ই-কার এবং ঈ-কার
|১। সংস্কৃত, তদ্ভব ও দেশি প্রায় সকল স্ত্রীবাচক শব্দের শেষে সর্বদা ‘ঈ’ কার হয়। যেমন-নবাবজাদী, ছুকরী, নাচনেওয়ালী, গাভী, দাসী, কিঙ্করী, রানী, হরিণী, পিশাচী, মানবী, তরুণী, যুবতী, নেত্রী ইত্যাদি।
২। তৎসম শব্দ ছাড়া সকল ক্ষেত্রে ই-কার বাবহৃত হবে। যেমন- গাড়ি, বাড়ি, শাড়ি ইত্যাদি।
৩। ‘তা’ প্রত্যয় যুক্ত শব্দের মধ্যাংশে ই-কার বসে। অর্থাৎ মূল শব্দের সাথে ঈ-কার থাকলে ও ‘তা’ প্রত্যয়ের সাথে ই-কার বসে। যেমন- ‘অপকারী’ এর সাথে ‘তা’ প্রত্যয় যুক্ত হয়ে ‘অপকারিতা’ হয়। তেমনিভাবে- আলাপচারিতা, বিরধিতা, বিলাসিতা, বিদ্রোহিতা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা, সহকারিতা, বৈরিতা ইত্যাদি।
৪। যে সব শব্দের সাথে ‘ইনী’ প্রত্যয় যুক্ত করে স্ত্রীবাচক শব্দে রূপান্তর করা হয়, সে সব শব্দের ঈ-কার প্রবর্তিত হয়ে ই-কার হয়। যেমন-
অধিবাসী – অধিবাসিনী। তদ্রুপ- বন্দিনী, বিরহিনী , বিলাসিনী, মায়াবিনী, সহপাঠিনী, সাহসিনী, সহধর্মিনী, দুঃখিনী, আরোহিনী, স্বৈরিনী,
৫। বিদেশি শব্দে ই-কার ব্যবহার হবে। যেমন— আইসক্রিম, স্টিমার, জানুয়ারি, ফ্রেরুয়ারি, ডিগ্রি, চিফ, শিট, শিপ, নমিনি, কিডনি, ফ্রি, ফি, ফিস, স্কিন, স্ক্রিন, স্কলারশিপ, পার্টনারশিপ, ফ্রেন্ডশিপ, স্টেশনারি, নোটারি, লটারি, সেক্রেটারি, টেরিটরি, ক্যাটাগরি, ট্রেজারি, ব্রিজ, প্রাইমারি, মার্কশিট, গ্রেডশিট ইত্যাদি।
৬। অ-তৎসম অর্থাৎ তদ্ভব, দেশি, বিদেশি, মিশ্র শব্দে ই-কার ব্যবহার হবে। যেমন— সরকারি, তরকারি, গাড়ি, বাড়ি, দাড়ি, শাড়ি, চুরি, চাকরি, মাস্টারি, মালি, পাগলামি, পাগলি, বোমাবাজি, দাবি, হাতি, বেশি, খুশি, হিজরি, আরবি, ফারসি, ফরাসি, ইংরেজি, জাপানি, জার্মানি, ইরানি, হিন্দি, সিন্ধি, ফিরিঙ্গি, সিঙ্গি, ছুরি, টুপি, দিঘি, কেরামতি, রেশমি, পশমি, পাখি, ফরিয়াদি, আসামি, বেআইনি, কুমির, নানি, দাদি, বিবি, চাচি, মাসি, পিসি, দিদি, বুড়ি, নিচু।
এই শব্দগুলোর মধ্যে কিছু শব্দ আছে অপ্রাণিবাচক যেমনঃ বাড়ি, গাড়ি, শাড়ি, চাবি। ও কিছু আছে ইতরপ্রাণিবাচক যেমনঃ কুমির, পাখি, হাতি, চড়ুই, মুরগি।
৭। ত্ব, তা, নী, ণী, সভা, পরিষদ, জগৎ, বিদ্যা, তত্ত্ব শব্দের শেষে যোগ হলে ই-কার হবে। যেমন— দায়িত্ব (দায়ী), প্রতিদ্বন্দ্বিতা (প্রতিদ্বন্দ্বী), প্রার্থিতা (প্রার্থী), দুঃখিনী (দুঃখী), অধিকারিণী (অধিকারী), আদরিণী(আদরী), প্রতিহারিণী(প্রতিহারী = দারোয়ান) সহযোগিতা (সহযোগী), মন্ত্রিত্ব, মন্ত্রিসভা, মন্ত্রিপরিষদ (মন্ত্রী), প্রাণিবিদ্যা, প্রাণিতত্ত্ব, প্রাণিজগৎ, প্রাণিসম্পদ (প্রাণী) ইত্যাদি।
৮। ঈ, ঈয়, অনীয় প্রত্যয় যোগ ঈ-কার হবে। যেমন— জাতীয় (জাতি), দেশীয় (দেশি ), পানীয় (পানি), জলীয়, স্থানীয়, স্মরণীয়, বরণীয়, গোপনীয়, ভারতীয়, মাননীয়, বায়বীয়, প্রয়োজনীয়, পালনীয়, তুলনীয়, শোচনীয়, রাজকীয়, লক্ষণীয়, করণীয়।
৯। প্রমিত বানানে শব্দের শেষে ঈ-কার থাকলে –গণ যোগে ই-কার হয়। যেমন— সহকারী>সহকারিগণ, কর্মচারী>কর্মচারিগণ, কর্মী>কর্মিগণ, আবেদনকারী>আবেদনকারিগণ ইত্যাদি।
১০। ব্যক্তির ‘-কারী’-তে (আরী) ঈ-কার হবে। যেমন— সহকারী, আবেদনকারী, ছিনতাইকারী, পথচারী, কর্মচারী ইত্যাদি। ব্যক্তির ‘-কারী’ নয়, এমন শব্দে ই-কার হবে। যেমন— সরকারি, দরকারি ইত্যাদি।
১১। ইক প্রত্যয় যুক্ত হলে যদি শব্দের প্রথমে অ-কার থাকে তা পরিবর্তন হয়ে আ-কার হবে। যেমন— অঙ্গ>আঙ্গিক, বর্ষ>বার্ষিক, পরস্পর>পারস্পরিক, সংস্কৃত>সাংস্কৃতিক, অর্থ>আর্থিক, পরলোক>পারলৌকিক, প্রকৃত>প্রাকৃতিক, প্রসঙ্গ>প্রাসঙ্গিক, সংসার>সাংসারিক, সপ্তাহ>সাপ্তাহিক, সময়>সাময়িক, সংবাদ>সাংবাদিক, প্রদেশ>প্রাদেশিক, সম্প্রদায়>সাম্প্রদায়িক ইত্যাদি।
১২। দেশ, জাতি ও ভাষার নামে ‘ই’ হবে। দেশঃ গ্রিস, জার্মানি, চিন ইতালি। ব্যতিক্রমঃ মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, কেননা দ্বীপ ও শ্রী বানানে আগে থেকেই ‘ঈ’।
জাতিঃ বাঙালি, তুর্কি।
ভাষাঃ হিন্দি, আরবি, পারসি ইত্যাদি।
১৩। র-জাত বিসর্গের পরে আবার র থাকলে, বিসর্গটি লোপ পায় এবং পরের অংশে দীর্ঘ স্বর আসে। যেমন- নিঃ+রব=নীরব(নিরব নয়)
নিঃ+রোগ=নীরোগ।
নিঃ+রস=নীরস
চক্ষু+রোগ=চক্ষূরোগ(চক্ষুরোগ নয়)
১৪.
ক. ‘বেশি’ এবং ‘-বেশী’ ব্যবহার: ‘বহু’, ‘অনেক’ অর্থে ব্যবহার হবে ‘বেশি’। শব্দের শেষে যেমন— ছদ্মবেশী, প্রতিবেশী অর্থে ‘-বেশী’ ব্যবহার হবে।
খ. ‘তৈরি’ এবং ‘তৈরী’ক্রিয়া পদ হলে বানান হবে ‘তৈরি’ বিশেষণ হলে ‘তৈরী’ হবে।
দর্জি পোষাক তৈরি করে- ক্রিয়া হিসাবে।
দেশের তৈরী পোষাক- বিশেষণ হিসাবে।
গ. ভারি = খুব বেশী যেমন সে ভারি দুষ্টু, আমটি ভারি মিষ্টি
ভারী = ওজন। যেমন- এক মণ লোহা ভারী না এক মণ তুলা ভারী?