মানব উন্নয়ন সূচক
|জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি ১৯৯০ সালে মানব উন্নয়ন সূচক (Human Development Index) প্রবর্তন করে। এই সূচকের ভিত্তি অমর্ত্য সেনের সক্ষমতা তত্ত্ব। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির কর্মকর্তা, অর্থনীতিবিদ মাহবুবুল হক অমর্ত্য সেনের পরামর্শ নিয়ে মানব উন্নয়ন সূচক প্রবর্তন করেন। এই সূচকে তিনটি উপাদান বিবেচনা করা হয়। প্রথম মাথাপিছু আয়, দ্বিতীয় গড় আয়ুর প্রত্যাশা, তৃতীয় শিক্ষার ক্ষেত্রে অর্জন। কিন্তু এই তিনটি উপাদান একই গুরুত্ব (৩৩.৩৩%) দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে মাপা হয়। মাথাপিছু আয় স্থানীয় মুদ্রায় হিসাব করা হয়। গড় আয়ুর প্রত্যাশা বছরের ভিত্তিতে হিসাব করা হয়। আর শিক্ষার ক্ষেত্রে সাক্ষরতার হার এবং স্কুলের ভর্তির হার শতকরা সংখ্যার ভিত্তিতে মাপা হয়। এই তিনটি উপাদানকে একটি যৌগিক পরিমাপে অন্তর্ভূক্ত করার জন্য উপাদান সমূহকে শূন্য থেকে সর্বোচ্চ একের মধ্যে একই স্কেলে রূপান্তর করে পরিমাপ করা হয়।
এই সূচকের কিছু দুর্বলতা আছে যেমন- এখানে মানব উন্নয়নের অনেক নিয়ামক অন্তর্ভূক্ত হয়নি, এই সূচকে পুষ্টির বঞ্চনা আদৌ বিবেচনা করা হয় না, লিঙ্গ সমতা অনুপস্থিত। এখানে তিনটি উপাদানকেই সমান গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হয়। যদি উপাদানগুলোর গুরত্ব কম বেশি হয় তখন মানব উন্নয়ন সূচকের মানও ভিন্ন হবে। একটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টা বোঝা যাক। সাধারণ হিসাবে তিনটিকেই ৩৩.৩৩% গুরুত্ব দেওয়া হয়। এখন ধরা যাক শিক্ষার হারকে ৩০% মাথাপিছু আয়কে ৫০% ও গড় আয়ুর প্রত্যাশাকে ২০% গুরুত্ব দেওয়া হলো। এখান থেকে দেখা যায় মাথাপিছু আয় বেশি হলেও কম আয়ুর কারণে সে আয় বেশিদিন ভোগ করা সম্ভব নয়। তাই ড. আকবর আলী খান মানব উন্নয়ন সূচকে একটি জোড়াতালি দেওয়া যৌগিক সংখ্যা বলেছেন। মানব উন্নয়ন সূচকের প্রবক্তারা নিজেরাই স্বীকার করেন যে মানব উন্নয়ন সূচক একটি অতি প্রয়োজনীয় কিন্তু অসম্পূর্ণ সূচক।
২০১৯ সালে বাংলাদেশ মানব সূচক উন্নয়নে পৃথিবীর মধ্যে ১৩৫তম স্থান অধিকার করে। বাংলাদেশের পয়েন্ট ০.৬১৪, যেখানে মাথাপিছু আয় ৪,০৫৭ পিপিপি ডলার। স্কুল শুরুর গড় বয়স ৬.১০ বছর। গড় আয়ু ৭২.৩ বছর।