ই-গভর্নেস

ই-গভর্নমেন্ট(e governance or e government):
প্রথম আলো সম্পাদকীয়, ২৫ জুলাই ২০১৮
সরকারকে আরও অনেক কাজ করতে হবে
ই-গভর্নমেন্ট সূচকে অগ্রগতি


জাতিসংঘের ই-গভর্নমেন্ট উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের ৯ ধাপ এগোনোর বিষয়টি নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য বড় একটি সুখবর। ৯ ধাপ এগিয়ে আগের ১২৪তম অবস্থান থেকে ১৯৩টি দেশের মধ্যে ১১৫তম অবস্থানে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। পাশাপাশি জাতিসংঘের তৈরি ই-পার্টিসিপেশন সূচকেও ৩৩ ধাপ উন্নতি হয়েছে বাংলাদেশের। এ সূচকে বাংলাদেশ উঠে এসেছে ৫১তম স্থানে।

ডিজিটাল গভর্নমেন্টের প্রসার ঘটিয়ে ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জন সহজ করতে ২০০১ সাল থেকে দুই বছর পরপর এই জরিপগুলো প্রকাশ করে আসছে জাতিসংঘ। অনলাইন সেবা, টেলিকম অবকাঠামো ও দক্ষ মানবসম্পদ—এই তিন মাপকাঠি বিবেচনায় ই-গভর্নমেন্ট ডেভেলপমেন্ট সূচক তৈরি করে জাতিসংঘ। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ২৪ ধাপ এগিয়ে ১৪৮ থেকে ১২৪তম অবস্থানে পৌঁছায়। ই-গভর্নমেন্ট উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার বিষয়টি আমাদের আশান্বিত করে তোলে। তবে ১১৫তম অবস্থান নিয়ে সন্তুষ্ট থাকলে আমাদের চলবে না। এ জন্য সরকারকে আরও অনেক কাজ করতে হবে।

এটা ঠিক যে বাংলাদেশে একসময় ই-সার্ভিস বলতে কিছু ছিল না। ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সরকারের নানামুখী পদক্ষেপের ফলে এখন ৪০ শতাংশের বেশি সেবা অনলাইনে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। বর্তমানে দেশে ইউনিয়ন ডিজিটাল ইনফরমেশন সেন্টারের সংখ্যা ৫ হাজার ২৭২। ৫০-৬০ লাখ মানুষ প্রতিবছর সেবা নিতে পারছেন। কিন্তু এগুলোই যথেষ্ট নয়।

ই-গভর্নমেন্ট পুরোপুরি বাস্তবায়নের জন্য একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করার কথা হচ্ছে অনেক দিন ধরে।কিন্তু এখন পর্যন্ত এই মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করা হয়নি। জরুরি ভিত্তিতে এই প্ল্যান প্রণয়ন করতে হবে। সব জেলায় ই-গভর্নমেন্ট মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়িত হলে সেবার মান বাড়ার পাশাপাশি দুর্নীতির সুযোগ কমবে। বাংলাদেশে মোবাইল ইন্টারনেটের দাম এখনো অনেক বেশি, অথচ গতি খুব কম। বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী ২০০৮ সালে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৮ লাখ। বর্তমানে সেটা বেড়ে ৮ কোটি ৭৮ লাখে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ দেশের মোট জনসংখ্যার ৫৫ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। দেশের মানুষের কাছে ইন্টারনেট সহজলভ্য করতে সরকার ব্যান্ডউইডথের দাম কমানোর পাশাপাশি ভ্যাটের হার কমালেও সেই সুবিধা ভোগ করতে পারছেন না মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা। সরকারকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নজর দিতে হবে।

এখনো গ্রাম ও শহরের মধ্যে ডিজিটাল বৈষম্য বিদ্যমান। গ্রামের মানুষ এখনো শহরের মানুষের তুলনায় কম ইন্টারনেট সেবা পাচ্ছেন। ই-গভর্নমেন্ট পুরোপুরি বাস্তবায়নের জন্য অবশ্যই ডিজিটাল বৈষম্য দূর করতে হবে। এসব পদক্ষেপ গ্রহণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ একদিন জাতিসংঘের ই-গভর্নমেন্ট উন্নয়নসূচকে তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

Add a Comment