বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস ও বৈশিষ্ট্য
|বায়ুমণ্ডল যে সমস্ত উপাদানে গঠিত তাদের প্রকৃতি, বৈশিষ্ট্য ও উষ্ণতার পার্থক্য অনুসারে ভূপৃষ্ঠ থেকে উপরের দিকে পর্যায়ক্রমে ছয়টি স্তরে ভাগ করা হয়। যথা-
ট্রপোমণ্ডল(Troposphere),
- স্ট্রাটোমণ্ডল(Stratosphere),
- মেসোমণ্ডল(Mesosphere),
- তাপমণ্ডল(Thermosphere),
- এক্সোমণ্ডল(Exosphere) ও
- চৌম্বকমণ্ডল(Magnetosphere)
উল্লিখিত স্তরগুলোর প্রথম তিনটি সমমণ্ডল (Homosphere) এবং পরবর্তী তিনটি বিষমমণ্ডল (Hetrosphere)-এর অন্ত র্ভুক্ত।
- ট্রপোমণ্ডল না হলে, আবহাওয়ার সৃষ্টি হত না। এ মণ্ডলের কারণেই মেঘ, বৃষ্টি, কুয়াশা, শিশির, তুষার, শিলাবৃষ্টি, ইত্যাদি ঘটে, বরফ জমে, বজ্রপাত ঘটে,।
- স্ট্রাটোমণ্ডলের ওজোন স্তর সূর্য থেকে আগত ক্ষতিকারক অতি বেগুনি রশ্মি শোষণ করে নেয়। ঝড়-বৃষ্টি থাকে না বলেই এই স্তরের মধ্য দিয়ে সাধারণত জেট বিমানগুলো চলাচল করে।
- মহাকাশ থেকে যেসব উল্কা পৃথিবীর দিকে ছুটে আসে সেগুলোর অধিকাংশই মেসোমণ্ডলে এসে পুড়ে যায়।
- আয়নমণ্ডল ছাড়া কোন তরঙ্গ স্থানান্তরিক হত না। কেননা এখানেই তরঙ্গ বাধা পেয়ে প্রতিফলিত হয়ে ফিরে আসে।
ট্রপোমণ্ডল (Troposphere)
এই স্তরটি বায়ুমণ্ডলের সবচেয়ে নিচের স্তর। মেঘ, বৃষ্টিপাত, বজ্রপাত, বায়ুপ্রবাহ, ঝড়, তুষারপাত, শিশির, কুয়াশা সবকিছুই এই স্তরে সৃষ্টি হয়। ট্রপোমণ্ডলের শেষ প্রান্তে র অংশের নাম ট্রপোবিরতি (Tropopause)। এই স্তর ভূপৃষ্ঠ থেকে নিরক্ষীয় অঞ্চলে প্রায় ১৬-১৮ কিলোমিটার এবং মেরু অঞ্চলে প্রায় ৮-৯ কিলোমিটার পর্যন্তবিস্তৃত।
ট্রপোমণ্ডলের বৈশিষ্ট্য
(ক) ভূপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বায়ুর ঘনত্ব কমতে থাকে, সঙ্গে সঙ্গে কমতে থাকে উষ্ণতা। সাধারণভাবে প্রতি ১,০০০ মিটার উচ্চতায় ৬০ সেলসিয়াস তাপমাত্রা হ্রাস পায়।
(খ) উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে বাতাসের গতিবেগ বেড়ে যায়।
(গ) নিচের দিকের বাতাসে জলীয়বাষ্প বেশি থাকে।
(ঘ) ধূলিকণার অবস্থানের ফলে সমগ্র বায়ুমণ্ডলের ওজনের প্রায় শতকরা ৭৫ ভাগ এই স্তর বহন করে।
(ঙ) আবহাওয়া ও জলবায়ুজনিত যাবতীয় প্রক্রিয়ার বেশিরভাগ এই স্তরে ঘটে থাকে।
স্ট্রাটোমণ্ডল (Stratosphere)
ট্রপোপজের উপরের দিকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত স্ট্রাটোমণ্ডল নামে পরিচিত। স্ট্রাটোমণ্ডল ও মেসোমণ্ডলের মধ্যবর্তী অঞ্চলে তাপমাত্রার স্থিতাবস্থাকে স্ট্রাটোবিরতি (Stratopuse) বলে।
স্ট্রাটোমণ্ডলের বৈশিষ্ট্য
(ক) এই স্তরের বায়ুতে অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণা ছাড়া কোনোরকম জলীয়বাষ্প থাকে না। ফলে আবহাওয়া থাকে শান্ত ও শুষ্ক। ঝড়-বৃষ্টি থাকে না বলেই এই স্তরের মধ্য দিয়ে সাধারণত জেট বিমানগুলো চলাচল করে।
(খ) এই স্তরেই ওজোন (O3) গ্যাসের স্তর বেশি পরিমাণে আছে। এ ওজোন স্তর সূর্যের আলোর বেশিরভাগ অতিবেগুনি রশ্মি (Ultraviolet Rays) শুষে নেয়।
মেসোমণ্ডল (Mesosphere)
স্ট্রাটোবিরতির উপরে প্রায় ৮০ কিলোমিটার পর্যন্তবিস্তৃত বায়ুস্তরকে মেসোমণ্ডল বলে। এই স্তরের উপরে তাপমাত্রা হ্রাস পাওয়া থেমে যায়। এই স্তরকে মেসোপজ (Mesopause) বলে।
মেসোমণ্ডলের বৈশিষ্ট্য
(ক) এই স্তরে ট্রপোমণ্ডলের মতোই উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা কমতে থাকে।
(খ) মহাকাশ থেকে যেসব উল্কা পৃথিবীর দিকে ছুটে আসে সেগুলোর অধিকাংশই এই স্তরের মধ্যে এসে পুড়ে যায়।
তাপমণ্ডল (Thermosphere)
মেসোপজের উপরে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার পর্যন্তবিস্তৃত বায়ুস্তরকে তাপমণ্ডল বলে। এই মণ্ডলে বায়ুস্তর অত্যন্ত হালকা ও চাপ ক্ষীণ। তাপমণ্ডলের নিম্ন অংশকে আয়নমণ্ডল (Inosphere) বলে।
তাপমণ্ডলের বৈশিষ্ট্য
(ক) এই অংশে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা অত্যন্তদ্রুত হারে বাড়তে থাকে।
(খ) তাপমণ্ডলের উপরের স্তরে তাপমাত্রার পরিমাণ প্রায় স্থির থাকে।
(গ) তীব্র সৌর বিকিরণে রঞ্জন রশ্মি ও অতিবেগুনি রশ্মির সংঘাতে এই অংশের বায়ু আয়নযুক্ত হয়।
(ঘ) ভূপৃষ্ঠ থেকে পাঠানো বিভিন্ন বেতারতরঙ্গ আয়নমণ্ডলের বিভিন্ন আয়নে বাধা পেয়ে পুনরায় ভূপৃষ্ঠে ফিরে আসে।
এক্সোমণ্ডল (Exosphere)
তাপমণ্ডলের উপরে প্রায় ৭৫০ কিলোমিটার পর্যন্তযে বায়ুস্তর আছে তাকে এক্সোমণ্ডল বলে। এই স্তরে হিলিয়াম ও হাইড্রোজেন গ্যাসের প্রাধান্য দেখা যায়।
চৌম্বকমণ্ডল (Magnetosphere)
এক্সোমণ্ডলের উপরে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল বেষ্টনকারী একটি চৌম্বকক্ষেত্র, যার নাম চৌম্বকমণ্ডল। এই স্তরে বায়ুমণ্ডলকে বেষ্টন করে প্রোটন ও ইলেকট্রনের চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের সৃষ্টি হয়।
👉 Read More...👇