প্রকৃতি-প্রত্যয় সম্পর্কিত পার্থক্য
|প্রকৃতি ও প্রত্যয়ের মধ্যে পার্থক্য
১. প্রত্যয় সাধিত শব্দ থেকে প্রত্যয় বাদ দিলে যে অংশটুকু থাকে, তার নামই প্রকৃতি। যেমন- ধন + ঈ = ধনী। এখানে ‘ধন’ হল প্রকৃতি। শব্দ বা ধাতুর শেষে বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠিত হয় তার নামই প্রত্যয়। যেমন- সাপ + উড়ে = সাপুড়ে। এখানে ‘উড়ে’ হচ্ছে প্রত্যয়।
২. প্রকৃতি হল শব্দ মূল বা ধাতু। প্রত্যয় হল নতুন শব্দ গঠন করার একটা সহজ উপাদান। প্রকৃতির সাথে যুক্ত হয়ে নতুন নতুন শব্দ গঠন করাই প্রত্যয়ের লক্ষ্য।
৩. প্রকৃতির নিজস্ব অর্থ আছে। প্রত্যয় অর্থহীন বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি মাত্র। এদের নিজস্ব কোন অর্থ নেই।
উপসর্গ ও প্রত্যয়ের মধ্যে পার্থক্য :
১. উপসর্গ শব্দ বা ধাতুর আগে বসে নতুন শব্দ গঠন করে। যেমন- বি+ হার= বিহার। এখানে ‘বি’ একটি উপসর্গ। প্রত্যয় ধাতু বা শব্দের পরে বসে নতুন শব্দ গঠন করে।
২. উপসর্গ অন্য শব্দের পূর্বে বসে তার অর্থেও পরিবর্তন ঘটায়। যেমন ‘হার’ শব্দের পূর্বে ‘প্র’ বসে গঠিত হয় ‘প্রহার’ যার অর্থ কাউকে মারা বা শারিরীক কষ্ট দেওয়া। আবার ‘প্র’ না বসে ‘বি’ যুক্ত হলে অর্থ হয়- ভ্রমণ। প্রত্যয় ধাতু বা শব্দের পরে বসে শুধুমাত্র নতুন শব্দ তৈরিতে সাহায্য করে।
৩. যেসব অব্যয়সূচক শব্দ বা শব্দাংশ কৃদন্ত বা নাম শব্দের পূর্বে বসে অর্থেও সম্প্রসারণ, সংকোচন ও পরিবর্তন ঘটায় তাকে উপসর্গ বলে। যেমন: ‘জন্মা’ একটা শব্দ। এর আগে ‘বি’ উপসর্গ যুক্ত হয়ে ‘বিজন্মা’ শব্দটি গঠিত হয়েছে। যে বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি ধাতুর পরে যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে, তাকে প্রত্যয় বলে। যেমনÑ ‘কৃ’ ধাতুর সাথে ‘তব্য’ প্রত্যয় যুক্ত হয়ে ‘কর্তব্য’ শব্দটি গঠিত হয়।
৪. উপসর্গ বিভক্তির মত ব্যবহৃত হয় না। প্রত্যয়-সাধিত শব্দের সাথে কেবলমাত্র বিভক্তি যুক্ত হলেই তা বাক্যে ব্যবহৃত হতে পারে।
প্রত্যয ও বিভক্তির মধ্যে পার্থক্য:
১. যে বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি কোন শব্দ বা ধাতুর পরে যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে তাকে প্রত্যয় বলে। যেমন: নাচ্ + অন = নাচন, হাত + আ = হাতা। এখানে ‘নাচ’ ধাতুর সাথে ‘অন’ প্রত্যয় যোগে ‘নাচন’ এবং ‘হাত’ শব্দের সাথে ‘আ’ প্রত্যয় যোগে ‘হাতা’ শব্দটি গঠিত হয়েছে। কাজেই ‘অন’ ও ‘আ’ এখানে প্রত্যয়। বাক্যের বিভিন্ন শব্দের সঙ্গে অন্বয় সাধনের জন্য নামপদ বা ক্রিয়াপদের সাথে যেসব বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি যুক্ত হয় তাকে বিভক্তি বলে। যেমন : কাজলকে বাড়িতে দেখেছি। এখানে কাজলের সাথে ‘কে’ যুক্ত হয়ে ‘কাজলকে’ এবং বাড়ির সাথে ‘তে’ যুক্ত হয়ে ‘বাড়িতে’ হয়েছে। কাজেই ‘কে’ এবং ‘তে’ এখানে বিভক্তি।
২. ধাতু বা শব্দের পরে প্রত্যয় যোগে যে নতুন শব্দ গঠিত হয় তাকে সাধিত শব্দ বলে। সাধিত শব্দের সাথে বিভক্তি যোগ হলে সাধিত শব্দটি পদে পরিণত হয়। অর্থাৎ প্রত্যয়-সাধিত শব্দ কেবলমাত্র বিভক্তি যুক্ত হলেই বাক্যে ব্যবহৃত হতে পারে।
৩. প্রত্যয়ের নিজস্ব কোন অর্থ নেই। বিভক্তিরও নিজস্ব কোন অর্থ নেই, শুধু বর্ণ বা বর্ণ সমষ্টি তথা চিহ্ন মাত্র। যেমন: এ, য়, তে, কে, রে, র ইত্যাদি।