণসেন ও শেখ জালালুদ্দীন তাবরেজির অলৌকিক কাহিনী নিয়ে এটি রচিত। ‘শেখের শুভোদয় অর্থাৎ শেখের গৌরব ব্যাখ্যাই এই পুস্তিকার উদ্দেশ্য।’ গ্রন্থটিতে প্রাচীন বাংলার পীর মাহাত্ম্যজ্ঞাপক ৩টি বাংলা ছড়া বা আর্যা, খনার বচন এবং ভাটিয়ালী রাগের একটি প্রেম সঙ্গীত স্থান পেয়েছে। পণ্ডিত ও ইতিহাসকারদের মতে এগুলোই হচ্ছে বাংলা ভাষায় প্রাপ্ত পীর মাহাত্ম্যজ্ঞাপক কাব্যের প্রাচীনতম নিদর্শন।
সেক শুভোদয়া প্রেম সঙ্গীতঃ
হঙ জুবতী পতিএ হীন।
গঙ্গা সিনায়িবাক জাইএ দিন॥
দৈব নিয়োজিত হৈল আকাজ।
বায়ু ন ভাঙ্গএ ছোট গাছ॥
ছাড়ি দেহ কাজ্জ মুঞি জাঙ ঘর।
সাগর মৈদ্ধে লোহাক গড়॥
হাত জোড় করিঞা মাঙ্গো দান।
বারেক মহাত্মা রাখ সম্মান॥
বড় সে বিপাক আছে উপাএ॥
সাজিয়া গেইলে বাঘে ন খাএ॥
পুন পুন পাএ পড়িআ মাঙ্গো দান।
মৈদ্ধে বহে সুরেশ্বরী গাঙ্গ॥
শ্রীখাণ্ড চন্দন অঙ্গে শীতল।
রাত্রি হৈলে বহএ আনল॥
পীন পয়োধর বাঢ়ে আগ।
প্রাণ ন জায় গেল বহিঞা ভার॥
নয়ান বহিঞা পড়ে নীর নিতি।
জীএ ন প্রাণী পালাএ ন ভীতি॥
আশে পাশে স্বাস করে উপহাস।
বিনা বায়ুতেঁ ভাঙ্গে তালের গাছ॥
ভাঙ্গিল তাল লুম্বিল রেখা।
চলি যাহ সখি পলাইল শঙ্কা॥
‘সেক শুভোদয়া’র প্রেম সঙ্গীতটিতে প্রাচীন যুগের ব্যক্তি মানস এবং সমাজ চিত্রের সুস্পষ্ট প্রতিফলন ঘটেছে। এটিকে প্রাচীন বাংলা সাহিত্যের একমাত্র নিদর্শন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।