শক্তিসাম্য

শক্তিসাম্য(Balance of Power): ১৬৪৮ সালে ওয়েস্টফেলিয়া চুক্তি স্বাক্ষরের পর যখন আধুনিক রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা গড়ে ওঠে, তখন থেকেই শক্তিসাম্যনীতি আন্তর্জাতিক সম্পর্কের একটি মূল বৈশিষ্ট্য হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। পরবর্তী দু’শতাব্দী যাবৎ এটা বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার ব্যপারে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

শক্তিসাম্যের সংজ্ঞা

শক্তিসাম্য হলো স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে এমন এক ধরণের সাম্যাবস্থা যেখানে কোনো একক শক্তি অথবা কোনো শক্তির সমবায়কে এমন ক্ষমতাসম্পন্ন হতে না দেয়া যাতে অন্যদের নিরাপত্তার প্রতি হুমকি হয়ে দাড়াতে পারে। অধ্যাপক সোয়ার্জেনবার্গার এটাকে “সাম্যাবস্থা” অর্থাৎ আন্তর্জাতিক সম্পর্কে মোটামুটি “স্থায়িত্ব” বোঝাতে ব্যবহার করেছেন।

কুইন্সি রাইট এর মতে, “শক্তিসাম্য হলো এমন একটি ব্যবস্থা, যা প্রতিটি রাষ্ট্রের মধ্যে এমন এক বিশ্বাস সৃষ্টি করে যে, কোন রাষ্ট্র আগ্রাসী হয়ে উঠলে তাকে অপরাজেয় জোটের সম্মুখীন হতে হবে। ”

শক্তিসাম্যের সবচেয়ে সুন্দর সংজ্ঞা দিয়েছেন অধ্যাপক ফে(Sidney B. Fay) তাঁর মতে, “ শক্তিসাম্যের অর্থ হলো রাষ্ট্রীয় পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শক্তির এমন একটি সঠিক সাম্যাবস্থা, যা যে- কোন একটিকে বাধা দেবে এমন অধিক শক্তিশালী হতে যাতে সে অপরের উপর তার ইচ্ছাকে চাপিয়ে দিতে না পারে।”

অষ্টাদশ ও উনবিংশ শতব্দীতে শক্তিসাম্য নীতি জনপ্রিয় ছিল । শক্তিসাম্যকে বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা সৃষ্টিতে একটা অপরিহার্য উপাদান মনে করা হতো । কোন একটি রাষ্ট্র অধিক শক্তি সঞ্চয় করে ফেললে অন্য রাষ্ট্রগুলো নানা কৌশল অবলম্বন করে তার সমকক্ষ হওয়ার চেষ্টা করত । যার ফলে বাড়তি শক্তি সঞ্চয়কারী রাষ্ট্র শক্তিশালী হওয়ার ইচ্ছা ত্যাগ করতে বাধ্য হতো । এভাবেই শক্তিসাম্য শান্তি ও নিরাপত্তা স্থাপন করত । কিন্তু সোভিয়েত রাশিয়া ভাঙ্গার ফলে তা বিনষ্ট হয় ।

শক্তিসাম্যের বৈশিষ্ট্য

আন্তর্জাতিক রাজনীতির ক্ষেত্রে শক্তিসাম্য ধারণাটি একটি অভিনব উদ্ভাবন বটে। শক্তিসাম্য তত্ত্বের অন্যতম বিশ্লেষক পামার ও পারকিন্স এর সাতটি বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করেন। যথাঃ
১. শক্তিসাম্যের ধারণা সতত পরিবর্তনশীল।
২. শক্তিসাম্য কোন ঐশ্বরিক তত্ত্ব নয়
৩. গতিশীলতা রক্ষা
৪. বিশুদ্ধ শক্তিসাম্য সম্ভব নয়
৫. শক্তিসাম্যের অবস্থাকে বাস্তব ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক উভয় দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করা যায়।
৬. শক্তিসাম্য তত্ত্ব গণতন্ত্র কিংবা একনায়কতন্ত্র কোনক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়।
৭. শক্তিসাম্য তত্ত্ব বৃহৎ শক্তিবর্গের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ ।

শক্তিসাম্য বজায় রাখার কৌশল বা পদ্ধতিসমূহঃ

পামার ও পারকিন্স শক্তিসাম্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে ছয়টি কৌশলের উল্লেখ করেন। তাঁদের মতে,
১. জোট ও মৈত্রীজোট
২. ক্ষতিপূরণ
৩. অস্ত্রীকরণ ও নিরস্ত্রীকরণ
৪. হস্তক্ষেপ ও হস্তক্ষেপ থেকে বিরতি
৫. বাফার স্টেট বা সঙ্ঘর্ষ নিবারক রাষ্ট্র
৬. বিভাজন ও শাসন (Divide and Rule)
সংগৃহীত

Add a Comment