জীবনী সাহিত্য

কোন ক্ষণজন্মা সৃষ্টিশীল মহৎ মানুষের জীবনকে মুখ্য করে যে সাহিত্য নির্মিত হয়, তাকে জীবনী সাহিত্য বলে। সমগ্র মধ্যযুগে কেবল শ্রীচৈতন্যদেবের জীবনকে অবলম্বন করে জীবনী সাহিত্য গড়ে উঠেছে। চৈতন্যদেব যে প্রেমধর্মের প্রতিষ্ঠা করেছেন তাতে মানুষে মানুষে উঁচু-নিচু, হিন্দু-মুসলমানে জাত বিভেদ ভুলে সবাই প্রেম মন্ত্রে উদ্দীপ্ত হয়েছে। ফলে তার শিষ্যরা চৈতন্যের প্রেমধর্ম প্রচার করতে গিয়ে চৈতন্যের জীবন কাহিনী আলোচনা করতেন, তা থেকে জীবনী সাহিত্যের সূত্রপাত।

যুগপরম্পরা বাহিত দেবমাহাত্ম্যের কল্পনার জলসাঘরে সম্পূর্ণ এক বাস্তব মানুষের কথা শোনবার জন্য এই প্রথম শ্রোতারা উৎসুক হয়ে উঠলেন। শাপভ্রষ্ট দেব-দেবী নয়, গৃহাঙ্গনের পল্লীগ্রামের বহুদিনের জানাশোনা প্রিয় মানুষটাই দেবতা হয়ে গেল। ব্যক্তিকে অবলম্বন করে এই প্রথম সাহিত্য সৃষ্টি হল।

চৈতন্যকে অনেকেই অবতার হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন, তাই তার জীবনীকাব্য ভক্তিকাব্য হয়ে পড়েছে। ভক্তের কাছে চৈতন্যছিলেন নররূপী নারায়ণ। কাব্যটিতে বৈষ্ণব ধর্মপ্রচারক চৈতন্যদেবের জীবনকে ভক্তি মিশ্রিত করে চিত্রিত করা হয়েছে বলে এটি ভাগবত হিসেবে বিবেচ্য।

চৈতন্যদেবের জীবনী প্রথম রচিত হয় সংস্কৃত ভাষায়। মুরারি গুপ্ত ‘শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্যচরিতামৃত’ গ্রন্থ রচনা করেন। তিনি চৈতন্যদেবের সমসাময়িক বলে প্রত্যক্ষ অনেক ঘটনা এ গ্রন্থে স্থান পেয়েছে। সংস্কৃত ভাষায় লেখা জীবনী কাব্য “কড়চা” নামে পরিচিত।

অতঃপর বাংলা ভাষায় রচিত চৈতন্যদেবের জীবনী বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। বাংলা ভাষায় রচিত চৈতন্যজীবনী কাব্যগুলোর মধ্যে বৃন্দাবন দাসের ‘চৈতন্যভাগবত’ সুপরিচিত, জনপ্রিয় এবং কাব্যগুণান্বিত।

চৈতন্যভাগবতঃ
বাংলা ভাষায় প্রথম চৈতন্যজীবনী কাব্য রচনা করেন বৃন্দাবন দাস । বৃন্দাবন দাসের কাব্যের নাম “চৈতন্যভাগবত”। বৃন্দাবন দাসের পিতৃপরিচয় অজ্ঞাত। গ্রন্থ মধ্যে শুধু মা নারায়ণীর নাম আছে। ‘চৈতন্যভাগবত’ গ্রন্থটির আদি নাম ছিল ‘চৈতন্যমঙ্গল’। জনশ্রুতি আছে প্রায় সমকালে রচিত লোচনদাসের ‘চৈতন্যমঙ্গল’ দেখে মা নারায়ণীর পরামর্শে বৃন্দাবন দাস নিজের কাব্যের নাম বদলে ‘চৈতন্যভাগবত’ রাখেন।

চৈতন্যচরিতামৃত
বাংলা ভাষায় কৃষ্ণদাস কবিরাজই শ্রেষ্ঠ চৈতন্যজীবনী কাব্য রচনা করেন। তিনি ছিলেন নিত্যানন্দের শিষ্য । কৃষ্ণদাস কবিরাজের কাব্যের নাম “চৈতন্যচরিতামৃত” । কৃষ্ণদাস কবিরাজ তাঁর কাব্যে খন্ডের পরিবর্তে “লীলা “ শব্দটি ব্যবহার করেন । তাঁর কাব্যটি তিনটি লীলায় বিভক্ত — আদি লীলা ,মধ্য লীলা ও অন্ত লীলা ।

চৈতন্যমঙ্গল
লোচনানন্দ দাস রচিত কাব্যের নাম চৈতন্যমঙ্গল। জয়ানন্দও চৈতন্যমঙ্গল নামে একটি কাব্য রচনা করেন।

তথ্য সংগৃহিত হয়েছে-

  • educostudy.in
  • banglalecturesheet.xyz
  • shekhapora.com

Add a Comment