গ্রন্থ সমালোচনা

নিচে গ্রন্থ সমালোচনার নিয়ম দেওয়া হল। কোন বই পড়া থাকলে, নিয়মগুলো জেনে একজন সহজেই গ্রন্থটির সমালোচনা লিখতে পারবনে। নিয়ম ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ কিছু গ্রন্থের সমালোচনার তালিকা পাবেন এখানে। তবে হ্যাঁ এখানে পেশাদারিত্বমূলক সমালোচনা না থাকলেও গ্রন্থটি সারসংক্ষেপ পাবেন, যা পড়ে আপনি নিজেই সমালোচনা লিখতে পারবেন।

সমালোচনা কথাটির আক্ষরিক মানে হল সমান সমান আলোচনা। যেখানে যুগপৎ ভালো ও খারাপ দিক থাকবে। অর্থাৎ একপেশে হবে না। গ্রন্থ সমালোচনা দু ধরনের হতে পারে।

১. বর্ণনামূলক সমালোচনাঃ এতে গ্রন্থটিতে সন্নিবেশিত তথ্যের ও বৈশিষ্ট্যের সমালোচনা করা হয়। প্রয়োজনীয় অংশ উদ্ধৃত করে লেখকের উদ্দেশ্যের আলোকপাত করা হয়।

২. বিশ্লেষণাত্মক সমালোচনাঃ বিশ্লেষণাত্মক সমালোচনায় গ্রন্থটিকে সাহিত্যের মানদণ্ডে বিচার করা হয়। নাটক, গল্প, উপন্যাস, ছোট গল্প হিসাবে সার্থকতা যাচাই করা হয়। পাশাপাশি ভাষাগত ও ব্যাকরণিক দোষ ত্রুটিও দেখা হয়।

করণীয়

  • প্রথমে বইটি পড়বেন(এক বা একাধিকবার) ও প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো নোট করবেন। ও কিছু কিছু অংশ হাইলাইট করবেন বা দাগাবেন।
  • প্রথমে বইয়ের নেগাটিভ দিক গুলো আলোচনা করবেন ও পরে ভালো দিক গুলো আলোচনা করতে পারেন। যাতে পাঠক ভালো দিকগুলো বেশি মনে রাখতে পারে। আর অনেকের ক্ষেত্রে মানুষ শেষে যা পড়ে তা বেশি মনে রাখে।
  • বই থেকে আপনি কিছু কথোপকথন বা কিছু অংশ তুলে ধরতে পারেন।
  • অনুরূপ অন্যবই পড়লে তার সাথে মিল অমিল উল্লেখ করতে পারেন।
  • সম্ভব হলে সম্পূর্ণ গল্পের জন্য এক শব্দের সার সংক্ষেপ করুন যেমন ধরুন হৈমন্তি গল্পের জন্য ‘যৌতুক’ সার সংক্ষেপ করলেন। তারপর মূল গল্প অবলম্বনে আলোচনা এগিয়ে নিলেন।
  • গ্রন্থের নাম করণের সার্থকতা বিবেচনা করা।
  • গ্রন্থটি যে সাহিত্য প্রকরণে রচিত, তার সার্থকতা বা ব্যর্থতা কোথায়?
  • কাহিনী বিন্যাস ও চরিত্র চিত্রণে লেখক কতখানি পারঙ্গমতা
    দেখিয়েছেন।
  • গ্রন্থটির বিষয় বস্তু লিখিত সময়ের স্থান কাল পাত্রের সাথে যায় কি না, বা বর্তমানেও প্রাসঙ্গিক কি না তা বিবেচনা করবেন।
  • গন্থটিতে ভাষাগত দুর্বোধ্যতা বা দুর্বলতা আছে কি না তা বিবেচনায় নেওয়া।
  • কাহিনীর উত্থান পতন কিভাবে ঘটেছে তা দেখা।
  • লেখক সমাজের কোন দিকটি তুলে ধররায় প্রয়াস পেয়েছেন তা দেখানো।
  • রচনাটির দার্শনিক ভাষ্য কি।
  • লেখক কি বিশেষ কোন দিক, গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়কে ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছেন।

সমালোচনার অংশঃ
অনেক সমালোচনায় তিনটি অংশ ত থাকতে পারে । এ তিনটি অংশের সাথে ইচ্ছা করলে বইয়ের সামারি ও যোগ করতে পারেন।

  1. চরিত্রের পরিচিতি
  2. চরিত্রদের মাঝে দ্বন্দ্ব
  3. ও কিছু প্রশ্ন। এখানে প্রশ্ন বলতে কিছু মন্তব্য ও হতে পারে।

নেগাটিভ আলোচনা
যেগুলো আপনার ভালো লাগেনি। বা অন্যভাবে উপস্থাপন করা উচিৎ বলে মনে করেন। সে কথাগুলো এভাবে শুরু করতে পারেন, বইটি আমার কাছে আরও ভাল লাগত যদি…; আমি এটি অনেক ভালো বলাতাম যদি…; আমি মনে করি এই বইটি — দিকটি একটু হালকা ভাবে এসেছে…; আমি হতাশ/চিন্তিত হয়েছে যে … , গল্পটি আরও ভালো হত যদি…

পজিটিভ আলোচনা
এ অংশে আপনার কাছে যা যা ভালো লেগেছে, ভালো মনে হয়েছে তা উল্লেখ করবেন। যে চরিত্র বা যে অংশ ভালো লেগেছে তা বলবেন। এভাবে শুরু করতে পারে, আমি বইটি উপভোগ করেছি কারন… ; বইটি — এই দিক টি আমার কাছে বিশেষভাবে ভালো লেগেছে… ; আমি প্রশংসা করি যে … ; বইটির এ কারনে প্রশংসার দাবিদার যে… ; আমার কাছে সব থেকে আকর্ষণীয় মনে হয়েছে যে …

মিশ্র প্রতিক্রিয়া
মিশ্র প্রতিক্রিয়ায় ভালো দিক খারাপ দিক উভয়ই থাকে। এ অংশ এভাবে শুরু করতে পারে। যদিও বইটির এ অংশটি আমার কাছে বিরক্তিকর মনে হয়েছে তারপর — এ দিকটি আমার কাছে খারাপ লাগেনি।

মনে রাখবেন
আক্রমণাত্নক না হয়ে নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে সমালোচনা করবেন।
যথা সম্ভব সুভাষণ/মঞ্জুভাষন(Ephemism) ব্যবহার করবেন। যেমন- “তারা যৌন সঙ্গম করেছে” এভাবে না বলে “তারা অবৈধভাবে ঘনিষ্ঠ হয়েছে” বলা যেতে পারে।
চমকপ্রদ সূচনাকারী বক্তব্য দিয়ে শুরু করে ধীরে ধীরে বর্ণনা, বিশ্লেষণ, মূল্যায়ন ও ব্যাখা প্রদান করবেন।

সাধারণ গ্রন্থ সমালোচনার গঠন

গল্প সংক্ষেপ

গল্পের বর্ণনাঃ গল্পের কথক কে? গল্পটি কোন পুরুষে লিখিত?
গল্পের কথকের দেওয়া তথ্য কতোখানি সত্য।

গল্পের সংগঠনঃ কোন সময় ও পরিস্থিতিতে লিখিত? তা বিবেচনায় নিয়ে এর প্রভাব আলোচনা

মূল বিষয়ঃ গ্রন্থের মূল বিষয় বা বার্তা কি?

সাহিত্য ধারাঃ সাহিত্যের কোন ধারা অনুসৃত হয়েছে, কবিতা, গদ্য, গল্প, নাটক, মিলনাত্মক, বিয়োগাত্মক ইত্যাদি। এই ধারার অন্যান্য সাহিত্যের সাথে এর সাদৃশ্য বৈশাদৃশ্যগুলো কি কি?

লেখকঃ

  • লেখকের নাম। তাঁর পূর্ব গ্রন্থ ও আলোচনায় আসতে পারে। এবং সেগুলোর সাথে তুলোনা ও করা যেতে পারে।
  • তাঁর লেখার ধরন কেমন, বঙ্কিমী স্টাইল, রবি-নজরুল, শরৎ, হিমু স্টাইল, উপমা, অলঙ্কার, যমক, অনুপ্রাস, বা ব্যাঙ্গ ধর্মী কেমন বা কিভাবে তিনি লেখেন।
  • লেখকের শব্দ চয়ন কেমন, সহজ সরল, জটিল, অপ্রচলিত, সংস্কৃত বা বিদেশি শব্দ বেশি ইত্যাদি।
  • লেখক কিভাবে কাহিনির মধ্যে প্রবেশ করেছেন কিভাবে কাহিনির, কিভাবে কাহিনীর ক্লাইম্যক্সে পৌঁছেছেন, তাকে কিভাবে প্রশমিত করেছেন ইত্যাদি।

গল্পের আখ্যান ভাগঃ অল্প পরিসরে গ্রন্থের আখ্যানভাগের সারাংশ।

মূল্যায়নঃ বই টি সম্পর্কে আপনার বিশ্লেষণ ধর্মী মূল্যায়ন তুলে ধরবেন।

আপনার মতামতঃ গ্রন্থ সমালোচনার এটি সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

  1. গ্রন্থটি কি আপনার ভালো লেগেছে? লাগলে কেন?
  2. আপনার কি ভালো লাগেনি? না লাগলে কেন?
  3. এই লেখকের কি অন্য বই পড়বেন? পড়লে কেন? না পড়লেই বা কেন>
  4. আপনি কি এই বইটি অন্যদের পড়তে উৎসাহ দেবেন? কেন?

গুরুত্বপুর্ণ কিছু বইয়ের সমালোচানা

Add a Comment