নিরীক্ষা ও হিসাব

অনেকেই প্রশ্ন করেন, অডিট এন্ড একাউন্টস (Audit and Accounts ) সম্পর্কে তেমন কিছু জানেন না। চেষ্টা করবো সিনিয়র স্যারদের সাথে কথা বলে এবং নিজের কিছু ধারনা থেকে এই ক্যাডারের আদ্যোপান্ত জানানোর জন্য। অডিট ক্যাডার সম্পর্কে ভালো লাগার কিছু দিক সমূহঃ
যে যে কারনে আপনি বিসিএস অডিট এন্ড এ্যাকাউন্টস কে আপনার চয়েজ লিস্টে প্রধান্য দিবেন-

  • এই ক্যাডারকে দেশের Financial Administration এর দায়িত্ব দেয়া হয়। অডিট করবেন সকল সরকারি অফিস আদালতে, কর্মচারী কর্মকতাদের সরকারি হিসেবে। তাই অন্য ক্যাডারদের আলোচনার কেন্দ্রে থাকবেন আপনি এবং আপনার অডিট এন্ড এ্যাকাউন্টস ক্যাডার।
  • প্রত্যেক বিসিএস থেকে ১৫ থেকে ৩০ জন করে বিসিএস (অডিট এন্ড একাউন্টস) পদে নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে। (এন্ট্রি পোস্ট ১০৪ টি)।সুতরাং প্রমোশন যে অনেক দ্রুত ই হবে, সেটা সহজে ই বোঝা যায়। বর্তমানে রিস্টাকচারের একটা সিদ্ধান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে, যেটা হয়ে গেলে এই ক্যাডার আপনার কাছে অপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্যাডার হবে নিসঃন্দেহে।
  • ক্যারিয়ার ডেভলপমেন্টের জন্য দেশে এবং বিদেশে উচ্চতর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকে। আপনি সহজেই স্কলারশিপ নিয়ে আপনার ক্যারিয়ারকে আরো এগিয়ে নিতে পারবেন।
  • অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ পাওয়া যায়। যে কোন সেমিনার, সিম্ফোজিয়ামে অংশ গ্রহনে প্রায়ই দেশে কিংবা বিদেশে থাকতে হবে।
  • দাতা সংস্থাগুলোর সাথে সরাসরি কাজের সুযোগ পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে আপনি বিশ্ব ব্যাংক, আই এম এফ, এ ডি বি এর কনসালটেন্ট হিসেবে কাজ করতে পারবেন সহজেই। সম্মনজনক এবং সংশ্লিষ্ট কাজের সিদ্ধান্ত গ্রাহক হিসেবে কাজ করা যায়।

  • কর্মজীবনে কখনো রাজধানী ঢাকার বাইরে যেতে হয় না। যদি বিভাগীয় পর্যায়ে পোস্টিং দেয়, তাহলে সেখানের উচ্চ পর্যায়ে থাকবেন।
  • সিভিল (মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তর), আর্মি এবং রেলওয়েতে এই ক্যাডারদের পোষ্টিং দেওয়া হয়। সকল পর্যায়ে আপনি গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকবেন।
  • ৯-৫ টা অফিস, যা এখন সব সরকারি-বেসরকারি অফিসারদের স্বপ্নের কর্মঘন্টা। যা আপনি এখানে পাবেন।

  • এই ক্যাডারে উপজেলা পর্যন্ত অফিস আছে, সুতরাং আপনার নেটওয়ার্ক অনেক সমৃদ্ধ বুঝতেই পারছেন।
  • অনেকেই বাইরে থেকে এই ক্যাডার সম্পর্কে তেমন কিছু জানেন না, তাই চয়েজলিস্টে দিবেন কিনা এ নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় থাকেন। তবে এই ক্যাডারে প্রেসার ফ্রি, দায়িত্ব, সম্মান নিয়ে সমাজে থাকতে পারবেন।

১) বিসিএস অডিট ক্যাডারে আপনাকে সিভিল (সকল সরকারি অফিস), মিলিটারি এবং রেলওয়ে ডিপার্টমেন্ট-এর অডিট করতে হবে। সাথে ত একাউন্টস আছেই।

২) বাংলাদেশের যে কয়টি মিশন বিদেশে আসছে, তাদের অডিট ও আপনি করবেন। ৪০ দিনের ট্যুরে আপনি প্রতিবার ২ টি দেশের মিশন অডিট করবেন। এখানে ভালো একটা সেভিংস থাকে। স্বাভাবিকভাবে এমন করে ৮/১০ টা মিশন অডিট পাবেন (৮/১০*২=১৬/২০ টা দেশ)।

৩) আপনি স্কলারশিপ ত পাবেন বিভিন্ন নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

৪) এই ক্যাডারে আপনাকে যেমন নিজ সার্ভিস সম্পর্কে জানতে হবে তেমনি অন্যান্য সার্ভিসকে (সিভিল, ডিফেন্স এবং রেলওয়ে) যেহেতু অডিট করবেন, তাদের সম্পর্কে আদ্যপ্রান্ত অর্থাৎ তাদের পেটের খবর জানবেন।

৪) যখন আপনি সিভিল, মিলিটারি এবং রেলওয়েতে অডিট করবেন, বিভিন্ন উচ্চ পদস্থ কর্মকতাদের সাথে প্রতিনিয়ত দেখা হবে। তাদের সাথে সু-সম্পর্কে আপনার নেটওয়ার্ক অনেক বড় হবে।

৫) প্রতি বিসিএস এ অডিট ক্যাডারে নিয়োগ কম হয়। বর্তমানে সরকারের সচিব পর্যায়ে প্রায় ৩/৪ জন আছেন এই ক্যাডার থেকে। মনে করুন, অডিট ক্যাডারের ১৫ জন থেকে ৬/৭ জন সচিব (গত বছর ছিলো) হলো, আপনি যদি সচিবালয়ে সচিব পদে যেতে নাও চান, আপনি তখন আপনার অডিট ক্যাডারে সিনিয়র থাকবেন, যেটা অনেক বড় কিছু।

৬) কর্মজীবনে কমপক্ষে ২০/২৫ টি দেশে ফরেন ট্যুর পাবেন। বেশি হলে ৪০+ দেশ।

৭) কর্ম পরিবেশ চমৎকার, প্রমোশন গ্রথ ভালো। আপনি সিনিয়র হলে আপনি প্রমোশন পাবেন, জুনিয়র কেউ নয়। পিএসসির মেরিট অনুযায়ী প্রোমোশন পাবেন, অন্যান্য ক্যাডারদের মত আগে পরে কেউ পাবে না।

৮) শুক্রবার, শনিবার আপনাকে অফিসের কোন কাজের প্রেসার নিতে হবে না। ৯-৫ টা চাকরি করে আপনি আপনার জীবনকে উপভোগ করতে পারবেন।

৯) কোন রকম রাজনৈতিক প্রভাব নেই, প্রমোশন পাবেন যোগ্যতায় ও মেরিটে।

১০) একটু পড়ালেখা করতে হবে, তবুও এই লেখাপড়া আপনার সেভিংস হিসেবে ভবিষ্যতে কাজে আসবে। জাতিসংঘ থেকে শুরু করে অনেক স্যাররা রিটায়ার্ডমেন্টের পরেও বিভিন্ন সনামধন্য প্রতিষ্ঠানে উচ্চ বেতনে সম্মানজনক পদে আছে।

১১) মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর, পরিদপ্তর, বিভাগ, উপবিভাগের সকল কর্মকতা, অফিসারের সাথে ভালো সম্পর্ক স্থাপনে এই ক্যাডার অদ্বিতীয়।

১২) অডিটের একাউন্টিং সার্কেল ৩ টা। যেমনঃ

1. সকল মিনিষ্ট্রি (প্রতিটা মিনিষ্ট্রিতে যাবতীয় হিসাবনিকাশ/বিল পাস থেকে শুরু করে সব কাজের জন্য একজন CAO এর নেতৃত্বে একটি অফিস সেট আপ আছে। এই সব সিএও এর প্রধান হলেন সিজিএ স্যার।)

2. ডিফেন্স (আর্মি, নেভি, বিমানবাহিনী, যত সব গোয়ান্দা সংস্থা, ডিফেন্স ক্রয় সব কিছুর জন্য আলাদা আলাদা অডিটের অফিস আছে)

3. রেলওয়ে (পূর্ব ও পশ্চিম অংশে ভাগ করে FA&CAO স্যারদের নেতৃত্বে অফিস সেট আপ আছে। রেলের সব হিসাব নিকাশ, ক্রয় সব কিছুর আর্থিক পরামর্শ দেন আমাদের অফিস)

***এই একাউন্টিং সার্কেল ৩ টি নিয়ে বিস্তারিত নতুন পর্বে আলোচনা করবো।

এক কথায় আপনি আপনার এই ক্যাডারকে ভালোবাসতে বাধ্য হবেনই।

চাকরি ত ৫/১০ বছরের জন্য নয়, চাকরি করবেন আগামি ২৫/৩০ বছর। সকল দিক বিবেচনায় রেখে সিদ্ধান্ত নিবেন আপনি।
শুভ কামনা আপনার আগামী দিন গুলোর জন্য।

লিখেছেন-


জেনিথ আলম
সহকারী মহা-হিসাবরক্ষক
বিসিএস অডিট এন্ড একাউন্টস (৩৬ তম বিসিএস)
অর্থ বিভাগ, অর্থ মন্ত্রনালয়।

Add a Comment