নদীর সঞ্চয়জাত ভূমিরূপ
|নদী উৎস হতে বিভিন্ন গতিতে এসে সাগরে পতিত হয়। এ চলার পথে নদী চারপাশের ভূমি এক দিকে যেমন ক্ষয় করে অন্যদিকে তেমন সঞ্চয় করে। ক্ষয় করার মাধ্যমে ও সঞ্চয় করার মাধ্যমে বিভিন্ন ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়। সঞ্চয়ের মাধ্যমে নিম্নক্ত ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়।
- পলল কোণ ও পলল পাখা
- পাদদেশীয় পলল সমভূমি
- প্লাবন সমভূমি
- ব-দ্বীপ সমভূমি
১। পলল কোণ ও পলল পাখা (Alluvial Cone and Alluvial Fan): পার্বত্য কোনো অঞ্চল থেকে হঠাৎ করে কোনো নদী যখন সমভূমিতে পতিত হয়, তখন শিলাচূর্ণ, পলিমাটি প্রভৃতি পাহাড়ের পাদদেশে (৩৮তম বিসিএস প্রিলিমিনারি) সমভূমিতে সঞ্চিত হয়ে ত্রিকোণ ও হাতপাখার ন্যায় ভূখণ্ডের সৃষ্টি হয়। এ কারণে এরূপ পললভূমিকে পলল কোণ বা পলল পাখা বলে ।
যেসব অঞ্চলে মাটি অধিক পানি শোষণ করতে পারে সেসব অঞ্চলে পানি শোষণের ফলে শিলাচূর্ণ অধিক দূরত্বে যেতে পারে না এবং সেসব অঞ্চলের সঞ্চয় প্রশস্ত না হয়ে কোণাকৃতি হয়। একে পলল কোণ বলে। পানি বেশি শোষণ করতে না পারলে শিলাচূর্ণ বিস্তৃত হয়ে হাতপাখার ন্যায় ভূখণ্ডের সৃষ্টি হয়। এরূপ পললভূমিকে পলল পাখা বলে। হিমালয়ের পাদদেশে গঙ্গার বিভিন্ন উপনদীর গতিপথে এরূপ ভূখণ্ড দেখতে পাওয়া যায়।
২। পাদদেশীয় পলল সমভূমি (Piedmont Alluvial Plain): অনেক সময় পাহাড়িয়া নদী পাদদেশে পলি সঞ্চয় করতে করতে একটা সময় পাহাড়ের পাদদেশে নতুন বিশাল সমভূমি গড়ে তোলে। এ ধরনের সমভূমিকে পাদদেশীয় পলল সমভূমি বলে । বাংলাদেশের তিস্তা, আত্রাই, করতোয়া সংলগ্ন রংপুর ও দিনাজপুর জেলার অধিকাংশ স্থানই পলল সমভূমি নামে পরিচিত। এসব নদী উত্তরের হিমালয় থেকে উৎপন্ন হয়ে সহজেই পাহাড় থেকে পলল বহন করে এ অঞ্চলে সঞ্চয় করে পাদদেশীয় পললভূমি গঠন করেছে
৩। প্লাবন সমভূমি (Flood Plain): বর্ষাকালে বিশেষ করে পানি বৃদ্ধির কারণে নদীর উভয়কূল প্লাবিত করে তখন তাকে প্লাবন বা বন্যা বলে। বন্যা শেষে নদীর দুপাশের ভূমিতে খুব পুরু স্তর কাদা, পলি দেখতে পাওয়া যায়। এভাবে অনেকদিন পলি জমতে জমতে যে বিস্তৃত সমভূমির সৃষ্টি হয় তাকে প্লাবন সমভূমি বলে। সমভূমি বলা হলেও এর কোথাও কোথাও সামান্য উঁচু-নিচু দেখা যায়। কয়েকটি জেলা ব্যতীত মোটামুটি সমগ্র বাংলাদেশই পদ্মা, যমুনা, মেঘনা প্রভৃতি নদীবিধৌত প্লাবন সমভূমি। প্লাবন সমভূমির মধ্যে অনেক ধরনের সঞ্চয়জাত ভূমিরূপ দেখা যায়। এদের মধ্যে প্রধান কয়েকটি হলো-
(ক) অশ্বখুরাকৃতি হ্রদ, (খ) বালুচর, (গ) প্রাকৃতিক বাঁধ।
৪। ব-দ্বীপ সমভূমি (Delta Plain): নদী যখন মোহনার কাছাকাছি আসে তখন তার স্রোতের বেগ একেবারেই কমে যায়। এতে বালি ও কাদা তলানিরূপে সঞ্চিত হয়। নদীর স্রোতটান যদি কোনো সাগরে এসে পতিত হয় তাহলে ঐ সমস্ত বালি, কাদা নদীর মুখে জমে নদীমুখ প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং ধীরে ধীরে এর স্তর সাগরের পানির উচ্চতার উপরে উঠে যায়। তখন নদী বিভিন্ন শাখায় বিভক্ত হয়ে এই চরাভূমিকে বেষ্টন করে সাগরে পতিত হয়। ত্রিকোণাকার এই নতুন সমতল ভূমিকে ব-দ্বীপ সমভূমি বলে । এটি দেখতে মাত্রাহীন বাংলা ‘ব’ এর মতো এবং গ্রিক শব্দ ‘ডেল্টা’র মতো তাই এর বাংলা নাম ব-দ্বীপ এবং ইংরেজি নাম Delta হয়েছে। হুগলি নদী থেকে পূর্ব দিকে মেঘনার সীমানা পর্যন্তপশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে সমস্ত দক্ষিণাংশ গঙ্গা ও পদ্মা নদীর বিখ্যাত ব-দ্বীপ অঞ্চল ।
👉 Read More...👇