অধরা কণা : ভাইল ফার্মিওন

দীর্ঘ ৮৫ বছরে যেটা কেউ পারেনি, সেটা করে দেখিয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানী ড. জাহিদ হাসান। বহুল প্রতীক্ষিত অধরা কণা ফার্মিয়ন, ভাইল ফার্মিয়ন অস্তিত্ব আবিষ্কার করেছেন তিনি। অনন্য এ অবদানের জন্য তৈরী হয়েছে তার নোবেল প্রাপ্তির সম্ভাবনা। গত কয়েকবছরে যারা পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছেন, তাদের অবদানের সাথে এম জাহিদ হাসানের অবদানের তুলনা করেও এ সম্ভাবনার কথা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না।
.
যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের একদল গবেষক পদার্থবিদ জাহিদ হাসানের নেতৃত্বে পরীক্ষাগারে এই কণা খুঁজে পেয়েছেন। এই আবিষ্কার এখনকার মোবাইল ফোন, কম্পিউটারের মতো ইলেকট্রনিক সামগ্রীর গতি বাড়াবে। এতে সাশ্রয় হবে শক্তির।
.
এই কণা খুঁজে পাবার ব্যাপারে গত বছরের ১৮জুলাই বৃহস্পতিবার বিজ্ঞান সাময়িকী সায়েন্স-এ ভাইল ফার্মিয়নের পরীক্ষামূলক প্রমাণের বিষয়টি বিস্তারিত ছাপা হয়েছে। এই আবিষ্কারের গুরুত্ব সম্পর্কে বলতে গিয়ে জাহিদ হাসান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ভাইল ফার্মিয়নের অস্তিত্ব প্রমাণের মাধ্যমে দ্রুতগতির এবং অধিকতর দক্ষ নতুন যুগের ইলেকট্রনিকসের সূচনা হবে।
.
কেমন হবে সেই নতুন যুগের ইলেকট্রনিক সামগ্রী—জাহিদ হাসান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, এই আবিষ্কার কাজে লাগিয়ে তৈরি নতুন প্রযুক্তির মুঠোফোন ব্যবহারের সময় সহজে গরম হবে না। কারণ, এই কণার ভর নেই। এটি ইলেকট্রনের মতো পথ চলতে গিয়ে ছড়িয়ে পড়ে না।
.
দুনিয়ার সকল বস্তুকণাকে বিজ্ঞানীরা দুই দলে ভাগ করেন। একদলের নাম বসু কণা বা বোসন। আলোর কণা ফোটন এই দলের অন্তর্ভুক্ত। এই কণাগুলো বাঙ্গালি বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্র নাথ বসু ও অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের সমকীরণ বোস-আইনস্টাইন পরিসংখ্যান মেনে চলে। সেই তত্ত্বানুযায়ী, ২০১২ সালে বিজ্ঞানীরা এই দলের অন্যতম সদস্য “হিগস বোসন” যা ঈশ্বর কণা নামে পরিচিত, তা খুঁজে পান। অপর দলটিকে বলা হয় ফার্মিয়ন বা ফার্মি কণা। পরমাণুর গঠন-কণা ইলেকট্রন, প্রোটন, নিউট্রন হলো ফার্মিকণা। এগুলো বিজ্ঞানী এনরিকো ফার্মি ও পল ডিরাকের ফার্মি-ডিরাক সংখ্যায়ন মেনে চলে। ইলেকট্রন, প্রোটনসহ জানা প্রায় সব ফার্মিয়নের নিজস্ব ভর আছে এবং এগুলো বৈদ্যুতিক চার্জও বহন করতে পারে বা চার্চ নিরেপক্ষও হতে পারে। কিন্তু ১৯২৯ সালে গণিতবিদ ও পদার্থবিদ হারম্যান ভাইল ভরশূণ্য কিন্তু বৈদ্যুতিক চার্জ বহনকারী ফার্মিকণার ভবিষ্যৎবাণী করেন এবং দাবী করেন এমন কণা বাস্তুবে রয়েছে। পরে বিজ্ঞানীরা তাঁর নামেই এর নামকরণ করেন ভাইল ফার্মিয়ন। জাহিদ হাসান জানালেন – “মোট তিন ধরণের ফার্মিয়নের মধ্যে ডিরাক ও মাজোরনা নামের বাকী দুইটি ফার্মিয়ন বেশ আগেই আবিস্কার হয়েছে। দীর্ধদিন ধরে বিজ্ঞানীরা ভাবছিলেন মৌল কণা নিউট্রিনোই সম্ভবত ভাইল ফার্মিয়ন। কিন্তু ১৯৯৮ সালে আবিস্কৃত হয় নিউট্রিণোরও ভর আছে। তখন থেকে আবার ভাইল ফার্মিয়নের খোঁজ শুরু হয়।” অবশেষে জাহিদের নেতৃত্বে প্রিন্সটনের বিজ্ঞানীরা সেই ভাইল ফার্মিয়নের খোঁজ পান। ভরশূণ্য হওয়ার কারণে ধারণা করা যায় যে, ভাইল ফার্মিয়ন ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতিতে বর্তমান অর্ধ-পরিবাহী ইলেকট্রনিক সামগ্রীর তুলনায় কমপক্ষে এক হাজার (১০০০) গুন বেশি গতিতে চলাচল করতে পারবে। ভাইল ফার্মিয়নের আর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল এটি একই সঙ্গে চৌম্বকের একক-মেরু (মনোপোল) এবং বিপরীত একক-মেরুর (এন্টি মনোপোল) বৈশিষ্ট্য বহন করে। ”অর্থাৎ”, ব্যাখ্যা করলেন জাহিদ, “এর ফলে পথে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে সেগুলো ইলেকট্রনের মত ছড়িয়ে পড়ে না, বরং সামনের দিকে তাদের গতি বজায় রাখে। ইলেকট্রনিক্সের ভেতরে ইরেকট্রনের যে ট্র্যাফিক জ্যাম হয় এখানে সেটা হবে না।” জাহিদের আশাবাদ এর মধ্যমে সূচিত হবে নতুন ধরণের ইলেকট্রনিক্স যাকে “আমরা বলছি ভাইলোট্রনিক্স’। দীর্ধদিন ধরে ফার্মিয়ন নিয়ে কাজ করছেন কানাডার ওয়াটার্লু বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানী আন্তন ভার্খব। একটি আন্তর্জাতিক জার্নালকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে উচ্ছসিত ভার্খব বলেন – তত্ত্বীয় জগতের জিনিষপত্র বাস্তব জগতে খুঁজে পাওয়ার মত আনন্দের বিষয় আর কিছু নাই। জাহিদ হাসানের গবেষক দল এই কণাটিকে খুঁজে পেয়েছেন একটি যৌগিক কেলাসের মধ্যে এবং কেলাসেই কেবল এটিকে পাওয়া যায়। তবে, হিগস বোসনের সঙ্গে ভাইলের পার্থক্য হচ্ছে হিগস বোসনের অস্তিত্ব কেবল কণা ত্বরকেই পাওয়া যায়। কিন্তু ভাইল ফার্মিয়ন দিয়ে বানানো যাবে নতুন ও কার্যকর কম্পিউটিং ডিভাইস। তবে, জাহিদ হাসানের ধারণা নিত্য ব্যবহারের ভাইলোট্রনিক্সের জন্য আমাদের আরো ১০ থেকে ২০ বছর অপেক্ষা করতে হবে।

এই চৌকষ ফার্মিওনের আছে কিছু সুন্দর ও অনন্য বৈশিষ্ট্য। যেমন:
ইলেকট্রনিক ট্রাফিক জ্যামে অন্যান্য ইলেকট্রন যখন বিস্বস্ত, সে যেন তখন তার নিজস্ব জি পি এস ব্যবহার করে এগিয়ে চলে। সাহিত্যিক ভাবে বললে বলা যায়, সে কোন বাধা মানে না, পেছনে ফিরে চায় না। ডানে গেলে ডানে যায়, বামে গেলে বামে, ডানবাম করে না। ইলেকট্রনের চেয়ে দ্রুতগতিতে চার্জ পরিবহণ করতে পারে। কারণ তার কোন ভর নেই। এটা একই সাথে ম্যাটার ও আ্যন্টিম্যাটার হিসেবে কাজ করতে পারে।-
———————
ড. জাহিদ ধানমন্ডি গর্ভ: বয়েস স্কুল থেকে এসএসসি , ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি , ঢাকার ছেলে জাহিদ হাসান পদার্থবিদ্যায় লেখাপড়া করেছেন অস্টিনের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্ট্যানফোর্ডে পিএইচডি করার পর থেকে তিনি প্রিন্সটনে অধ্যাপনা করছেন। মাইক্রোসফট কর্পোরেশনে কর্মরত স্ত্রী প্রকৌশলী সারাহ আহমেদ, পুত্র আরিক ইব্রাহিম ও কন্যা সারিনা মরিয়মকে নিয়ে জাহিদের সংসার।
সংগৃহীত

Add a Comment