উপসর্গ

বিগত সালের BCS Preliminary- তে উপসর্গ থেকে প্রশ্ন এসেছে ১৫টি।

উপসর্গ কী? কাকে বলে?
বাংলা ভাষায় এমন কতগুলাে অব্যয়সূচক শব্দাংশ রয়েছে, যা স্বাধীন পদ হিসেবে বাক্যে ব্যবহৃত হতে পারে না। এগুলাে অন্য শব্দের আগে বসে এর প্রভাবে শব্দটির কয়েক ধরনের পরিবর্তন সাধিত হয়। ভাষায় ব্যবহৃত এসব অব্যয়সূচক শব্দাংশেরই নাম উপসর্গ। ইংরেজিতে উপসর্গকে (suffix) বলে।

যেমন – ‘কাজ’ একটি শব্দ। এর আগে ‘অ’ অব্যয়টি যুক্ত হলে হয় ‘অকাজ’ – যার অর্থ নিন্দনীয় কাজ। এখানে অর্থের সংকোচন হয়েছে। ‘পূর্ণ’ (ভরা) শব্দের আগে ‘পরি’ যােগ কায় পরিপূর্ণ হলাে। এটি পূর্ণ শব্দের সম্প্রসারিত রূপ (অর্থে ও আকৃতিতে)। হার’ শব্দের পূর্বে ‘আ’ যুক্ত করে ‘আহার’ (খাওয়া), ‘প্র’ যুক্ত করে ‘প্রহার’ (মারা), ‘বি’ যুক্ত করে ‘বিহার’ (ভ্রমণ), ‘পরি’ যােগ করে ‘পরিহার’ (ত্যাগ), ‘উপ’ যােগ করে ‘উপহার’ (পুরস্কার), ‘সম’ যােগ করে ‘সংহার’ (বিনাশ) ইত্যাদি বিভিন্ন অর্থে বিভিন্ন শব্দ তৈরি হয়েছে। এ উপসর্গগুলাের নিজস্ব কোনাে অর্থবাচকতা নেই, কিন্তু অন্য শব্দের আগে যুক্ত হলে এদের অর্থদ্যোতকতা বা নতুন শব্দ সৃজনের ক্ষমতা থাকে।

উপসর্গের কাজ
১. নতুন অর্থবােধক শব্দ তৈরি হয়। যেমন- হার থেকে আহার, প্রহার, বিহার ইত্যাদি।
২. শব্দের অর্থের পূর্ণতা সাধিত হয়। যেমন- ভোগ থেকে – উৎকৃষ্টরূপে(পূর্ণরূপে) ভোগ করাকে উপভোগ বলি। পুষ্টি থেকে পরিপুষ্টি, ভাত(আলোকিত) থেকে প্রভাত(যখন প্রচুর পরিমাণে আলোকিত হয়)।
৩. শব্দের অর্থের সম্প্রসারণ ঘটে। যেমন- তাপ একটি শব্দ যার অর্থ উষ্ণতা, কিন্তু প্রতাপ অপর একটি নতুন শব্দ যার অর্থ প্রভাব(প্রভাব নিজেও উপসর্গের মাধ্যমে সৃষ্ঠ)
৪. শব্দের অর্থের সংকোচন ঘটে। সম্পূর্ণ চোখ/নজর দিয়ে দেখা এক কথা অন্যদিকে আড়নজর/আড়চোখে দেখা মানে কিন্তু একটু বাঁকা করে দেখা। এক্ষেত্রে দেখার বিস্তৃতি সংকুচিত হচ্ছে।
৫. শব্দের অর্থের পরিবর্তন ঘটে। যেমন- কাজ থেকে অকাজ, কুকাজ ইত্যাদি।

উপসর্গের বৈশিষ্ট্য
১. উপসর্গের নিজের কোন অর্থ নেই।
২. শব্দের পূর্বে বসে, আর প্রত্যয় বসে শব্দের পরে।
৩. এগুলো অব্যয় স্থানীয় পদ।

উপসর্গের অর্থবাচকতা আছে কিন্তু অর্থ দ্যোতকতা নেই।
বাংলা ভাষায় উপসর্গ বাক্যে পৃথকভাবে স্বাধীন কোনো পদ হিসেবে ব্যবহৃত না হয়ে বিভিন্ন শব্দের শুরুতে আশ্রিত হয়ে ব্যবহৃত হয়। এগুলোর নিজস্ব কোন অর্থ নেই, তবে এগুলো শব্দের পূর্বে ব্যবহৃত হয়ে শব্দের অর্থের পরিবর্তন, পরিবর্ধন বা সংকোচন সাধন করে। অর্থাৎ উপসর্গ নিজে অর্থহীন কিন্তু অর্থ-দ্যোতক (দ্যোতক =সূচক, প্রকাশক) হিসাবে কাজ করতে পারে। যেমন – প্র , পরা , দু ,নি ইত্যাদি উপসর্গ সমূহের নিজের কোন অর্থ নেই অথচ যে শব্দের পূর্বে বসে সে শব্দের আকৃতিগত পরিবর্তনের পাশাপাশি অর্থের মাঝে দ্যোতকতা সৃষ্টিতে বেশ পারদর্শি ।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায় “হার” শব্দটির অর্থ হচ্ছে পরাজয় । এই শব্দটির পূর্বে ‘প্র’ উপসর্গটি যুক্ত করলে নতুন শব্দ গঠিত হয় প্র +হার=প্রহার , ‘বি’ উপসর্গটি যুক্ত করলে নতুন শব্দ গঠিত হয় বি+হার= বিহার(ভ্রমণ) , ‘উপ’ উপসর্গটি যুক্ত করলে নতুন শব্দ গঠিত হয় উপ+হার= উপহার , ‘আ’ উপসর্গটি যুক্ত করলে নতুন শব্দ গঠিত হয় আ+হার= আহার (খাওয়া)।

একই শব্দ অথচ উপসর্গের ভিন্নতার কারণে ভিন্ন ভিন্ন অর্থ লক্ষণীয় । অর্থাৎ প্রতিটি ক্ষেত্রে অর্থের দ্যোতকতা সৃষ্টি হয়েছে । শুধুমাত্র অর্থের পরিবর্তনের মাধ্যমে নয় , অর্থের পরিবর্ধনের মাধ্যমেও উপসর্গ অর্থদ্যোতকতা সৃষ্টি করতে পারে । প্রসঙ্গত বলা যায় যে , ‘জরুরী’ শব্দটি দিয়ে আমরা যা বুঝে থাকি তার পূর্বে ‘অতি’ উপসর্গটি যুক্ত করলে নতুন শব্দ গঠিত হয় অতি+জরুরী = অতিজরুরী । এতে অর্থের পরিধি অনেক বেড়ে যায় , অর্থের মাঝে দ্যোতকতাও লক্ষ্য করা যায় । অর্থের পরিবর্তন কিংবা পরিবর্ধন ছাড়াও অর্থসংকোচন করেও উপসর্গ অনেক সময় অর্থদ্যোতকতা সৃষ্টি করতে পারে । যেমন : ‘দেশ’ দিয়ে যা বুঝি তার পূর্বে ‘প্র’ উপসর্গটি যুক্ত করলে নতুন শব্দ গঠিত হয় প্র +দেশ=প্রদেশ । এতে অর্থের পরিধি অনেক কমে যায় অর্থের মাঝে দ্যোতকতাও লক্ষ্য করা যায় । তাই উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে , উপসর্গের নিজের অর্থ না থাকলেও অন্য শব্দের অর্থের
মাঝে দ্যোতকতা সৃষ্টিতে অসাধারণ ক্ষমতা সংরক্ষণ করে । এ কারণে বলা হয়ে থাকে ” উপসর্গের অর্থবাচকতা নেই কিন্তু অর্থদ্যোতকতা আছে ।”

উপসর্গ ও প্রত্যয়ের পার্থক্য
উপসর্গ ও প্রত্যয় উভয়ই বাংলা শব্দ গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখে। সাধিত শব্দ যেসব নিয়মে গঠিত হয় তাদের মধ্যে উপসর্গ ও প্রত্যয় অন্যতম। কিন্তু এরা ভিন্ন ভাবে শব্দ গঠন করে।
১. একটি শব্দের আগে উপসর্গ এবং পরে প্রত্যয় বসে। (২৪, ১৭তম বিসিএস প্রিলিমিনারি) যেমন- সাধু শব্দের পূর্বে ‘অ উপসর্গ’ যোগে অসাধু বিপরীতার্থক শব্দটি গঠন করা গেল। অপর দিকে সাধু শব্দের পরে ‘তা’ প্রত্যয় যোগে সাধুতা বিশেষ্য পদ গঠন করা যায়।
২. লক্ষ করুন, উপসর্গ যোগে কোন শব্দের পদ পরিবর্তন হয় না, যেমন সাধু ও অসাধু উভয়ই বিশেষণ। কিন্তু প্রত্যয়যোগে শব্দের পদ পরিবর্তিত হয়। যেমন- সাধু বিশেষ্য, কিন্তু সাধুতা বিশেষণ।

উপসর্গের প্রকারভেদ
বাংলা ভাষায় তিন প্রকার উপসর্গ আছে :
১. বাংলা উপসর্গ
২. তৎসম (সংস্কৃত) উপসর্গ এবং
৩. বিদেশি উপসর্গ

Add a Comment