বঙ্গবন্ধু-১ উপগ্রহটি আমরা কী কী কাজে লাগাতে পারি
|প্রথম আলো, ১৪ মে ২০১৮
গোলাম রব্বানী: পরিবেশ-বিষয়ক গবেষক, যুক্তরাজ্যের ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণারত
ক) কম খরচে আরও বেশিসংখ্যক টেলিভিশন চ্যানেল দেখতে পারব। টেলিভিশন সেট ভালো থাকলে আরও ভালো মানের ভিডিও দেখতে পাব।
খ) বন্যা, ঝড়, জলোচ্ছ্বাসের গতিবিধি আরও আগাম আরও নিখুঁতভাবে জানতে পারব। উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, প্রস্তুতি নিতে পারায় গত পাঁচ বছরে ঘূর্ণিঝড়গুলো আগের মতো ক্ষতি করতে পারেনি। এই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও কমিয়ে আনা যাবে। দুর্যোগের সময়ও দুর্গমতম অঞ্চলে (যেমন: চরাঞ্চলে, মাছ ধরার ট্রলারে) মোবাইলের নেটওয়ার্ক থাকবে। বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করে দুর্যোগ-কবলিত মানুষ উদ্ধারকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবে এবং উদ্ধারকর্মীরা সহজে ভুক্তভোগীকে খুঁজে ত্রাণ পৌঁছে দিতে পারবে।
গ) ঝড়ের আগের ছবি, পরের ছবির বিস্তারিত তুলনা করে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও নিখুঁতভাবে নির্ণয় করা সম্ভব হবে। ঠিক কোন গ্রামে কী ধরনের সহায়তা দরকার, তা দ্রুত বিশ্লেষণ করে সে অনুযায়ী তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হবে।
ঘ) এখন একটা বাড়ি হেলে পড়লে চোখে দেখে বিচার করতে হয়। এই উপগ্রহের ছবির তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে সামান্য হেলে পড়ার ঘটনাও ধরে ফেলা সম্ভব হবে। ফলে দুর্ঘটনা এড়ানো সহজ হবে বা দুর্ঘটনার ওপর আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ আনা সম্ভব হবে।
ঙ) ভূ-প্রকৃতির সূক্ষ্ম পরিবর্তন যেমন: খাল-বিলে পানির উচ্চতা, নদীর নাব্যতার তথ্য আরও নিখুঁতভাবে পাওয়া যাবে। এসব তথ্য ব্যবহার করে বন্যার ব্যাপ্তি, সে অনুযায়ী প্রস্তুতি, বন্যা পরবর্তী সময়ে কোন জমি কবে নাগাদ ফসলের জন্য আবার উপযোগী হবে, তা নির্ধারণ করা সহজ ও বাস্তবসম্মত হবে।
চ) জলবায়ু পরিবর্তন বা মানুষের প্রভাবে পরিবেশের পরিবর্তন তথা বছরের পর বছর ধরে এলাকার বিল-খাল রাস্তাঘাট বসতভিটা গাছগাছালির কী পরিবর্তন হচ্ছে, তা উপগ্রহ থেকে পাওয়া ছবি বিশ্লেষণ করে সহজে বের করা যাবে। এই তথ্য ব্যবহার করে বাস্তবসম্মত পরবর্তী পরিকল্পনা গ্রহণ করা সম্ভব হবে।
ছ) রাস্তাঘাটের নিপুণ ডিজিটাল মানচিত্র করা সম্ভব হবে এবং সেই মানচিত্র মোবাইলে ব্যবহার করে যোগাযোগ দ্রুত এবং নিরাপদ করা সম্ভব হবে।
এ ছাড়া আরও অনেক উপকার এর থেকে পাওয়া যেতে পারে। এত দিন উপগ্রহের সেবা ব্যবহার শুধু মোবাইলে কথা বলা ও সামান্য ইন্টারনেটের ব্যবহারের ভেতরেই সীমাবদ্ধ ছিল। নিজেদের উপগ্রহ হওয়ায় একে দুর্যোগ-মোকাবিলা, যোগাযোগ ও কার্যকর গবেষণার অনেক কাজে ব্যবহার করা যাবে। বড় কথা উপগ্রহ এত দিন হাতে গোনা কিছু বিজ্ঞানী বা প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করতে পারত। এখন পদ্ধতি মেনে সাধারণ মানুষও উপগ্রহ থেকে তাৎক্ষণিক ছবি ও তথ্য পেতে পারবে। বঙ্গবন্ধু-১ উপগ্রহের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে একটা দক্ষ জনশক্তি দরকার। উপগ্রহের সেবা নেওয়ার জন্য যে জ্ঞানটা দরকার, সেটা তৈরি করা দরকার। যে চ্যালেঞ্জটা আজ থেকে আপনার-আমার কাঁধে এসে পড়ল।