প্রত্যয়
|১. ছেলেটি বড় লাজুক।
২. বড়াই করা ভালো না।
৩. ঘরামি ডেকে ঘর ছেয়ে নে।
ওপরের ‘লাজুক’, ‘বড়াই’ শব্দগুলো গঠিত হয়েছে এভাবে : লাজুক =লাজ + উক; বড়াই=বড়+আই; ঘরামি = ঘর+আমি। লাজ’ ‘বড়’ ও ‘ঘর’ শব্দগুলোর পরে যথাক্রমে ‘উক’, ‘আই’ ও ‘আমি’ (প্রত্যয়) যোগ করে নতুন শব্দ গঠিত হয়েছে।
শব্দের সঙ্গে (শেষে) যেসব প্রত্যয় যোগে নতুন শব্দ গঠিত হয়, তাদের তদ্ধিত প্রত্যয় বলা হয়।
দ্রষ্টব্য : ‘লাজ’ ‘বড়’ ও ‘ঘর’- এ শব্দগুলোর সাথে কোনো শব্দ/বিভক্তি যুক্ত হয় নি। বিভক্তিহীন নাম শব্দকে বলা হয় প্রাতিপদিক। প্রাতিপদিক তদ্ধিত প্রত্যয়ের প্রকৃতি বলে প্রাতিপদিককে নাম প্রকৃতিও বলা হয়। ধাতু যেমন কৃৎ-প্রত্যয়ের প্রকৃতি, তেমনি প্রাতিপদিকও তদ্ধিত প্রত্যয়ের প্রকৃতি। প্রত্যয় যুক্ত হলে ধাতুকে বলা হয় ক্রিয়া প্রকৃতি এবং প্রাতিপদিককে বলা হয় নাম প্রকৃতি।
শব্দ গঠনের উদ্দেশ্যে শব্দ বা নাম প্রকৃতির এবং ক্রিয়া প্রকৃতির পরে যে শব্দাংশ যুক্ত হয় তাকে প্রত্যয় বলে। যেমন-
হাত + ল = হাতল
ফুল + এল = ফুলেল
মুখ + র = মুখর
চল্ + অন্ত = চলন্ত
জম্ + আ = জমা
এখানে ল, এল, র, অন্ত, আ হল প্রত্যয়।
বাংলা শব্দ গঠনে দুই প্রকার প্রত্যয় পাওয়া যায়।
১. তদ্ধিত প্রত্যয়ঃ শব্দমূল বা নাম শব্দের সঙ্গে যে প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ তৈরি হয় তাকে বলে তদ্ধিত প্রত্যয়। যেমন : হাত + ল = হাতল, ফুল + এল = ফুলেল ও মুখ + র = মুখর শব্দের যথাক্রমে ল, এল ও র তদ্ধিত প্রত্যয়।
ক. বাংলা তদ্ধিত প্রত্যয়ঃ নিম + আই = নিমাই।
খ. সংস্কৃত তদ্ধিত প্রত্যয়ঃ সমর + ইক = সামরিক।
গ. বিদেশি তদ্ধিত প্রত্যয়ঃ মুনশি + আনা = মুনশিয়ানা।
তদ্ধিতান্ত শব্দ: তদ্ধিত প্রত্যয় সাধিত শব্দকে বলা হয় তদ্ধিতান্ত শব্দ। যেমন : নিমাই, সামরিক, মুনশিয়ানা, হাতল, ফুলেল ও মুখর।
২. কৃৎপ্রত্যয়ঃ ধাতুর সঙ্গে যে সব প্রত্যয় যুক্ত হয়ে শব্দ গঠন করে তাদেরকে কৃৎপ্রত্যয় বলে। কৃৎপ্রত্যয়ের প্রকৃতি বুঝাতে ‘√’ ব্যবহার করা হয়। বাংলা ভাষায় দুই ধরনের কৃৎপ্রত্যয়ের ব্যবহার দেখা যায়।
ক. বাংলা কৃৎপ্রত্যয়ঃ √বাঁচ্ + অন = বাঁচন, √কাঁদ্ + অন = কাঁদন।
খ. সংস্কৃত কৃৎপ্রত্যয়ঃ √পঠ্ + অক = পাঠক, √কৃ + অক = কারক।
কৃদন্ত শব্দ: কৃৎপ্রত্যয় সাধিত শব্দকে বলা হয় কৃদন্ত শব্দ। যেমন : কাঁদন, কারক, চলন্ত, জমা ও লিখিত।