John Donne

জন ডান (John Donne) “Father of Metaphysical Poetry” “ম্যাটাফিজিক্যাল কবিদের গুরু”, জন্ম গ্রহণ করেন ১৫৭২ সালের ২২ জানুয়ারি লন্ডনে। তাঁর মা ছিলেন শিল্প-সাহিত্য ঘেঁষা পরিবারের সদস্যা, নাট্যকার John Heywood এর বোন। বাবা ছিলেন একজন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী। তিনি ছিলেন তাঁর বাবা মায়ের ছয় সন্তানের মধ্যে তৃতীয়। মাত্র চার বছর বয়সে তিনি তাঁর বাবাকে হারান।
জন ডান অক্সফোর্ড এবং ক্যামব্রিজের মতো জগদ্বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেও শুধুমাত্র ধর্মীয় কারণে ডিগ্রি অর্জন করতে পারেননি। পরে জন ডান ধর্মের উপর লেখাপড়া করেন, ধর্মান্তরিত হন। তিনি ক্যাথলিক ধর্ম ত্যাগ করে (এংলিকান) ধর্ম গ্রহণ করেন। এর পর তিনি পাদ্রী এবং বিখ্যাত গির্জা সেন্টপলস্ এর উপাচার্যও হয়েছিলেন যা কোনো ইংরেজ কবির পক্ষে বিরল ঘটনা।
যে সময় জন ডান কাব্য চর্চায় হাত দেন সে সময় ছিলো এলিজাবেথীয় যুগের সহজ সাবলীল কাব্য ধারার আস্তায়মান অবস্থা। অর্থাৎ জন ডান ছিলেন উইলিয়াম সেক্সপীয়র, ক্রিস্টোফার মার্লো, এডমন্ড স্পেন্সার-দের মতো শক্তিমান কবিদের সমসাময়িক। তাই স্বাভাবিকভাবেই কাব্য জগতে নিজের স্বতন্ত্র আসন গড়ে নিতে তাঁকে যথেষ্ট বেগ পেতে হলেও তিনি তা পেরেছেন।
এলিজাবেথীয় যুগের সহজ সাবলীল কাব্য ধারার আস্তায়মান অবস্থার পরিবর্তন এনে
জন ডান আবিষ্কার করেন স্বতন্ত্র এক কাব্য ধারা ‘ম্যাটাফিজিক্যাল’ ‘Metaphysical’ কবিতা। Meta physical মানে beyond/ after physical. যে কবিতায় ফিজিকালিটির চেয়ে থাকে আধ্মাতিকতা, ইমাজিনেশন, রিলিজিয়ন। সপ্তদশ সেঞ্চুরিতে স্যামুয়েল জনসন এই বিশেষ টার্মটিকে সামনে তুলে আনেন, যেখানে ভালোবাসা আর জীবন আধ্যাত্মিকতার সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় l ইংরেজি শব্দবন্ধে ‘মেটাফিজিক্যাল পোয়েট্রি’ বলতে ‘ধর্মতত্ত্বাশ্রয়ী কবিতা’ বোঝায়। আর এই ধারার কবিদেরকে বলা হতো ‘ম্যাটাফিজিক্যাল পোয়েটস্’ যার অর্থ ‘দার্শনিক কবিদল’। এই কবি গোষ্ঠীর কেউ’ই দার্শনিক ছিলেন না তবে এঁদের কবিতায় দার্শনিক সুলভ ভাব-ভাষা, শব্দ উপমা ব্যবহার হতো বলেই এঁদের এরূপ নামকরণ।
জন ডানের কবিতায় বিষয় বৈচিত্র ও উপমার বৈচিত্র সুস্পষ্টভাবে লক্ষ্যণীয়। তাঁর কবিতায় উচ্ছোষিত ভাবাবেগের পরিবর্তে বুদ্ধিসচেতন, বিশ্লেষণধর্মী, দার্শনিক মনোভাবের পরিচয় পাওয়া যায়। ম্যাটাফিজিক্যাল কবিতার বৈশিষ্ট্যানুসারে তিনি তাঁর কবিতায় উপমা হিসেবে ব্যবহার করেছেন যুক্তি নির্ভর গণিত, জ্যামিতি, জ্যোতির্বিদ্যা, দর্শন। যেমনঃ ‘The Good Morrow’ কবিতায় তিনি বলেছেন-
“মিশ্রিত নয় সমানুপাতে ভাঙ্গে সেটা ভাঙ্গে”
ব্যক্তিগত জীবনে জন ডান ছিলেন উচ্চাভিলাষী। প্রেমের ক্ষেত্রেও তাই। দেহ কামনাহীন প্রেমে তিনি বিশ্বাসী ছিলেন না। শুধু হতাশা, শুধু নিরাশা, শুধু দীর্ঘশ্বাস, শুধু অশ্রু নয় বরং সফল প্রেমের পক্ষে ছিলেন তিনি। পক্ষে ছিলেন গভীর প্রেমের। যেমনঃ তিনি লিখেছেন-
“Love, all alike no season knows, nor clime,
Nor hours, days, months, which are the rags of time.”
“Two graves must hide thine and my corse,
If one might, death were no devorce.”
এমন অনেক গভীরতম প্রেমাবেগ প্রকাশক পঙক্তি ও উপমা।
তাঁর প্রেম ছিলো এক অভিজাত পরিবারের কন্যা Anne More- এর সাথে। ১৬০১ খ্রিষ্টাব্দে গোপনে বিয়েও করেন Anne More- কে। পরে বিয়ের বিষয়টি প্রকাশ পেয়ে গেলে Anne More- এর পরিবার বেঁকে বসে আর Anne More-ও জন ডানের সাথে প্রতারণা করে নিজ পরিবারের পক্ষে চলে যায়। আর সেজন্য তাঁকে বেশ কিছুদিন জেলও খাটতে হয়েছিলো। সম্ভবত একারণেই, পরবর্তীতে তাঁর কিছুকিছু কবিতায় নারী বিদ্বেষী মনোভাবের প্রকাশ পায়। যেমনঃ “Twicknam Garden” কবিতায় তিনি লিখেছেন-
“Alas, hearts do not in eyes shine,
Nor can you more judge women’s thoughts by tears,
Than by her shadow, what she wears.”
অর্থাৎ ছলনাময়ী নারী জাতটাকে অশ্রু দেখে বিচার করা যায় না। অশ্রু দেখে তার ভালোবাসার খাঁটিত্ব বিচার করা যায় না। অশ্রু, অস্ত্র হিসাবেও তারা মাঝেমাঝে ব্যাবহার করে পুরুষের হৃদয় জয় করবার জন্য অথবা পুরুষকে মানসিকভাবে দুর্বল করবার জন্য। এছাড়াও “The Apparition” কবিতায় তিনি বলেছেন-
“When by thy scorne, O murdresse, I am dead,
And that thou thinkst thee free
From all solicitation from mee,
Then shall my ghost come to thy bed”
“তোমার নির্দয় তাচ্ছিল্যে যখন মারা যাব আমি
হে ঘাতক নারী, মুক্ত ভেবো না নিজেকে
আমার প্রত্যাঘাত থেকে;
আমার প্রেতাত্মা তখন তোমার শয্যায় নেবে ঠাই,”
আবেগে, উচ্ছ্বাসে, সংযমে, যুক্তিতে, বিষয় বৈচিত্রে নিঃসন্দেহে জন ডান একজন উচ্চ মার্গের সাহিত্যরসবেত্তা। তাই বেন জনসন বলেছিলেন- “কোনো কোনো বিষয়ে ডান বিশ্বের প্রথম কবি”, আর স্বয়ং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরই তো ডানের কবিতার উদ্ধৃতি টেনেছেন তাঁর ‘শেষের কবিতা’ উপন্যাসেঃ
“For God’s sake hold your tongue,
and let me love.”

From Facebook, By টি. এইচ. ফিনিক্স

Add a Comment