বাংলাদেশের বনাঞ্চল
|তথ্যকণিকা
1. বনাঞ্চলকে- ৫ ভাগে ভাগ করা যায়, প্রকৃতি অনুসারে ৩ ভাগে।
2. সামাজিক বনায়ন কর্মসূচী- ১৯৭৯ সালে
3. জাতীয় বননীতি- ১৯৯৪ সালে
4. বন আইন – ১৯৯২ ও ২০০২ সালে
5. রাষ্ট্রীয় বন নেই- ২৮টি জেলায়
6. দীর্ঘতম বৃক্ষ- বৈলাম বৃক্ষ(বান্দরবানে জন্মে)
7. বন গবেষণা কেন্দ্র- চট্টগ্রামে
8. হরিণ প্রজনন কেন্দ্র- কক্সবাজারের ডুলাহাজরায়
9. শাল গাছের জন্য বিখ্যাত- ভাওয়াল ও মধুপুরের বন
10. বরেন্দ্রভূমি- রাজশাহীতে
প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় একটি দেশের মোট আয়তনের তুলনায় বনভূমির পরিমাণ শতকরা ২৫ ভাগ হওয়া অপরিহার্য। কিন্তু আমাদের দেশে বনভূমির পরিমান প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। সরকারি হিসাব মতে বর্তমানে আমাদের দেশের বনভূমির পরিমাণ মাত্র ১৭ ভাগ। ইউনেস্কোর মতে বর্তমানে আমাদের দেশের বনভূমির পরিমাণ শুধুমাত্র ১০ ভাগ। সরকারি হিসাব মতে বর্তমানে বাংলাদেশের মোট বনভূমির আয়তন প্রায় ২২.৫ লক্ষ হেক্টর। বনভূমির এ পরিমাণ দেশের মোট ভূমির শতকরা ১৭ ভাগ। এই বন সারাদেশে সমানভাবে বিস্তৃত নয়। অধিকাংশ বনভূমি দেশের পূর্ব, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত। দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বনভূমির পরিমাণ খুবই কম।
বাংলাদেশের বনভূমি থেকে প্রাপ্ত সম্পদগুলো হলো- কাঠ, জ্বালানি, বাঁশ, বেত, মধু, মোম, ঘাস ইত্যাদি।
বনভূমির অবস্থান ও বিস্তৃতি অনুসারে বাংলাদেশের বনাঞ্চলকে প্রধানত পাঁচভাগে ভাগ করা হয়েছে। এভাগগুলো হলো-
১। পাহাড়ি বন ২। সমতলভূমির বন ৩। ম্যানগ্রোভ বন ৪। সামাজিক বন ৫। কৃষি বন
পাহাড়ি বন আমাদের দেশের পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে পাহাড়ি বন অবস্থিত। বাংলাদেশের বন এলাকার অর্ধেকেরও বেশি এলাকা জুড়ে রয়েছে পাহাড়ি বন। কক্সবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবন, সিলেট, হবিগঞ্জ ও মৌলভী বাজার এবন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
সমতলভূমির বন বৃহত্তর ঢাকা, টাঙ্গাইল, রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী ও কুমিল্লা অঞ্চলের বনকে সমতল ভূমির বন বলে। এ বনের প্রধান প্রধান বৃক্ষ শাল ও গজারি, এছাড়া কড়ই, রেইনট্রি, জারুল ইত্যাদি বৃক্ষও এ বনে জন্মে থাকে।
ম্যানগ্রোভ বন বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে এ বন অবস্থিত। প্রত্যহ সামুদ্রিক জোয়ারের পানিতে এ বন প্লাবিত হয় বলে একে লোনা পানির বনও বলা হয়। খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলার দক্ষিণের বিস্তৃত এলাকা ম্যানগ্রোভ বলে পরিচিত। এ বনের প্রধান বৃক্ষ সুন্দরি। সুন্দরি বৃক্ষের নামানুসারে এ বনের নামকরণ করা হয়েছে সুন্দর বন। এ বনের অধিকাংশ উদ্ভিদের উর্ধ্বমুখী বায়বীয় মূল রয়েছে। যার সাহায্যে এরা শ্বসন ক্রিয়ার জন্য অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে। কারণ জলাবদ্ধ মাটি থেকে সাধারণ মূলের পক্ষে অক্সিজেন গ্রহণ সম্ভব নয়। এ বনের গুরুত্বপূর্ণ বৃক্ষ হলো- গেওয়া, গরান, পশুর, কেওয়া, বাইন, কাকড়া, গোলপাতা ও মোটা বেত। নিপা পাম নামে একধরনের বৃক্ষ আছে যা শুধু ম্যানগ্রোভ পরিবেশে জন্মে থাকে। বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার এ বনে বাস করে। চিতাবাঘ, হরিণ, বানর, অজগর, বিচিত্র রকমের পাখি ও কীট-পতঙ্গ এ বনে বাস করে। সুন্দর বনের নদী ও খালে কুমির ও অন্যান্য জলজ প্রাণী বাস করে। প্রতি বছর সুন্দরবন থেকে প্রচুর মধু ও মোম পাওয়া যায়। সুন্দর বন বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী বন। পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা বড় ও সম্পদশালী ম্যানগ্রোভ বন হলো সুন্দরবন। এবনের মোট আয়তন ৬০০০ বর্গ কিলোমিটার। ম্যানগ্রোভ বন সম্পর্কে আরও জানতে–
বাংলাদেশের ৩টি জায়গায় এই বনভূমি রয়েছে। ১। চকোরিয়া ২। টেকনাফ ৩। খুলনার সুন্দরবন।
সামাজিক বন সামাজিক বনায়ন ব্যবস্থাপনায় জনসাধারণ সরাসরি সম্পৃক্ত থাকে। জনগণের স্বতঃফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে সামাজিক কল্যাণে যে বনায়ন কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়, তাকেই সামাজিক বনায়ন বলা হয়। বাংলাদেশের বন বিভাগ এরই মধ্যে উপকূলীয় চরাঞ্চলসমূহে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সৃষ্টির প্রয়াস গ্রহণ করেছেন। এছাড়া বাংলাদেশ সরকার জন্মলগ্ন থেকেই সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। এতে জনসাধারণ সরাসরি অংশগ্রহণ করছে এবং উপকৃত হচ্ছে। বর্তমানে দেশের প্রায় সকল সড়ক, মহাসড়ক ও রেল লাইনের পাশে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি প্রবর্তন করা হয়েছে। বৃক্ষ রোপণ ও সংরক্ষণের ব্যাপারে সমবায় ভিত্তিক কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রধানতঃ উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমিতে সামাজিক বন প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে।
কৃষি বনায়ন কৃষি বনায়ন হলো কোন জমি থেকে একই সময়ে বা পর্যায়ক্রমিকভাবে বিভিন্ন গাছ, ফসল ও পশুপাখি উৎপাদন ব্যবস্থা। সাধারণভাবে কৃষি বনায়ন হচ্ছে এক ধরনের সমন্বিত ভূমি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি। এতে কৃষি ফসল, পশু, মৎস্য এবং অন্যান্য কৃষি ব্যবস্থা সহযোগে বহু বর্ষজীবী কাষ্ঠল উদ্ভিদ জন্মানোর ব্যবস্থা করা হয়।
গ্রামীণবন: বাংলাদেশে প্রায় ২ লক্ষ ৭০ হাজার হেক্টর জমিতে গ্রামীণ বন রয়েছে, মানুষ বসতভিটা, পুকুর, নদী ও অন্যান্য জলাশয়ের পাশে এসব বন গড়ে তোলে।
প্রকৃতি অনুসারেঃ এছাড়া বনের প্রকৃতি অনুসারে বনকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।
১. ক্রান্তীয় পতনশীল পত্রযুক্ত বনভূমিঃ ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল ও গাজীপুর জেলার মধুপুর ও ভাওয়ালগড় এলাকায় অবস্থিত।
২. ক্রান্তীয় চিরহরৎঃ বাংলাদেশের দক্ষিন-পূর্ব ও উত্তর পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত পাহাড়িয়া এলাকায় অবস্থিত।
৩. স্রোতজ বনভূমিঃ বাংলাদেশের দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত লবণাক্ত ভূমির বন।