দৌলত কাজী
|দৌলত কাজী (কাজী দৌলত নামেও পরিচিত), ছিলেন মধ্যযুগের একজন বাঙালি কবি। তিনি ১৭শ শতাব্দীর প্রারম্ভে কোন এক সময় চট্টগ্রাম জেলার রাউজান পৌরসভার ওয়ার্ড-০৪, সুলতানপুরের কাজী পাড়ায় জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি আরাকান রাজসভার প্রথম বাঙালি কবি ছিলেন, যদিও তাঁর লেখার ভাষা ছিলো বাংলা। মধ্যযুগের অন্যান্য কবিদের মত তাঁর কাজে তাঁর পৃষ্ঠপোষক সম্পর্কে বর্ণনা থাকলেও নিজের সম্পর্কে তিনি কিছুই লিপিবদ্ধ করে যাননি। তিনি সতীময়না ও লোরচন্দ্রানী কাব্য রচনা করে বাংলার শক্তিমান কবিদের মাঝে নিজের অবস্থান করে নিয়েছেন। বাংলা কাব্যে ধর্মনিরপেক্ষ প্রণয়কাহিনীর তিনি পথিকৃৎ। সম্ভবত ১৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। গবেষকদের মতে আরাকান রাজ্যের আকিয়াবের কোনো এক স্থানে তার কবর রয়েছে।
দৌলত কাজী অল্প বয়সে নানাশাস্ত্রে সুপন্ডিত হয়ে উঠেন। নিজের দেশে স্বীকৃতি লাভে ব্যর্থ মনোরথ হয়ে তিনি আরাকানে ভাগ্য অন্বেষনে যান। সে সময়কালে চট্টগ্রামবাসী জীবিকা অর্জনের জন্য আরাকানে যেতেন। আরাকান রাজসভায় তখন বহু কবি এবং জ্ঞানী লোকের ভিড় ছিল। রাজার প্রধান উজির আশরাফ খান একদিন হিন্দি ভাষার কবি মিয়া সাধন রচিত “সতী ময়না” কাহিনী শুনতে চান। দৌলত কাজী পাঞ্চালীর ছন্দে সতী ময়নার কাহিনী বর্ননা করে সকলের প্রশংসা অর্জন করেন এবং আরাকান (রোসাঙ্গ) রাজ দরবারে কবিদের সভায় মধ্যে গৃহীত হন এবং সেখানে মর্যাদা লাভ করেন।
মিয়া সাধন নামক একজন হিন্দি ভাষী মুসলিম কবি রচিত “মৈনাসত” (কাব্যটি আসলে ‘ঠেট গোহারি’ বা একধরনের গ্রাম্য হিন্দি ভাষায় লেখা) নামক কাব্যই ছিল কবি দৌলত কাজীর “সতী ময়না ও লোর চন্দ্রানী” কাব্য রচনায় আদর্শ। এই কাব্যের সঠিক রচনাকাল জানা যায়নি। তবে অনুমান করা হয় ১৬২২ থেকে ১৬৩৮ সালের মধ্যে এই কাব্য রচনা করা হয়েছিল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই মহাকাব্য সমাপ্ত হওয়ার আগেই তিনি মৃত্যুবরন করেন। কবির মৃত্যুর ২০ বছর পরে ১৬৫৯ সালে কবি আলাওল(আনুমানিক ১৫৯৭-১৬৭৩) কাব্যের শেষাংশ রচনা করেন।
বাংলার সঙ্গে সঙ্গে ব্রজবুলি ভাষায় ও তার বিশেষ দখল ছিল। তিনিই একমাত্র বাংলা ভাষার কবি, যিনি তার রচনা দিয়ে প্রমান করেছেন দেব-দেবীকেন্দ্রিক কাহিনী উপজীব্য না করেও ব্রজবুলি ভাষার সার্থক ব্যবহার করা সম্ভব।দেব-দেবীদের স্তুতি, ও অলৌকিক কাহিনির বৃত্ত থেকে বেড়িয়ে বাংলা সাহিত্যে প্রথম তিনিই লৌকিক কাহিনি রচনা করেন। (২৭তম বিসিএস প্রিলিমিনারি)