প্লেট টেকটোনিক

প্লেট টেকটোনিক হচ্ছে একটি বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব। এই তত্ত্বে পৃথিবীর অশ্বমণ্ডল—অর্থাৎ একে অপরের দিকে চলাচল করতে সক্ষম এমন অনমনীয় খণ্ডের সমন্বয়ে তৈরি ভূত্বক বা পৃথিবীর উপরিতলের বর্ণনা করা হয়েছে। সর্বপ্রথম ১৯১২ সালে জার্মান আবহাওয়াবিদ আলফ্রেড ওয়েগনারকন্টিনেন্টাল ড্রিফট’ নামে একটি তত্ত্ব প্রদান করেন। তাঁর এই তত্ত্বে তিনি ব্যাখ্যা দেন যে ‘বহুকাল আগে সবগুলো মহাদেশ পরস্পর সংযুক্ত ছিল। একত্রে এদের প্যানজিয়া বা সুপারকন্টিনেন্ট বলা হতো। পরে কালের আবর্তে ভূত্বকীয় পাতের নড়াচড়ায় আলাদা আলাদা মহাদেশে বিভক্ত হয়ে যায়।’ পরবর্তী বিজ্ঞানীরা তাঁর এই তত্ত্বটির ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন গবেষণা ও তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আধুনিকতম তত্ত্ব বের করেন, যা সবার কাছে প্লেট টেকটোনিক হিসেবে পরিচিত। এই তত্ত্বের মূল ধারণা হলো, ভূপৃষ্ঠের নিচে পৃথিবীর শিলামণ্ডল কতগুলো অংশে বা খণ্ডে বিভক্ত। এগুলোকে প্লেট বলে। এই প্লেটগুলো গুরুমণ্ডলের আংশিক তরল অংশের ওপরে ভাসমান অবস্থায় আছে।

plate tectonic
plate tectonic

ভূত্বকীয় প্লেটগুলোকে মূলত সাত ভাগে ভাগ করা হয়েছে, যেমন—আফ্রিকান প্লেট, এন্টার্কটিক প্লেট, ইউরেশিয়ান প্লেট, ইন্দো-অস্ট্রেলিয়ান প্লেট, উত্তর আমেরিকান প্লেট, প্যাসিফিক প্লেট, দক্ষিণ আমেরিকান প্লেট। এই প্লেটগুলো প্রতিবছর কয়েক সেন্টিমিটার কোনো এক দিকে সরে যায়। কখনো একে অন্যের দিকে আসে, কখনো আবার কয়েক মিলিমিটার ওপরে ওঠে বা নিচে নামে। যখন একটি প্লেটের সঙ্গে আরেকটি প্লেট ঘষা বা ধাক্কা খায় তখন ভূমিকম্প ও আগ্নেয়গিরির উদগিরণের ঘটনা ঘটে। ধারণা করা হয়, প্লেটগুলো একটি আরেকটির সঙ্গে ঘষা বা ধাক্কা খেলে সেখানে প্রচুর তাপ সৃষ্টি হয়। তাপে ভূ-অভ্যন্তরের পদার্থ গলে যায়। এ গলিত পদার্থ চাপের ফলে নিচ থেকে ভূ-পৃষ্ঠ ভেদ করে বেরিয়ে আসে। একেই আগ্নেয়গিরির উদগিরণ বলে। বেরিয়ে আসা গলিত তরল পদার্থ ম্যাগমা নামে পরিচিত। একইভাবে প্লেটগুলো একটি অন্যটির সঙ্গে ধাক্কা খেলে পৃথিবী কেঁপে ওঠে। একেই ভূমিকম্প বলে। এ ছাড়া বিজ্ঞানীরা এ তত্ত্ব ব্যবহার করে পর্বত সৃষ্টি এবং মহাসাগর ও মহাদেশ সৃষ্টির ব্যাখ্যা দিয়ে থাকেন।

কালের কণ্ঠ হতে ► আব্দুর রাজ্জাক

Add a Comment