নদীভাঙন

উৎস থেকে পতিত হওয়া পর্যন্তনদীর দীর্ঘ গতিপথকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করা হয়। পার্বত্য অঞ্চলে নদীর প্রবাহ তীব্র বলে ক্ষয়সাধন বেশি হয়। তবে এ অঞ্চলে নদীর পার্শ্বক্ষয় অপেক্ষা নিম্নক্ষয় বেশি হয় ।

নদীভাঙনের কারণ
জলবায়ুর পরিবর্তন।
নদীর প্রবাহপথ ও তীব্র গতিবেগ।
নদীর গতিপথ পরিবর্তন।
নদীগর্ভে শিলার উপাদান।
রাসায়নিক দ্রব্যের উপস্থিতি।
বাহিত শিলার কঠিনতা।
নদীগর্ভে ফাটলের উপস্থিতি।
বৃক্ষ নিধন।

স্বল্প আয়তনবিশিষ্ট বাংলাদেশে নদীভাঙনকে একটি মারাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলে। বর্ষাকালেই নদীভাঙন বেশি হয়। বিশেষত প্রায় প্রতি বছর বন্যা মৌসুম ও সন্নিহিত সময়ে প্রায় ৪০টি ছোট-বড় নদীতে নদীভাঙন দেখা যায়। অনেক সময় নদী-তীরে খরাজনিত ব্যাপক ফাটলের সৃষ্টি হলে তার প্রভাবেও নদীতে ভাঙন ধরে এবং ভূমির অংশবিশেষ নদীগর্ভে বিলীন হয়। নদীভাঙনে ভূমির যে ক্ষয় হয় তা অপূরণীয়। এছাড়া আর্থ-সামাজিক প্রতিক্রিয়াও মারাত্মক আকার ধারণ করে। নদীভাঙনজনিত ক্ষয়ক্ষতি বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ হওয়ায় নদীভাঙন এ দেশের জন্য নিয়মিত সমস্যা বলা যায়। নদীভাঙনের ক্ষতি ব্যাপক আকার ধারণ করে। এ দেশে প্রতি বছর পদ্মা, যমুনা, মেঘনা, তিস্তাসহ প্রায় ৪১০টি নদী-উপনদীতে বন্যা এবং
সন্নিহিত নদীতে ভাঙনের ঘটনা ঘটে। এ দেশের মানুষ নদীভাঙন নামক দুর্যোগের সঙ্গে কম-বেশি জড়িত। এর মধ্যে প্রায় ১.৫ মিলিয়ন লোক প্রত্যক্ষভাবে নদীভাঙনের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এদের মধ্যে প্রায় তিন লক্ষ লোক আশ্রয় নেয় বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাস্তা এবং বাঁধের উপর। অন্যদিকে বাংলাদেশ প্রতি বছর প্রায় ২০০ কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এছাড়া প্রতি বছর প্রায় ৮,৭০০ হেক্টর জমি নদীভাঙনে নিঃশেষ হয়ে যায়।

নদীভাঙন বাংলাদেশের একটি চলমান প্রক্রিয়া বিশেষ। এ দেশের প্রধান নদী ও শাখানদী দ্বারা কম-বেশি নদীভাঙন প্রক্রিয়া চলে। দেশের প্রায় ১০০টি উপজেলায় নদীভাঙন সংঘটিত হয়। জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে প্রবল বৃষ্টিপাতে নদীভাঙনে জমির মালিকগণ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারণ তারা কখনই আর সে জমি পুনরুদ্ধার করতে পারে না। এ কারণে ভূমিহীন মানুষের স্থানান্তর ঘটে। এদের নির্দিষ্ট কোনো কাজের সুযোগ থাকে না। সেই সঙ্গে তারা সামাজিক মর্যাদাও হারায়। ফলশ্রুতিতে তারা দুর্ভিক্ষের সাথী হয়ে শহর-নগরের ভাসমান মানুষে পরিণত হয়
এবং সর্বোপরি সরকারের বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।

Add a Comment