মনসামঙ্গল কাব্য
|মনসামঙ্গল কাব্যের চরিত্রঃ চাঁদ সওদাগর, বেহুলা, লখিন্দর।
মনসামঙ্গল কাব্যের কবিগণ
- নারায়ণদেব( ‘সুকবি-বল্লভ’)। তিনি মনসামঙ্গল কাব্যের সর্বশ্রেষ্ঠ কবি
- কানা হরিদত্ত মনসামঙ্গল কাব্যের আদি কবি।
- বিপ্রদাস পিপলাই এর মনসাবিজয়- যেখানে মনসার সম্পূর্ণ কাহিনী পাওয়া যায়।
- দ্বিজ বংশীদাস (উল্লেখ যে দ্বিজমাধব চণ্ডীমঙ্গল ও গঙ্গামঙ্গলের কবি) ।
- বিজয় গুপ্তের পদ্মাপুরাণ- যেখানের দেবতার চাইতে মানবকেই বড় করে দেখা হয়েছে।
- কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ, কবির আসল নাম কেতকাদাস ও ক্ষেমানন্দ তাঁর উপাধি।
বাইশা
মনসামঙ্গলের ২২ টি কবির রচিত কাব্যের বিভিন্ন অংশ নিয়ে রচিত সংকলন ২২ কবির মনসামঙ্গল বা বাইশা নামে পরিচিত।
মনসামঙ্গল কাব্যের মূল আখ্যানভাগ:
চম্পক নগরের অধীশ্বর বণিক চাঁদ সদাগর। তিনি শিবের মহাভক্ত। চাঁদ জগতপিতা শিবের থেকে মহাজ্ঞান লাভ করেছেন। মানুষের পূজা ব্যতীত দেবত্ব অর্জন সম্ভব নয়; তাই মনসা চাঁদের কাছে পূজা চাইলেন। শিবভিন্ন অপর কাউকে পূজা করতে চাঁদ প্রত্যাখ্যান করলেন। এমনকী তিনি মনসার ঘটে হেঁতালদন্ডের বাড়ি মেরে মনসার কাঁকাল ভেঙ্গে দেন। পরিণামে মনসা কৌশলে চাঁদের মহাজ্ঞান হরণ করেন এবং ছয়পুত্রকে বিষ দিয়ে হত্যা করেন।
তারপর সমুদ্রপথে চাঁদের বাণিজ্যতরী সপ্তডিঙা মধুকর ডুবিয়ে চাঁদকে সর্বস্বান্ত করেন। চাঁদ কোনক্রমে প্রাণরক্ষা করেন। মনসা ছলনা করে স্বর্গের নর্তকদম্পতি অনিরুদ্ধ-ঊষাকে মর্ত্যে পাঠালেন। অনিরুদ্ধ চাঁদের ঘরে জন্মাল লখিন্দর রূপে, আর উজানী শহরে সাধু-বণিকের ঘরে বেহুলা রুপে ঊষা জন্ম নিল। বহুকাল পর চাঁদ সহায়-সম্বলহীনভাবে চম্পক নগরে উন্মত্ত পাগল বেশে করিল গমন। অবশেষে পিতা-পুত্রের মিলন ঘটল। বেহুলার সাথে লখিন্দরের বিবাহ স্থির হল। মনসা বৃদ্ধাবেশে এসে ছল করে বেহুলাকে শাপ দিল, বিভা রাতে খাইবা ভাতার। সাতালি পর্বতে লোহার বাসরঘর বানান হল। কিন্তু গোপনে মনসার নির্দেশে একটি ছিদ্র রাখা হল। ছিদ্র পথে কালনাগিনী ঢুকে লখাইকে দংশন করল। বেহুলা স্বামীর মৃতদেহ নিয়ে কলার মাজসে ভেসে পাড়ি দিল মনসার উদ্দেশ্যে। বহু বিপদ অতিক্রম করে অবশেষে নেতো ধোবানির(মনসার সঙ্গী) সাহায্যে দেবপুরে পৌছে নাচের মাধ্যমে দেবতাদের তুষ্ট করল। তখন দেবতাদের আদেশে মনসা লখীন্দরের প্রাণ ফিরিয়ে দিল।বেহুলার সতীত্বের মহিমায় মুগ্ধ হয়ে অবশেষে চাঁদ মনসার পুজো দিল। মর্ত্যবাসের মেয়াদ ফুরাতে বেহুলা-লখীন্দর আবার ইন্দ্রসভায় স্থান পেল।