সংস্কৃত ব্যঞ্জনসন্ধি

বিগত সালের BCS Preliminary- তে এখান থেকে প্রশ্ন এসেছে টি।

স্বরে-ব্যঞ্জনে, ব্যঞ্জনে-স্বরে ও ব্যঞ্জনে-ব্যঞ্জনে যে সন্ধি হয় তাকে ব্যঞ্জন সন্ধি বলে। এদিক থেকে ব্যঞ্জন সন্ধিকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:
১. ব্যঞ্জনধ্বনি + স্বরধ্বনি
২. স্বরধ্বনি + ব্যঞ্জনধ্বনি
৩. ব্যঞ্জনধ্বনি + ব্যঞ্জনধ্বনি

১. ব্যঞ্জনধ্বনি + স্বরধ্বনিঃ ক, চ, ট, ত্, পৃ-এর পরে স্বরধ্বনি থাকলে সেগুলাে যথাক্রমে গ্‌, জ্‌, ড্‌ (ড়), দ্‌, ব্‌ হয়। পরবর্তী স্বরধ্বনিটি পূর্ববর্তী ব্যঞ্জনধ্বনির সঙ্গে যুক্ত হয়। যেমন-
ক্ + অ = গ, দিক্ + অন্ত =দিগন্ত।
চ্ + অ = জ, ণিচ্ + অন্ত = ণিজন্ত।
ট্‌ + আ = ড়, ষ + আনন = ষড়ানন।
ত্ + অ = দ, তৎ + অবধি = তদবধি।
প্‌ + অ = ব, সুপ + অন্ত = সুবন্ত। এরূপ- বাগীশ, তদন্ত, বাগাড়ম্বর, কৃদন্ত, সদানন্দ, সদুপায়, সদুপদেশ, জগদিন্দ্র ইত্যাদি।

২. স্বরধ্বনি + ব্যঞ্জনধ্বনিঃ স্বরধ্বনির পর ছ থাকলে উক্ত ব্যঞ্জনধ্বনিটি দ্বিত্ব (চ্ছ) হয়। যথা-

অ + ছ = চ্ছ, এক + ছত্র = একচ্ছত্র।
আ + ছ = চ্ছ, কথা + ছলে = কথাচ্ছলে।
ই + ছ = চ্ছ, পরি + ছদ = পরিচ্ছদ।

এরূপ – মুখচ্ছবি, বিচ্ছেদ, পরিচ্ছেদ, বিচ্ছিন্ন, অঙ্গচ্ছেদ, আলােকচ্ছটা, প্রতিচ্ছবি, প্রচ্ছদ, আচ্ছাদন, বৃক্ষচ্ছায়া, স্বচ্ছন্দে, অনুচ্ছেদ ইত্যাদি।

৩. ব্যঞ্জনধ্বনি + ব্যঞ্জনধ্বনি
(ক) ১. ত্ ও দ্‌-এর পর চ্‌ ও ছ্‌, থাকলে ত্ ও দ্‌ স্থানে চ্‌ হয়। যেমন—
ত্‌+ চ = চ্চ, সৎ + চিন্তা =সচ্চিন্তা।
ত্ + ছ = চ্ছ, উৎ + ছেদ = উচ্ছেদ।
দ্‌ + চ = চ্চ, বিপদ + চয় = বিপচ্চয়।
দ্‌ + ছ = চ্ছ, বিপদ + ছায়া = বিপচ্ছায়া। এরূপ — উচ্চারণ, শরচ্চন্দ্র, সচ্চরিত্র, তচ্ছবি ইত্যাদি।

২. ত্ ও দ-এরপর জ ও ঝ থাকলে ত্ ও দ্-এর স্থানে জ হয়। যেমন—
ত্ + জ = জ্জ, সৎ + জন = সজ্জন।
দ্ + জ = জ্জ, বিপদ + জাল =বিপজ্জাল।
ত্ + ঝ = জ্ব, কুৎ + ঝটিকা = কুজ্ঝটিকা। এরূপ – উজ্জ্বল, তজ্জন্য, যাবজ্জীবন, জগজ্জীবন ইত্যাদি।

৩. ত্ ও দ্‌-এরপর শ থাকলে ত্ ও দ্‌-এর স্থলে চ্‌ এবং শ্‌-এর স্থলে ছ উচ্চারিত হয়। যেমন-
ত্ + শ = চ + ছ = চ্ছ; উৎ + শ্বাস = উচ্ছ্বাস এরূপ – চলচ্ছক্তি, উচ্ছল ইত্যাদি।

৪. ত্ ও দ্‌-এর পর ড্‌ থাকলে ত্ ও দ্ এর স্থানে ড্ হয়। যেমন-
ত্ + ড = ড্ড; উৎ + ডীন = উড্ডীন। এরূপ – বৃহড্‌ঢক্কা।

৫. ত্ ও দ্‌ এর পর হ থাকলে ত্ ও দ্‌ এর স্থলে দ এবং হ এর স্থলে ধ্‌ হয়। যেমন
ত্ + হ = দ্‌ + ধ = দ্ধ; উৎ + হার = উদ্ধার।
দ্‌ + হ = দ + ধ = দ্ধ; পদ্ + হতি = পদ্ধতি। এরূপ – উদ্ধৃত, উদ্ধত, তদ্ধিত ইত্যাদি।

৬. ত্ ও দ্‌, এর পর ল্ থাকলে ত্ ও দ্-এর স্থলে ল উচ্চারিত হয়। যেমন
ত্ + ল = ল্ল; উৎ + লাস = উল্লাস। এরূপ – উল্লেখ, উল্লিখিত, উল্লেখ্য, উল্লঙ্ঘন ইত্যাদি।

(খ)
১. অঘোষ ধ্বনি + ঘোষ ধ্বনি, এভাবে থাকলে ঘোষ ধ্বনির প্রভাবে অঘোষ ধ্বনিটি ঘোষ ধ্বনিতে পরিণত হয়। যথা :
ক্ + দ = গ্‌ + দ; বাক্ + দান = বাগদান।
ক্‌ + আ = গ্‌ + আ; বাক্+আড়ম্বর = বাগাড়ম্বর। (৩০তম বিসিএস প্রিলিমিনারি)
ট্‌ + য = ড়্‌ + য; ষট্‌ + যন্ত্র = ষড়যন্ত্র।
ট্‌ + ঋ = ড়্‌ + ঋ; ষট্ + ঋতু = ষড়ঋতু। (১৭তম বিসিএস প্রিলিমিনারি)
ত্‌+ ঘ = দ্‌ + ঘ; উৎ + ঘাটন = উদ্‌ঘাটন।
ত্ + য = দ্‌ + য; উৎ + যােগ = উদ্যোগ।
ত্ + ব = দ্‌ + ব; উৎ +বন্ধন = উদ্বন্ধন।
ত্ + র = দ্‌ + র; তৎ + রূপ = তদ্রুপ।

এরূপ -দিগ্বিজয়, উদ্যম, উদ্‌গার, উদ্‌গিরণ, উদ্ভব, বাগ্‌জাল, সদ্‌গুরু, বাগ্‌দেবী ইত্যাদি।

২. নাসিক্য বর্ণ(ঙ, ঞ, ণ, ন, ম) পরে থাকলে পূর্ববর্তী অঘােষ অল্পপ্রাণ(বর্গের প্রথম বর্ণ) স্পর্শধ্বনি সেই বর্গীয় ঘােষ স্পর্শধ্বনি কিংবা নাসিক্যধ্বনি হয়। যথা:
ক্ + ন = গ/ঙ + ন; দিক্ + নির্ণয় = দিগ্‌নির্ণয় বা দিঙ্‌নির্ণয়।
ত্ + ম = দ/ন+ ম; তৎ + মধ্যে = তদ্‌মধ্যে বা তন্মধ্যে।
লক্ষণীয় : এরূপ ক্ষেত্রে সাধারণত নাসিক্য ব্যঞ্জনই বেশি প্রচলিত। যেমন – বাক্ + ময় = বাঙ্‌ময়, তৎ + ময় = তন্ময়, মৃৎ + ময় = মৃন্ময়, জগৎ + নাথ = জগন্নাথ ইত্যাদি। এরূপ—উন্নয়ন, উন্নীত, চিন্ময় ইত্যাদি।

৩. ম্ এর পর যে কোনাে বর্গীয় ধ্বনি থাকলে ম্ ধ্বনিটি সেই বর্গের নাসিক্য ধ্বনি হয়। যেমন—
ম্ + ক = ঙ + ক্; শম্ + ক =শঙ্কা।
ম্‌ + চ = ঞ + চ্‌; সম্ + চয় = সঞ্চয়।
ম্ + ত = ন্‌ + ত; সম্ + তাপ = সন্তাপ।
এরূপ – কিম্ভূত, সন্দর্শন, কিন্নর, সম্মান, সন্ধান, সন্ন্যাস ইত্যাদি।

দ্রষ্টব্য: আধুনিক বাংলায় ম্-এর পর ক -বর্গীয় ধ্বনি থাকলে ম্ স্থানে প্রায়ই ঙ না হয়ে অনুস্বার (ং) হয়।
যেমন – সম্ + গত = সংগত,
অহম্ + কার = অহংকার,
সম্ + খ্যা = সংখ্যা।
এরূপ –সংকীর্ণ, সংগীত, সংগঠন, সংঘাত ইত্যাদি।

৪. ম্‌-এর পর অন্তঃস্থ ধ্বনি য, র, ল, ব, কিংবা শ, ষ, স, হ থাকলে, ম্‌ স্থলে অনুস্বার (ং) হয়। যেমন—
সম্ + যম = সংযম,
সম্ + বাদ = সংবাদ,
সম্+ রক্ষণ = সংরক্ষণ,
সম্ + লাপ = সংলাপ
সম্ + শয় = সংশয়
সম্ + সার = সংসার,
সম্ + হার = সংহার।
এরূপ – বারংবার, কিংবা, সংবরণ, সংযােগ, সংযােজন, সংশােধন, সর্বংসহা, স্বয়ংবরা।
ব্যতিক্রম : সম্রাট (সম্ + রাট)।

৫. চ্‌ ও জ্‌-এর পরে নাসিক্য ধ্বনি তালব্য হয়। যেমন–
চ্ + ন = চ + ঞ, যাচ্ + না = যাচ্ঞা , রাজ্ + নী =রাজ্ঞী।
জ্ + ন = জ + ঞ, যজ + ন = যজ্ঞ।

৬. দ্‌ ও ধ্‌ এর পরে ক, খ, চ, ছ, ট, ঠ, ত, থ, প, ফ, থাকলে দ্‌ ও ধ্‌ স্থলে অঘােষ অল্পপ্রাণ ধ্বনি হয়।
যেমন— দ্‌> ত্ তদ্ + কাল = তৎকাল
ধ্‌ > ত্ ক্ষুধ + পিপাসা =ক্ষুৎপিপাসা।
এরূপ — হৃৎকম্প, তৎপর, তত্ত্ব ইত্যাদি।

৭. দ্‌ কিংবা ধ্‌-এর পরে স্ থাকলে, দ্‌ ও ধ্‌ স্থলে অঘােষ অল্পপ্রাণ ধ্বনি হয়। যেমন
বিপদ + সংকুল = বিপৎসংকুল। এরূপ — তৎসম।

৮. ষ্‌-এর পরে ত্ বা থ্‌ থাকলে, যথাক্রমে ত্ ও থ্‌ স্থানে ট ও ঠ হয়। যেমন
কৃষ্‌ + তি = কৃষ্টি, ষষ্‌ + থ = ষষ্ঠ।

৯. বিশেষ নিয়মে সাধিত কতগুলাে সন্ধি উৎ + স্থান = উত্থান; সম্ + কার = সংস্কার, উৎ + স্থাপন = উত্থাপন, সম্ + কৃত = সংস্কৃত, পরি + কার = পরিষ্কার। এরূপ,- সংস্কৃতি, পরিকৃত ইত্যাদি।


👉 Read More...👇

Add a Comment