ভূমিকম্প

পৃথিবীর কঠিন ভূত্বকের কোনো কোনো অংশ প্রাকৃতিক কোনো কারণে কখনো কখনো অল্প সময়ের জন্য হঠাৎ কেঁপে ওঠে। ভূত্বকের এরূপ আকস্মিক কম্পনকে ভূমিকম্প(Earthquake) বলে। ভূকম্পন সাধারণত কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী হয় আবার কখনো কিছু সময় পরপর অনুভূত হয়। এ কম্পন কখনো অত্যন্তমৃদু আবার কখনো অত্যন্তপ্রচণ্ড হয়।

ভূমিকম্পের কারণ: অনেক ধরনের ভূতাত্ত্বিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার সাহায্যে বিজ্ঞানীরা ভূমিকম্পের নিম্নলিখিত কারণগুলো নির্ণয় করেছেন।

১। ভূপাত: হঠাৎ কোনো কারণে পাহাড় বা পর্বত থেকে যদি বিশাল কোনো শিলাখণ্ড ভূত্বকের উপর ধসে পড়ে, তখন ভূমিকম্প হয়। যেমন- কোনো একটি বড় গাছ যখন কাটা হয় তখন গাছটি পড়ার সময় তার চতুর্দিকে অনেক দূর পর্যন্ত একটা কম্পন অনুভূত হয়। এই ভূপাতও ঠিক এই ধরনের। ১৯১১ সালে পামীর মালভূমিতে বিশাল ভূপাত হওয়ার ফলে তুরস্কে ভূমিকম্প হয়েছিল।

২। শিলাচ্যুতি বা শিলাতে ভাঁজের সৃষ্টি: কোনো কারণে ভূপৃষ্ঠের অভ্যন্তরে বড় ধরনের শিলাচ্যুতি ঘটলে বা শিলাতে ভাঁজের সৃষ্টি হলে ভূমিকম্প হয়। ১৯৩৫ সালে বিহারে এবং ১৯৫০ সালে আসামে এ কারণেই ভূমিকম্প হয়।

৩। তাপ বিকিরণ: ভূত্বক তাপ বিকিরণ করে সংকুচিত হলে ফাটল ও ভাঁজের সৃষ্টি হয়ে ভূমিকম্প হয়।

৪। ভূগর্ভস্থ বাষ্প: পৃথিবীর অভ্যন্ত রে অত্যধিক তাপের কারণে বাষ্পের সৃষ্টি হয়। এই বাষ্প ভূত্বকের নিম্নভাগে ধাক্কা দেওয়ার ফলে প্রচণ্ড ভূকম্পন অনুভূত হয়।

৫। ভূগর্ভস্থ চাপের বৃদ্ধি বা হ্রাস: অনেক সময় ভূগর্ভে হঠাৎ চাপের হ্রাস বা বৃদ্ধি হলে তার প্রভাবে ভূমিকম্প হয়।

৬। আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত: অগ্ন্যুৎপাতের সময় জ্বালামুখ দিয়ে প্রবলবেগে বাষ্প, লাভা প্রভৃতি বের হতে থাকে, ফলে ভূমিকম্প হয়।

৮। হিমবাহের প্রভাব: হঠাৎ করে হিমবাহ পর্বতগাত্র থেকে নিচে পতিত হলে ভূপৃষ্ঠ কেঁপে ওঠে এবং ভূমিকম্প হয়।

৯। পার্বত্য অঞ্চলের বনভূমি ধ্বংস ও পাহাড় কাটা: কোনো কারণে পাহাড় কাটা হলে ভূপৃষ্ঠের উপরের চাপ হ্রাস পায়। ফলে ভূত্বকের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে ভূমিকম্প হতে পারে।

ভূমিকম্পের ফলাফল

ভূমিকম্পের ফলে ভূপৃষ্ঠের অনেক ধরনের পরিবর্তন ঘটে এবং বহু ধ্বংসলীলা সাধিত হয়। ঘরবাড়ি, ধনসম্পদ ও যাতায়াত ব্যবস্থা বিনষ্ট হয়। এতে জীবনেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়ে থাকে। নিচে ভূমিকম্পের ফলাফল আলোচনা করা হলো-

(১) ভূমিকম্পের ফলে ভূত্বকের মধ্যে অসংখ্য ভাঁজ, ফাটল, চ্যুতি ও স্রস্ত উপত্যকার সৃষ্টি হয়।

(২) ভূমিকম্পের ফলে অনেক সময় সমুদ্রতল উপরে উত্থিত হয়, পাহাড়-পর্বত বা দ্বীপের সৃষ্টি করে। আবার কোথাও স্থলভাগের অনেক স্থান সমুদ্রতলে ডুবে যায়। এ ভূমিকম্পের ফলেই কিন্তু সমুদ্রগর্ভ থেকে হিমালয় পর্বত উত্থিত হয়েছে। ১৮৯৯ সালে ভারতের কচ্ছ উপসাগরের উপকূলে প্রায় ৫,০০০ বর্গকিলোমিটার স্থান সমুদ্রগর্ভে নিমজ্জিত হয়।

(৩) ভূমিকম্পের ফলে অনেক সময় নদীর গতি পরিবর্তিত হয় বা কখনো কখনো বন্ধ হয়ে যায়। কখনো কখনো নদী শুকিয়ে যায়। আবার সময় সময় উচ্চভূমি অবনমিত হয়ে জলাশয়ের সৃষ্টি হয়। ১৯৫০ সালে আসামের ভূমিকম্পে দিবং নদীর গতি পরিবর্তিত হয়।

(৪) ভূমিকম্পের ফলে অনেক সময় পর্বতগাত্র থেকে হিমানীসম্প্রপাত হয় এবং পর্বতের উপর শিলাপাত হয়।

(৫) ভূমিকম্পের ফলে হঠাৎ করে সমুদ্র উপকূল সংলগ্ন এলাকা জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়।


👉 Read More...👇

Add a Comment