ওষুধ রপ্তানি

প্রথম আলো সম্পাদকীয়, ০২ আগস্ট ২০১৮
নতুন সম্ভাবনার হাতছানি


বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের কথা উঠলে সাধারণ মানুষের মনের ক্যানভাসে প্রথমেই ভেসে ওঠে তৈরি পোশাকের কথা। তারপর হয়তো তারা চা কিংবা চামড়াজাত পণ্যের কথা ভাবে। কিন্তু ওষুধশিল্প নীরবে-নিভৃতে যে কত দূর এগিয়ে গেছে, তা সাধারণ মানুষের কাছে সর্বাংশে দৃশ্যমান হয়নি।

আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশের (অ্যামচেম) একটি অনুষ্ঠানে সম্প্রতি যে তথ্য দেওয়া হয়েছে, তা যে কারোর জন্যই আনন্দের। রপ্তানি পণ্য হিসেবে ওষুধ খাতের সম্ভাবনার ওপর আলোকপাত করতে গিয়ে সেখানে জানানো হয়েছে, দেশের চাহিদার ৯৭ শতাংশ মিটিয়ে বিশ্বের ১৪৪টি দেশে ওষুধ রপ্তানি হচ্ছে। ২০১৮ সালের মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশের ওষুধ খাতের আকার দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১০ কোটি ৩৪ লাখ মার্কিন ডলারের ওষুধ রপ্তানি হয়েছে। দেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ৮৬৮ কোটি টাকা।

ওষুধ উৎপাদন ও রপ্তানিতে সাফল্য থাকলেও এ খাতের কাঁচামাল সরবরাহের ব্যবস্থা এখনো দুর্বল। কাঁচামাল সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় উন্নতি করতে পারলে ওষুধশিল্প দ্বিতীয় বৃহৎ রপ্তানি পণ্য খাত হয়ে উঠতে পারবে। মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় কাঁচামাল উৎপাদনের জন্য প্রতিষ্ঠিত এপিআই শিল্প পার্ক স্থাপনের কাজ চলছে। এটি শেষ হলে দাম আরও কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

সারা দুনিয়ায় বাংলাদেশের ওষুধের চাহিদা দিন দিন বাড়ার প্রধান কারণ দাম বিশ্ববাজারের তুলনায় অনেক কম। ভারতীয় একটি দৈনিকের প্রতিবেদন বলছে, উন্নত বিশ্বে যে ওষুধের দাম গড়ে ৪২৫ ডলার, বাংলাদেশে এর দাম মাত্র ৩২ ডলার। মানও খারাপ নয়।

বাংলাদেশের ওষুধের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়াটা সহজ হয়নি। ইউরোপ-আমেরিকায় ওষুধের মতো স্পর্শকাতর পণ্য বাজারে যায় যথাযথ মান যাচাইয়ের পর। তাদের মান যাচাইয়ের প্রক্রিয়ার ওপর সবাই আস্থাশীল। সেই মান যাচাইয়ের পরীক্ষায় পাস করেই আমাদের ওষুধ বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে। আমেরিকায় ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা এফডিএর ছাড়পত্র পাওয়া দুরূহ, সময়সাপেক্ষ।

বাংলাদেশের ওষুধ তাদের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। গুণ প্রশ্নাতীত না হলে সেটা হতো না। আমাদের কাছে স্বস্তির বিষয় হলো, আমরা অন্যদের চেয়ে অনেক কম মূল্যে মানসম্মত ওষুধ সরবরাহ করতে পারছি।

ক্যানসারের ওষুধের সঙ্গে বাংলাদেশ তৈরি করছে হেপাটাইটিস সির ওষুধ। ৮৪ ডোজের চিকিৎসায় ১ ডোজের খরচ ১ হাজার ডলার। পুরো কোর্সে খরচ ৮৪ হাজার ডলার। বাংলাদেশে তৈরি এর ১ ডোজের দাম মাত্র ৮০০ টাকা।

কম মূল্যে মানসম্মত ওষুধ সরবরাহ করার কাজকে আরও বেগবান করতে এবং রপ্তানিতে সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে ওষুধকে ‘বর্ষ পণ্য’ হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার। সরকারের এ উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।

Add a Comment