ছাপাখানা

বাংলাদেশে প্রথম কোথায় ও কবে ছাপাখানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল? (৩৪তম বিসিএস লিখিত)

একটি ছাপাখানা বা প্রিন্টিং প্রেস বলতে কোন লেখা বা ছবিকে যন্ত্রের মাধ্যমে কাগজে উপস্থাপন করাকে বুঝানো হয়। বিশাল পরিমাণে এবং অল্প সময়ে অনেক বেশি মূদ্রন করার জন্যই ছাপাখানার ব্যবহার হয়ে থাকে। সাধারণত বিভিন্ন গ্রন্থ বা এর লেখা ছাপার জন্যই ছাপাখানা ব্যবহার হয়ে থাকে। যাবতীয় বই, পত্রিকা, বিজ্ঞাপন প্রচার পত্র সবই এই ছাপা খানার অবদান। ছাপাখানার উদ্ভাবন ও ছড়িয়ে যাওয়া ছিলো দ্বিতীয় সহস্রাব্দের সবচেয়ে যুগান্তকারী ঘটনা। মানুষ কিভাবে সমাজে বসবাস করছে, তাদের বিভিন্ন বিপ্লব ও উত্থান-পতন ছাপার মাধ্যমেই তুলে ধরতে শুরু করে এবং সেখান থেকেই আধুনিক যুগের সূচনা।

মুদ্রণ শিল্প প্রযুক্তি হিসেবে সর্বপ্রথম ভারতে চালু করেন পর্তুগিজগণ। প্রথম মুদ্রণযন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় গোয়ায়। এরপর মুদ্রণ প্রযুক্তি বোম্বাইয়ে চালু হয় ১৬৭০ সালে। ইউরোপীয় মিশনারিদের প্রচেষ্টায় ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে ছাপাখানা চালু হয়। এই সকল ছাপাখানার অধিকাংশই অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ ভাগে ও ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে স্থাপিত হতে থাকে। পর্তুগিজ ধর্মপ্রচারকগণ লিসবন থেকে রোমান হরফে বাংলা বই ছাপিয়ে আনেন। । এসব বাংলা মুদ্রণ ছিল তামার পাতে, তখনও বাংলা অক্ষর ঢালাইয়ের কোন ব্যবস্থা হয়নি। মুদ্রণের জন্য বাংলা অক্ষরের নকশা প্রথম প্রস্ত্তত করেন চার্লস উইলকিন্স। তাঁর ডিজাইনকৃত অক্ষরে ছাপা হয় নাথানিয়েল ব্রাসি হ্যালহেড রচিত A Grammar of the Bengal Language (১৭৭৮) গ্রন্থটি।

১৮৪৮ সালে রংপুরে প্রথম ছাপাখানা ‘বার্তাবহ যন্ত্র’ প্রতিষ্ঠিত হয়। এখান থেকে ‘রংপুর বার্তাবহ’ নামক সংবাদ পত্র প্রকাশিত হত। এর সম্পাদক ছিলেন গুরুচরণ রায়।

১৮৬০ সালে ঢাকায় কিছুটা বড় আঙ্গিকে একটি বাংলা ছাপাখানা প্রতিষ্ঠিত হয়। সাধারণভাবে ‘বাঙ্গালা যন্ত্র’ নামে এর পরিচিতি ছিল। এই ছাপাখানা প্রতিষ্ঠায় ব্রজসুন্দর মিত্র, ভগবান চন্দ্র বসু প্রমুখের নাম জড়িয়ে আছে। একটি ছাপাখানাকে কেন্দ্র করে শিক্ষা ও সাহিত্যচর্চার বিকাশ ঘটে থাকে। ঢাকার এই বাঙ্গলা যন্ত্রও তৎকালে ঢাকার সাহিত্যচর্চায় বিশেষ প্রণোদনা দিয়েছিল। এই বাঙ্গালা যন্ত্রে ১৮৬০ সালে দীনবন্ধু মিত্রের ‘নীল দর্পণ’ ছাপা হয়। ছাপাখানাটির সঙ্গে ঢাকার সাহিত্য বিকাশের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। ঢাকার প্রথম সাহিত্য পত্রিকা ‘কবিতাকুসুমাবলী’ এই প্রেস থেকেই ছাপা হয়। ‘ঢাকা প্রকাশ’ ছিল সে যুগে ঢাকার বিখ্যাত সংবাদ সাময়িকী। ঢাকা প্রকাশের অফিসও ছিল বাঙ্গালা যন্ত্রের কার্যালয়ে।

১৮৬০ সালে বাংলা প্রেস বা বাংলা যন্ত্র নামে ঢাকায় দ্বিতীয় ছাপাখানা প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রতিষ্ঠাতা ব্রজসুন্দর মিত্র। ১৮৬৬ সাল পর্যন্ত ঢাকা মাত্র তিনটি ছাপাখানা ছিল। আর একটি প্রাচীন ছাপাখানা ছিল ফরিদপুরে। সেখান থেকে বাংলা ‘অমৃত বাজার’ পত্রিকা প্রকাশিত হতো।

১৮৮৪ সালে সর্বপ্রথম সাইফ-উদ-দোহা শহীদ বাংলা বর্ণের ডিজাইন করলেন অ্যাপল ম্যাকিন্টোশ কম্পিউটারে। ১৯৮৬ সালে মাইনুল আর এক ধাপ অগ্রসর হয়ে বাংলা বর্ণের ডিজাইন করলেন। নাম দিলেন মাইনুল লিপি। এরপর ১৯৯৪ সালে মোস্তফা জব্বার অ্যাপল ম্যাকিন্টোশ কম্পিউটারে নতুন কিবোর্ডে বাংলা বর্ণ তৈরি করলেন। যা এখন পর্যন্ত বেশ জনপ্রিয় ও সর্বাধিক ব্যবহূত।

১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর পূর্ব বাংলায় যে মুদ্রণ শিল্পের অস্তিত্ব ছিল তা ছিল নিরান্তই খুদ্রাকৃতির। তখন অধিকাংশ প্রকাশনা কলকাতা থেকে প্রকাশিত হত। ক্রমে ঢাকায় নিজের প্রয়োজনে আধুনিক ছাপাখানা প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে।

Add a Comment