নির্বাহী বিভাগ কি?
|সরকারের বিভিন্ন অঙ্গ: সরকারের তিনটি মূল কাজ পরিচালনার জন্য তিনটি অঙ্গ বা বিভাগ রয়েছে। যেমনশাসন বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগ। শাসন বিভাগের মূল কাজ হল আইনানুসারে শাসনকাজ পরিচালনা করা। আইন বিভাগের মূল কাজ হল নতুন আইন প্রণয়ন ও পুরাতন আইন সংশোধন করা। আর বিচার বিভাগের মূল কাজ হল আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও বিচারকাজ সম্পাদন করা।
নির্বাহী বিভাগ/শাসন বিভাগ
সরকারের যে বিভাগ আইনানুযায়ী রাষ্ট্রের শাসনকাজ পরিচালনা করে তাকে শাসন বিভাগ বলে। ব্যাপক অর্থে রাষ্ট্রপ্রধান থেকে শুরু করে গ্রাম্য পুলিশ পর্যন্ত সকলেই শাসন বিভাগের অন্তর্ভুক্ত। সীমিত অর্থে শাসন বিভাগ বলতে রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান ও মন্ত্রীবর্গ এবং সচিবদেরকে বোঝায়। আরও সীমিত অর্থে রাষ্ট্রপ্রধান ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে শাসন বিভাগ বলে। বস্তুত রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধানকে নিয়ে যে বিভাগ গড়ে ওঠে তাকেই এককথায় শাসন বিভাগ বলে।
গঠন : রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধানের কার্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়ে শাসন বিভাগ গড়ে ওঠে। এদের মধ্যে মন্ত্রীবর্গ, প্রশাসনিক বাহিনী এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীবৃন্দ অন্তর্ভুক্ত। সহজ কথায় রাষ্ট্রপ্রধান, সরকার প্রধান, মন্ত্রিপরিষদ এবং সচিবালয়ের সকলকে নিয়ে শাসন বিভাগ গঠিত।
শাসন বিভাগের কার্যাবলি:
শাসন বিভাগ বহুবিধ কাজ করে। বর্তমানকালে শাসন বিভাগের কাজ বেড়েই চলেছে। একটি আধুনিক শাসন বিভাগ যেসব কাজ সম্পাদন করে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা হল।
(ক) শাসন সংক্রান্ত: আইন অনুযায়ী দেশের প্রশাসন পরিচালনা করা শাসন বিভাগের প্রধান কাজ। রাষ্ট্রের শাসনকাজ পরিচালনার জন্য শাসন কাঠামো রচনা, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ ও নিয়ন্ত্রণ এবং বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা শাসন বিভাগের কাজের অন্তর্ভুক্ত।
(খ) কুটনৈতিক কাজঃ কূটনৈতিক কাজ বলতে পররাষ্ট্র সংক্রান্ত কাজকে বোঝায়। পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ, বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন, রাষ্ট্রদূত নিয়োগ, অস্তির্জাতিক সংস্থায় ও সম্মেলনে প্রতিনিধি নিয়োগ ও প্রেরণ এবং সকল রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করা শাসন বিভাগের কূটনৈতিক কাজ।
(গ) প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত: দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং দেশের অভ্যন্তরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব শাসন বিভাগের ওপর ন্যস্ত। শাসন বিভাগ সামরিক বাহিনী গঠন ও পরিচালনা এবং অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলার জন্য পুলিশ বাহিনী গঠন ও পরিচালনা করে। শাসন বিভাগের প্রধান হিসেবে রাষ্ট্রপ্রধান সামরিক বাহিনীর সর্বাধিনায়ক। তিনি যুদ্ধ ঘোষণা ও শান্তি স্থাপন এবং সামরিক চুক্তি সম্পাদন করতে পারেন।
(ঘ) আইন সংক্রান্ত: শাসন বিভাগ আইনসভার অধিবেশন আহবান, মুলতবি ও সমাপ্তি ঘোষণা করতে পারে। এমনকি আইনসভা ভেঙেও দিতে পারে। আইনসভা কর্তৃক পাশকৃত বিলে রাষ্ট্রপ্রধান অনুমোদন না দিলে তা আইনে পরিণত হয় না। শাসন বিভাগ যে কোনো বিল নাকচ করতে পারে। প্রয়োজনবোধে অধ্যাদেশ জারি করতে পারে।
(ঙ) বিচার সংক্রান্ত: শাসন বিভাগের প্রধান হিসেবে রাষ্ট্রপ্রধান দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য বিচারপতিদের নিয়োগ করেন। তিনি দণ্ডপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তির দণ্ড হ্রাস বা মওকুফ করতে পারেন। এরূপে শাসন বিভাগ বিচার সংক্রান্ত অনেক কাজ করে।
(চ) আর্থিক ও উন্নয়নমূলক: বার্ষিক বাজেট প্রণয়ন, মুদ্রাব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ, আমদানি-রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ, ভূমি সংস্কার, রাজস্ব আদায় ও কর সংগ্রহ ইত্যাদি বহুবিধ কাজ শাসন বিভাগের হাতে ন্যস্ত। তাছাড়া জনকল্যাণ ও দেশের উন্নয়নের জন্য শাসন বিভাগ নানাবিধ উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ ও পরিচালনা করে।
এভাবে শাসন বিভাগ শাসন সংক্রান্ত কাজ ছাড়াও আরও অনেক কাজ করে থাকে।