জীবনানন্দ দাশ

বিগত সালের BCS Preliminary- তে এখান থেকে প্রশ্ন এসেছে টি।

জীবনানন্দ দাশ ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দে বরিশাল (১৬তম বিসিএস প্রিলিমিনারি) শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম সত্যানন্দ দাশ, মাতা কুসুমকুমারী দাশ। কুসুমকুমারী দাশও ছিলেন একজন স্বভাবকবি। তাঁর সুপরিচিত কবিতা আদর্শ ছেলে আজও শিশুশ্রেণীর পাঠ্য।

আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে
কথায় না বড় হয়ে কাজে বড়ো হবেকুসুমকুমারী দাশ

জীবনানন্দ দাশের কবিতার পঙক্তি

চুল তাঁর কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা – বনলতা সেন।
বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথীবীর রূপ খুঁজিতে যাই নি আর।
সব পাখি ঘরে আসে সব নদী ফুরায় এ জীবনের সব লেন দেন; থাকে শুধু অন্ধকার- বনলতা সেন।
সুরঞ্জনা, ঐখানে যেয়ো না তুমি বোলো নাকো কথা ওই যুবকের সাথে- সুরঞ্জনা।
হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছে পৃথিবীর পথে সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে- বনলতা সেন।
আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে এই বাংলায় হয়তো মানুষ নয় হয়তো বা শঙ্খচিল শালিকের বেশে।- আবার আসিব ফিরে।

জীবনানন্দ দাশ বরিশাল ব্রজমোহন স্কুল, ব্রজমোহন কলেজ ও কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে শিক্ষালাভ করেন। ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম.এ. ডিগ্রি লাভের পর তিনি অধ্যাপনা শুরু করেন এবং সুদীর্ঘকাল তিনি অধ্যাপনার কাজে নিযুক্ত ছিলেন।

জীবনানন্দ দাশের অভিধা

  1. রূপসী বাংলার কবিঃ গ্রামবাংলার ঐতিহ্যময় নিসর্গ ও রূপকথা-পুরাণের জগৎ জীবনানন্দের কাব্যে হয়ে উঠেছে চিত্ররূপময়, তাতে তিনি ‘রূপসী বাংলার কবি’ অভিধায় খ্যাত হয়েছেন। বাংলার প্রকৃতির রূপবৈচিত্র্যে কবি নিমগ্নচিত্ত। কবির দৃষ্টিতে বাংলাদেশ এক অনন্য রূপসী। তাই তাঁকে রূপসি বাংলার কবি বলা হয়। (১২তম বিসিএস প্রিলিমিনারি)
  2. নির্জনতম কবিঃ বুদ্ধদেব বসু তাঁকে নির্জনতম কবি বলে আখ্যায়িত করেছেন। (৩৯তম বিসিএস প্রিলিমিনারি)
  3. শুদ্ধতম কবিঃ আবদুল মান্নান সৈয়দ তাঁকে শুদ্ধতম কবি বলেছেন।
  4. সমালোচকদের অনেকে তাঁকে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল-পরবর্তী বাংলা সাহিত্যের প্রধান কবি বলে মনে করেন।
  5. রবী ঠাকুর তাঁর কবিতাকে ‘চিত্ররূপময়’ বলেছেন।

তিনি প্রধানত কবি হলেও বেশ কিছু প্রবন্ধ-নিবন্ধ রচনা ও প্রকাশ করেছেন। তবে ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে অকাল মৃত্যুর আগে তিনি নিভৃতে ২১টি উপন্যাস এবং ১০৮টি ছোটগল্প রচনা গ্রন্থ করেছেন যার একটিও তিনি জীবদ্দশায় প্রকাশ করেননি।

১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে জীবনানন্দ ব্রজমোহন কলেজে ইংরেজি বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। সে সময়ে কলকাতায় বুদ্ধদেব বসু, প্রেমেন্দ্র মিত্র এবং সমর সেন একটি আনকোড়া নতুন কবিতাপত্রিকা বের করার তোড়জোড় করছিলেন, যার নাম দেয়া হয় কবিতা। পত্রিকাটির প্রথম সংখ্যাতেই জীবনানন্দের একটি কবিতা স্থান করে নেয়, যার নাম ছিল ‘মৃত্যুর আগে’। কবিতাটি পাঠ করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বুদ্ধদেবকে লেখা একটি চিঠিতে মন্তব্য করেন কবিতাটি ‘চিত্ররূপময়’। কবিতা পত্রিকার দ্বিতীয় সংখ্যাতে (পৌষ ১৩৪২ সংখ্যা; ডিসে ১৯৩৪/জানু ১৯৩৫) তার কিংবদন্তিতুল্য বনলতা সেন কবিতাটি প্রকাশিত হয়। এই ১৮ লাইনের কবিতাটি বর্তমানে বাংলা ভাষার সবচেয়ে জনপ্রিয় কবিতার অন্যতম হিসেবে বিবেচিত।

কলকাতায় তিনি দৈনিক স্বরাজ পত্রিকার রোববারের সাহিত্য বিভাগের সম্পাদনা করেন। কিন্তু এই চাকুরির স্থায়ীত্ব ছিল ছিল মাত্র সাত মাস। কাজী নজরুল ইসলাম বিষয়ক একটি গদ্য রচনা মালিক পক্ষের মনঃপুত না-হওয়ায় এই চাকুরিচ্যূতি।

তাঁর রচিত সাহিত্যকর্ম সমূহ:
কাব্যগ্রন্থঃ ঝরা পালক(প্রথম কাব্যগ্রন্থ ), ধূসর পাণ্ডুলিপি (১৩তম বিসিএস প্রিলিমিনারি) , বনলতা সেন, মহাপৃথিবী, সাতটি তারার তিমির, রূপসী বাংলা, বেলা অবেলা কালবেলা, ।
উপন্যাসঃ মাল্যবান, সুতীর্থ , জলপাইহাটি, জীবনপ্রণালী,কল্যাণী ইত্যাদি।
প্রবন্ধগ্রন্থঃ কবিতার কথা। (২৮তম বিসিএস প্রিলিমিনারি)
১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ই অক্টোবর জীবনানন্দ দাশ কলকাতায় এক ট্রাম-দুর্ঘটনায় আহত হন এবং ২২শে অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন।

Add a Comment