চৈতন্য মহাপ্রভু
|- বাংলা সাহিত্যে শ্রীচৈতন্য দেবের ভূমিকা পর্যালোচনা করুন। (৩৫তম বিসিএস লিখিত)
- বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে চৈতন্যদেব কেন স্মরণীয়? (২৯তম বিসিএস লিখিত)
চৈতন্য মহাপ্রভু (১৪৮৬ – ১৫৩৪) ছিলেন একজন হিন্দু সন্ন্যাসী এবং ষোড়শ শতাব্দীর বিশিষ্ট বাঙালি ধর্ম ও সমাজ সংস্কারক। তিনি অধুনা পশ্চিমবঙ্গের নদিয়ার নবদ্বীপে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি বিশেষত রাধা ও কৃষ্ণ রূপে ঈশ্বরের পূজা প্রচার করেন এবং হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্রটি জনপ্রিয় করে তোলেন। সংস্কৃত ভাষায় শিক্ষাষ্টক নামক প্রসিদ্ধ স্তোত্রটিও তারই রচনা। ১৬ শতকে রাধা-কৃষ্ণ পালায় তিনি রুক্সিনির ভূমিকায় অভিনয় করেন।
চৈতন্যদেবের পিতৃদত্ত নাম ছিল বিশ্বম্ভর মিশ্র। (যিনি বিশ্বের ভার বহন করেন) তাঁর বাল্য নাম নিমাই। কথিত আছে যে তিনি নিম গাছের নিচে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর অপর নাম গোড়া বা গৌরাঙ্গ । তার গাত্রবর্ণ স্বর্ণালি আভাযুক্ত ছিল বলে তাকে ‘গৌরাঙ্গ’ নামে অভিহিত করা হত। শ্রী চৈতন্য সন্যাস ধর্ম গ্রহণের পর চৈতন্য নাম হয়।
তিনি ছিলেন বৈষ্ণব/মানব প্রেম ধর্মের প্রচারক। শী চৈতন্য দেবের জীবন কাহিনী নিয়ে মধ্যযুগে জীবনী সাহিত্যের সূচনা হয়। ষোড়শ শতাব্দীতে চৈতন্য মহাপ্রভুর জীবনী সাহিত্য বাংলা সাহিত্য ধারায় এক নতুন যুগের সূচনা ঘটিয়েছিল। এর মাধ্যমে বাংলা কাব্যে দেবদেবীর স্তুতিমূলক ধারা থেকে বেড়িয়ে মানুষের গুণগান, প্রেম-বিরহ, সুখ-দুঃখ ইত্যাদির শুরু হয়। সেযুগে একাধিক কবি চৈতন্য মহাপ্রভুর জীবনী অবলম্বনে কাব্য রচনা করে গিয়েছেন। তাঁর জীবিনী গ্রন্থগুলো কে কচড়া বলে। কচড়া শব্দের অর্থ দিনলিপি বা ডায়রি। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:
শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুরকে নিয়ে প্রথম জীবণী গ্রন্থ “মুরারি গুপ্তের কচড়া”। এ কাব্যের প্রকৃত নাম “শ্রী শ্রী চৈতন্য চরিতামৃত ”
কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামীর “চৈতন্য চরিতামৃত”, “চৈতন্য চরিতামৃত” সব থেকে তথ্যবহুল গ্রন্থ। এবং কৃষ্ণদাস কবিরাজ বৈষ্ণব পদাবলীর শ্রেষ্ঠ কবি।
বাংলা ভাষায় শ্রী চৈতন্যের জীবনী গ্রন্থ বৃন্দাবন দাস ঠাকুরের “চৈতন্য ভাগবত”।
এবং লোচন দাস ঠাকুরের “চৈতন্যমঙ্গল”, জয়ানন্দের “চৈতন্যমঙ্গল”, গোবিন্দ দাসের “কচড়া”, চূড়ামনি দাসের “গৌরাঙ্গ বিজয়”।
শ্রী চৈতন্য যদিও কোনো সাহিত্য রচনা করেন নি, কিন্তু মধ্যযুগের সাহিত্য বিকাশে তাঁর ভূমিকা অপরিসীম। তাঁর নামে বাংলা সাহিত্যের একটি যুগের নাম করণ করা হয়েছে।
১২০১-১৩৫০ অন্ধকার যুগ
১৩৫১-১৫০০ চৈতন্য পূর্ববর্তী যুগ
১৫০০-১৬০০ চৈতন্য যুগ
১৬০০-১৮০০ চৈতন্য পরবর্তী যুগ