ণ-ত্ব বিধান
|বাংলা ভাষায় সাধারণত মূর্ধন্য-ণ ধ্বনির ব্যবহার নেই। সেজন্য বাংলা (দেশি), তদ্ভব ও বিদেশি শব্দের বানানে মূর্ধন্য বর্ণ (ণ) লেখার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু বাংলা ভাষায় বহু তৎসম বা সংস্কৃত শব্দে মূর্ধন্য-ণ এবং দন্ত্য-ন-এর ব্যবহার আছে। তা বাংলায় অবিকৃতভাবে রক্ষিত হয়। তৎসম শব্দের বানানে ণ-এর সঠিক ব্যবহারের নিয়মই ণত্ব বিধান। (২১তম বিসিএস প্রিলিমিনারি)
ণ ব্যবহারের নিয়ম
১. ট-বর্গীয় ধ্বনির আগে তৎসম শব্দে সব সময় মূর্ধন্য ‘ণ’ যুক্ত হয়। যেমন- ঘণ্টা, লণ্ঠন, কাণ্ড ইত্যাদি।
২. ঋ, র, ষ – এর পরে মূর্ধন্য ‘ণ’ হয়। যেমন- ঋণ, তৃণ, বর্ণ, বর্ণনা, কারণ, মরণ, ব্যাকরণ, ভীষণ, ভাষণ, উষ্ণ ইত্যাদি।
৩. ঋ, র, ষ-এর পরে স্বরধ্বনি, য য় ব হ ং এবং ক-বর্গীয় ও প-বর্গীয় ধ্বনি থাকলে তার পরবর্তী ন মূর্ধন্য ‘ণ’ হয়। যেমন – কৃপণ (ঋ-কারের পরে প্, তার পরে ণ), হরিণ (র-এর পরে ই, তার পরে ণ) অর্পণ (অর্ + প + অ+ণ), লক্ষণ (ক + ষ + অ + ণ)। এরূপ – দর্পণ(কিন্তু দর্শন), রুক্মিণী, ব্রাহ্মণ ইত্যাদি।
ক. এই নিয়মের অধীনেই লক্ষ্য করুন-
নাম- প্রণাম
নতি- প্রণতি, পরিণতি
নীত- প্রণীত
বহন- পরিবহণ
মান- প্রমাণ
প্র, পরা, পরি, নির এই চারটি উপসর্গের পর কৃৎ প্রত্যয়ের ন, ণ হয়। যেমন- প্রণোদিত, প্রণিধান, প্রবণ, প্রয়াণ, পরিনয়, প্রণয়, প্রবণ, প্রবাহিণী, নির্ণয়, নির্নীত ইত্যাদি।
খ. মূল শব্দ ‘অয়ন’ কিন্তু নিচের শব্দগুলোতে ণ হয়
রামায়ণ, নারায়ণ, উত্তরায়ণ, রবীদ্রায়ণ, চন্দ্রায়ণ ইত্যাদি।
৪. সমাসবদ্ধ শব্দে সাধারণত ণ-ত্ব বিধান খাটে না। এরূপ ক্ষেত্রে ন হয়। যেমন – ত্রিনয়ন, সর্বনাম, দুর্নীতি, দুর্নাম, দুর্নিবার, পরনিন্দা, অগ্রনায়ক।
৫. ত-বর্গীয় বর্ণের সঙ্গে যুক্ত ন কখনো ণ হয় না, ন হয়। যেমন – অন্ত, গ্রন্থ, ক্রন্দন ইত্যাদি।
৬. খাঁটি বাংলা শব্দে ও তদ্ভব শব্দে ণ হয় না- যেমন অঘ্রান, গুঞ্জরন, ধরন(কিন্তু ধারণ) চিরুনি ইত্যাদি।
৭. কোন বিদেশি শব্দেই ণ হয় না- যেমন আয়রন, মোহরানা, হর্ন, ফার্নিচার ইত্যাদি।
৮. আরও দেখুন বানানে ন ও ণ এর কারনে অর্থের কিরূপ পরিবর্তন হয়।
৯. কতকগুলো শব্দে স্বভাবতই ণ হয়।
চাণক্য মাণিক্য গণ, বাণিজ্য লবণ মণ
বেণু বীণা কঙ্কণ কণিকা।
কল্যাণ শোণিত মণি, স্থাণু গুণ পুণ্য বেণী
ফণী অণু বিপণি গণিকা।
আপণ(দোকান) লাবণ্য বাণী, নিপুণ ভণিতা পাণি(হাত)
গৌণ কোণ ভাণ পণ শাণ।
চিকণ নিক্কণ তূণ, কফণি (কনুই) বণিক গুণ
গণনা পিণাক পণ্য বাণ।