উপন্যাস কাকে বলে?

সাহিত্যের শাখা প্রশাখার মধ্যে উপন্যাস অন্যতম। শুধু তাই নয়, পাঠক সমাজে উপন্যাসই সর্বাধিক বহুল পঠিত ও জনপ্রিয়তার শীর্ষে। উপন্যাসে কোনো একটি কাহিনী বর্ণিত হয়ে থাকে এবং কাহিনীটি গদ্যে লিখিত হয়। কিন্তু পূর্বে এমন এক সময় ছিল যখন কাহিনী পদ্যে লেখা হত; তখন অবশ্য তাকে উপন্যাস বলা হত
না। যেমন বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগে সব ধরনের মঙ্গলকাব্যই ছন্দে রচিত এবং তাতে গল্প বা কাহিনীই প্রকাশিত হয়েছে, তবু তাকে উপন্যাস না বলে কাব্যই বলা হত- যেহেতু কবিতার ন্যায় তা ছন্দে রচিত হয়েছে। উপন্যাস রচিত হয় গদ্যভাষায়, এই তথ্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। ছন্দোবদ্ধ রচনার অনেক পরে যেহেতু গদ্যের আবির্ভাব তাই অপেক্ষাকৃত আধুনিক কালেই গদ্যে কাহিনী লেখা হয়েছে, যেমন- গল্প বা ছোটগল্প, উপন্যাস, রম্যকাহিনী ইত্যাদি। উপন্যাসের প্রধান উপজীব্য হলো প্লট। ঐ প্লট বা আখ্যানভাগ তৈরি হয়ে ওঠে গল্প ও তার ভিতরে উপস্থিত বিভিন্ন চরিত্রের সমন্বয়ে।

বাংলা ভাষায় প্রথম সার্থক ও কালজয়ী (এবং অনেকের মতে এখন পর্যন্ত শ্রেষ্ঠ) ঔপন্যাসিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। উনিশ শতকের পূর্বে বাংলায় কোনো উপন্যাস রচিত হয়নি। ইংরেজি উপন্যাস পাঠ করে অনুপ্রাণিত হয়ে বঙ্কিম উপন্যাস রচনায় হাত দেন। তাঁর কপালকুণ্ডলা, বিষবৃক্ষ, চন্দ্রশেখর ইত্যাদি কালজয়ী কথাসাহিত্য। বঙ্কিমচন্দ্রের পরে মহৎ ঔপন্যাসিক বলতে আমরা প্রধানত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে বুঝি। একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, পৃথিবীতে যেখানে যত বাঙালি রয়েছে তাদের ভিতরে শরৎচন্দ্রই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি পঠিত ও জনপ্রিয়।


বাংলা সাহিত্যের আধুনিক যুগে অবশ্য তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, বনফুল, সমবেশ বসু, শহীদুল্লা কায়সার, আবু ইসহাক, হাসান আজিজুল হক প্রমুখ বিভিন্ন গল্পাকার ও ঔপন্যাসিক খ্যাতি অর্জন করেছেন।

উপন্যাস বহু রকমের হতে পারে। যেমন- ঐতিহাসিক উপন্যাস, সামাজিক উপন্যাস, কাব্যধর্মী উপন্যাস, ডিটেকটিভ উপন্যাস, মনোবিশ্লেষণধর্মী উপন্যাস ইত্যাদি।

বঙ্কিমচন্দ্রের সমকালে ঐতিহাসিক উপন্যাস খুব জনপ্রিয় ছিল। তাঁর সমসাময়িক রমেশচন্দ্র দত্ত তাঁরই মতো বহু ইতিহাস-আশ্রিত উপন্যাস রচনা করেছিলেন- যেমন মাধবী-কঙ্কণ, রাজপুত-জীবনসন্ধ্যা, মহারাষ্ট্র-জীবনপ্রভাত ইত্যাদি।

তবে তাঁর সমসাময়িক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় যেভাবে বাঙালি পাঠকসমাজকে মন্ত্রমুগ্ধ করে জয় করে নেন, তার সমকক্ষ আর কাউকে দেখা যায় না।

Add a Comment